Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল তার বিরুদ্ধে হওয়া মানহানি মামলার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন নৌ-মন্ত্রী শাজাহান খানের বিরুদ্ধে বা তার সম্পর্কে কোনো রকম স্ট্যাটাস তিনি দেননি। তার নামে কিছু ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে সেখান থেকে এটা দেয়া হতে পারে। তার নিজের যে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে সেখানে তিনি বেশ কয়েকবার নাম ও ছবি ব্যবহার করে যেসব ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে তা সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করেছেন। এসব ভুয়া একাউন্টে প্রকাশিত কোনো কিছুর সঙ্গে তার কোনোরকম সম্পর্ক নেই। গতকাল বুধবার এবং গত ২৬শে জুনও এই সতর্কতামূলক স্ট্যাটাস ফেসবুক আইডি ও নিজের পরিচালিত একমাত্র ফ্যানপেজটিতে দেয়ার তথ্য জানিয়েছেন।

chardike-ad

তিনি বলেন, ভেবে অবাক হচ্ছি যে, আমার ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টটা উনাদের চোখে পড়লো আর আমার আসল ফেসবুক ও আমার ফ্যানপেইজ যেখানে সদস্য সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ সেখানে বহুবার ভুয়া অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে লেখা হয়েছে সেটা তাদের চোখে পড়লো না কেন? আরেকটা বিষয় হচ্ছে শাজাহান খানের ঐ সংবাদটা নিয়ে বহু মানুষ সংসদে এবং অনেক নামকরা মানুষ ফেসবুকে আজেবাজে কমেন্ট করেছে। এমন কি অনেকে নানা ধরনের অসত্য কমেন্ট করেছে উনার সম্পর্কে। আমার সবচেয়ে অবাক লাগছে কোনো কিছুতে উনার মানহানি হলো না। শুধু আমার ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টের স্ট্যাটাসে উনার মানহানি হয়ে গেল?

তিনি বলেন, আমি হতবাক! এতো মিথ্যে তথ্যের ভিত্তিতে একজন মন্ত্রীর পক্ষে মানহানির মামলা করা যেতে পারে? দেশে যারা ক্ষমতাবান আছে তারা অন্যদের বিরুদ্ধে কি ভয়ঙ্কর ভাবে আইন ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করার চিন্তা করতে পারেন এই ঘটনা এর একটি বড় প্রমাণ।

তিনি বলেন, আমি এই মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ করছি এবং মন্ত্রী শাজাহান খানকে আহ্বান জানাচ্ছি উনি তো ক্ষমতায় আছেন। উনি রাষ্ট্রের গোয়েন্দা কাজে লাগিয়ে খুঁজে বের করুন যে অ্যাকাউন্ট থেকে স্ট্যাটাসটা দেয়া হয়েছে সেটি আমি দিয়েছি নাকি। যদি আমি দিয়ে থাকি তাহলে আমার বিরুদ্ধে কোটি কোটি মামলা করুন, আমার এতে আপত্তি নেই। আর আমি যদি না দিয়ে থাকি তাহলে আমার বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে এবং টেলিভিশনে আমার সম্পর্কে শাজাহান খান যেসব কথা বলেছেন আমি আশা করবো সেজন্য উনি দুঃখ প্রকাশ করবেন।

চট্টগ্রাম বন্দরে লস্কর  নিয়োগ নিয়ে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে ২টি মামলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে মাদারীপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মানহানির মামলা ২টি করেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর চাচাতো ভাই ও মাদারীপুর জেলা পরিষদের সদস্য ফারুক খান।

এছাড়াও মন্ত্রীর ভাগ্নে সৈয়দ আসাদ উজ্জামান মিনার আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মাদারীপুর সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আদেশের জন্য পাঠানো হয়েছে। মামলা দায়েরের বিষয়ে ড. আসিফ নজরুল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, যে ফেসবুক আইডির স্ট্যাটাস আমলে নিয়ে মামলা হয়েছে তা তার নয়। তার নামে এটি ভুয়া আইডি। তিনি এ ধরনের কোনো স্ট্যাটাস দেননি। ভুয়া একটি আইডির স্ট্যাটাস নিয়ে এভাবে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সমালোচনায় মুখর হয়েছে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী। গতকাল ফেসবুকেই প্রকাশ করেন আসিফ নজরুল। এরপরই মামলা নিয়ে অন্য ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নৌ-মন্ত্রী ও তার অনুসারীদের নিয়ে নেতিবাচক মতামত প্রকাশ করেন।

মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট ওবায়দুর রহমান খান জানান, ড. আসিফ নজরুল তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়োগ পরীক্ষায় ৯২ জন উত্তীর্ণ হয়েছে, যার মধ্যে ৯০ জন নৌ-পরিবহনমন্ত্রীর এলাকা মাদারীপুরের বাসিন্দা। অথচ উনি চাইলে ৯২ জনই উনার এলাকার লোক হতে পারতো। ২ জন ভিন্ন এলাকার লোক নিয়োগ দিয়ে উনি সততার যে দৃষ্টান্ত দেখালেন তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’ এতে নৌ-মন্ত্রীর সম্মানহানি হয়েছে উল্লেখ করে ফারুক খান তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মাদারীপুর চিফ জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন মামলাটি গ্রহণ করে সমন জারি করেছেন।

এর আগে, এ ঘটনায় আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দায়েরের জন্য গত মঙ্গলবার নৌ-মন্ত্রীর ভাগ্নে সৈয়দ আসাদ উজ্জামান মিনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করলে আদালত মামলাটি গ্রহণ করেননি। পরে বৃহস্পতিবার আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে মাদারীপুর সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আদেশের জন্য পাঠানো হয়েছে। মাদারীপুর সদর থানার ওসি মো. কামরুল হাসান জানান, তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সেই অভিযোগটি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে পাঠানো হয়েছে পরবর্তী আদেশের জন্য।
এদিকে বন্দরে নিয়োগের ঘটনা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার প্রেক্ষিতে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সংসদকে জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে লস্কর পদে ৯২ জন নয় চাকরি দেয়া হয়েছে ৮৫ জনকে। চাকরির বিধান অনুযায়ী এবং কোটা অনুসরণ করে চাকরি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ২৯ জনকে চাকরি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ২৩ জন, কক্সবাজারের ৪ জন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ২ জন। এছাড়া নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ চাকরি পেয়েছেন। যদি জেলা কোটার কথা আসে, তবে আগামী ৩০ বছরের মধ্যেও চট্টগ্রামের কোনো কোটায় চাকরি পাওয়ার কথা নয়। তারপরও বন্দর যেহেতু চট্টগ্রামে, তাই চট্টগ্রামের বিষয়টি জেলা কোটায় ফেলা হয় না।

মানবজমিনের সৌজন্যে