সিউল, ১৭ অক্টোবর ২০১৩:
বাংলাদেশে বিদেশীদের মধ্যে এককভাবে এখন কোরিয়ানদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। কোরিয়ানরা বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য একটি আদর্শ দেশ হিসেবে বেছে নিয়েছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি কোরিয়ান বিনিয়োগ আরো বাড়ানোর জন্য। আজ বাংলা টেলিগ্রাফকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি আজ দুইদিনের এক সংক্ষিপ্ত সফরে কোরিয়া এসেছেন। আজ বিকেলে “সিউল কনফারেন্স অন সাইবার স্পেস” এ যোগ দিয়েছেন। সংক্ষিপ্ত এই সফরে আজ বাংলা টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাতকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল। বাংলা টেলিগ্রাফের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সম্পাদক সরওয়ার কামাল।
বাংলা টেলিগ্রাফঃ বাংলাদেশ থেকে কোরিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ কি নেওয়া হবে?
দিপু মনিঃ বাংলাদেশ থেকে ইতিমধ্যে কোরিয়ায় অনেক বাংলাদেশী কর্মীরা এসেছে এবং এখনো আসছে। আমরা জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য সবসময় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কোরিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে আগে কিছু সমস্যা ছিল। সেগুলো এখন ধীরে ধীরে কমছে। আগে কোরিয়াতে অবৈধভাবে অনেক বাংলাদেশী এসেছে। এখন আর সেই উপায় নেই। কোরিয়াতে সবকিছুই নিয়মতান্ত্রিক। নিয়মের বাইরে তারা কিছু করেনা। কোরিয়াতে বাংলাদেশীদের ব্যাপারে যেসব অভিযোগ আছে সেগুলো চলে গেলে জনশক্তি রপ্তানি অনেক বাড়বে।
বাংলা টেলিগ্রাফঃ কোরিয়া আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল ও শ্রীলংকা থেকে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি জনশক্তি নিচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি জনশক্তি নেওয়ার জন্য এই সফরে আপনাদের কোন বিশেষ উদ্দেশ্য আছে কিনা?
দিপু মনিঃ কোরিয়ান সরকারের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা হবে। এই সফরে কোরিয়ার বিনিয়োগ এবং জনশক্তি রপ্তানি অন্যতম ইস্যু। জনশক্তি রপ্তানি আমাদের সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এখন শুধু কোরিয়ায় নয়, মালয়েশিয়া, সৌদিআরব সহ অনেক দেশেই জনশক্তি রপ্তানির দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। মালয়েশিয়াতে বৈধভাবে সরকারীভাবে খুব কম খরচে প্রচুর কর্মী পাঠাচ্ছি। সৌদিআরবে কয়েক লাখ বাংলাদেশী বৈধ হয়েছে এবং আবারো জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ সৃষ্ঠি হয়েছে।
বাংলা টেলিগ্রাফঃ কোরিয়ান কোম্পানীগুলো এখন ভিয়েতনাম, মায়ানমারসহ কয়েকটি দেশে প্রচুর বিনিয়োগ করছে। সেই হারে বাংলাদেশে বিনিয়োগ যাচ্ছে না কেন? সরকারের কোন উদ্যোগ আছে কিনা?
দিপু মনিঃ বাংলাদেশে এখন অনেক কোরিয়ান বিনিয়োগ হচ্ছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্ভাবনা প্রচুর সেটা কোরিয়ানরা শুধু নয়, সারাবিশ্বের সবাই জানে। ইতিমধ্যে কোরিয়ান ইপিজেডসহ বাংলাদেশের অনেক সেক্টরে কোরিয়ানরা বিনিয়োগ করছে। ইপিজেডের কথাই ধরুন। বিদেশীদের মধ্যে একমাত্র কোরিয়ানদের জন্যই ইপিজেড করা হয়েছে। সেখানে অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কেইপিজেডের এখনো ১০ শতাংশ জায়গা কোরিয়ান কোম্পানীগুলো ব্যবহার করতে পেরেছে। সেখানে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য তাদেরকে আমরা আহবান করেছি। সম্প্রতি অনেক কোরিয়ান কোম্পানী সেখানে বিনিয়োগ করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
বাংলা টেলিগ্রাফঃ কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে বিশেষ কোন সুবিধা বা অন এরাইভাল ভিসা সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে যদি কিছু বলতেন…
দিপু মনিঃ অন এরাইভাল ভিসার সুবিধাটা আসলে পুরো বিশ্বেই পারস্পরিক আদানপ্রদানের বিষয়। উভয়দেশ এই সুবিধা দিতে সম্মত হলেই এটা করা যায়। আমরা কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের সবসময় স্বাগত জানাই। কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের জন্য কোন ভিসা সমস্যা নাই। আমাদের দূতাবাস কোরিয়ান বিনিয়োগকারীরা যাতে সহজেই সব ধরণের সহযোগিতা পায় সে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর বাংলাদেশে দেখবেন এখন অনেক কোরিয়ান রেস্টুরেন্ট যেখানে কোরিয়ান খাবার পাওয়া যাচ্ছে। কোরিয়ান খাবার খিমছিও পাওয়া যায়। প্রচুর কোরিয়ান এখন বাংলাদেশে ব্যবসা করছে, বসবাস করছে।
বাংলা টেলিগ্রাফঃ বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশ হিসেবে কোরিয়াকে কিভাবে দেখছেন এবং বিশেষ কোন অর্থনৈতিক সম্পর্কের দিকে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে কিনা?
দিপু মনিঃ কোরিয়া এখন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। কইকা বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যার বেশিরভাগই উন্নয়নমূলক প্রকল্প। তাছাড়া আমাদের সরকার কোরিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে নিয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কোরিয়া সফরের কথাই ধরুন। পাঁচ বছরের সংক্ষিপ্ত সময়ে একজন প্রধানমন্ত্রী খুব বেশি দেশে সফর করার সময় পান না। কোরিয়াকে আমাদের সরকার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে নিয়েছে বলেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোরিয়া সফর করেছেন।
বাংলা টেলিগ্রাফঃ কোরিয়ায় বাংলাদেশী প্রবাসীদের উদ্দ্যেশে যদি কিছু বলতেন…
দিপু মনিঃ দেখুন, কোরিয়ায় আগে অনেক বাংলাদেশী অবৈধভাবে এসেছে। এখন আর অবৈধভাবে আসছে না। ভবিষ্যতে কোনভাবে অবৈধ উপায়ে জনশক্তি পাঠানো হবে না। এখন যারা আসছে তারা সুনামের সাথে কাজ করলে একটা বড় কমিউনিটি গড়ে উঠবে। আর কোরিয়ায় প্রবাসী ভাইবোনরাই পারেন কোরিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোর কাজে সাহায্য করতে। কোরিয়াতে যদি অবৈধভাবে না থাকে তবে জনশক্তি রপ্তানি এমনিতেই বাড়বে। কোরিয়ার সরকার সবসময় অভিযোগ করে আমাদের কর্মীরা চাকরি পরিবর্তন করে। আমাদের দেশের কর্মীরা যদি এই ধরণের খারাপ দিকগুলো পরিহার করেন তাহলে বাংলাদেশ সম্পর্কে কোরিয়ানদের আরো ইতিবাচক ধারণা হবে। আমাদের মিশনগুলো এখন অবৈধ না হওয়ার জন্য সচেতনতা বাড়াতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
বাংলা টেলিগ্রাফঃ আপনাকে সময় দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
দিপু মনিঃ আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।