সৌদি আরবের আবহা প্রদেশের মাহাইল এলাকায় মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় পাভেল চন্দ্র বিশ্বাস পাপ্পু (২৪) নামে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের এক যুবক নিহত হয়েছেন। পাভেল সৌদী আরবের ওই এলাকায় কাঠের আসবাব (কাঠমিস্ত্রি) তৈরির শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
গত শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টার দিকে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে রাস্তা পারাপারের সময় একটি প্রাইভেটকার তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় পাভেল।
তার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই স্বজনদের মাঝে চলছে আহাজারি। সরকারী উদ্যোগে পাপ্পুর মরদেহ দেশে আনার দাবি জানান স্বজনরা। এইজন্য তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় সাংসদ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা চান তারা।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ভৈরব পৌর শহরের রামশংকরপুর এলাকার কৃষ্ণ কান্তি বিশ্বাসের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে পাভেল বিশ্বাস পাপ্পু দ্বিতীয়। অভাব অনটনের সংসারে বাকি ভাই-বোনেরা পড়াশোনা করলেও সে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর বাবার সঙ্গে উপার্জনে নেমে পড়ে পাভেল। বাবা কৃষ্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে কাঠমিস্ত্রির কাজ করতো সে।
অস্বচ্ছল পরিবারের ভার বহন করবে পাভেল, এই স্বপ্নে সাড়ে ৭ লাখ টাকা ঋণ করে তাকে সৌদি পাঠায় পরিবারের সদস্যরা। ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ইতোমধ্যে বাড়িতে পাঠায় পাভেল। অন্যের ঋণ শোধ হয়ে গেলেই সংসারে ফিরবে সুখ-এই স্বপ্নে যখন বিভোর সবাই, তখনই আকাশ ভেঙ্গে পড়ার চেয়েও ভয়ংকর খবরটি গত শনিবার দিবাগত ভোররাতে পরিবারের কাছে আসে।
পাভেলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রিয় সন্তানের মৃত্যু খবর শোনার পর থেকে মা অর্চনা আর বাবা কৃষ্ণ বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। জ্ঞান ফেরার পর আবারও বুক ফাটা আর্তনাদ। মুখে একই বুলি, তারা তাদের প্রিয় সন্তানের মুখ দেখতে চান শেষবারের মতো। ঘরের বারান্দায় লুটিয়ে পড়ে তাদের এই বিলাপ পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলা পথচারীদেরকেও থমকে দাঁড়াতে বাধ্য করছে।
ঘরের এককোণে গড়িয়ে বিলাপ করে ভৈরব সরকারী জিল্লর কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ুয়া পাভেলের ছোটবোন মণিষা রানী বিশ্বাস। মণিষা তার ভাইকে একবার দেখতে চায়।
বসতঘরের মুখোমুখি অপর একটি ছোট্টঘরে বসে অঝোরে কেঁদেই চলেছেন পঁচাত্তর উর্ধ্ব এক বৃদ্ধা। তিনি নিহত পাপ্পুর দাদী পরশমণি বিশ্বাস। কাছে গিয়ে জানতে চাইলেই তিনি বলেন-তোমরা আমার বুকের মানিককে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও। আমি আর কিছু চাই না। মরণের আগে আমার মানিককে আমার বুকে নিয়ে মরতে চাই।
বড় ভাই রুবেল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, তিনি বড় সন্তান হলেও, পাভেলই ছিলো সংসারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আর এইজন্যই পরিবার ওর উপর নির্ভর করে এত টাকা ঋণ নিয়েছিল। এখন পুরোটাই দেনা হয়ে গেলো। তিনি বলেন-টাকার ঋণও হয়তো একদিন কোনোভাবে শোধ হবে কিন্তু হারিয়ে যাওয়া ভাইটি তো আর ফিরে আসবে না।
তিনি আরও জানান, পাগলপ্রায় মা, বাবা, বোন আর বৃদ্ধ দাদীকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে পাভেলের লাশ ফিরিয়ে আনতেই হবে। তারা শেষবারের মতো ওর মুখ দেখে শেষকৃত্য করতে চান। এইজন্য তিনি সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাসসহ সরকারের সহায়তা চান।
পাভেল বিশ্বাসের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রতিবেশী পরিমল বিশ্বাস, অন্তও ও শিখা রাণীও সরকারে প্রতি দাবি জানান, পাভেলের মরদেহটি যেনো সরকারী উদ্যোগে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে আনা হয়।
সূত্র: অর্থসূচক