জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতার নায়ক ৯৩ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে গৃহবন্দি করে রেখেছে দেশটির সেনাবাহিনী। মুগাবেকে ছাড়া সময় পার করার অভিজ্ঞতা নেই দেশটির জনগণের। ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৮০ সালে ক্ষমতায় আসার পর জনজীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন তিনি। বুধবার দেশটির শাসন ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার পর সেনাবাহিনী তাকে গৃহবন্দি করে রাখবে তা কল্পনাও করতে পারেনি জনগণ। ফলে নজিরবিহীন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হতে হয়েছে আফ্রিকার এই দেশটিকে।
সেনাবাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রবার্ট মুগাবে কিংবা ফার্স্ট লেডি গ্রেস মুগাবের ব্যাপারে সরাসরি কোনো কিছুই শোনা যায়নি। তবে অনেক জিম্বাবুয়ানের প্রত্যাশা এই সঙ্কটের মাধ্যমে আরো সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের যাত্রা শুরু হবে।
তাফাদজাওয়া মাসাঙ্গো নামে ৩৫ বছর বয়সী এক বেকার যুবক বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে… কোনো কর্মসংস্থান নেই, চাকরি নেই। আমরা মুগাবে যুগের পর আরও ভালো জিম্বাবুয়ের আশা করছি। আমরা খুব খুশি। এখন তার বিদায়ের সময়।’
হারারের বাসিন্দারা রাস্তায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি উপেক্ষা করে স্বাভাবিক কাজ-কর্ম পরিচালনা করছেন। রাস্তায়, স্যোসাল মিডিয়ায় ও অন্যান্য ক্ষেত্রে মানুষের স্বাভাবিক সরব উপস্থিতি আছে। বিশ্লেষকরা বলছে, সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মুগাবে দেশটির শাসন ক্ষমতায় পরিবর্তনের জন্য আলোচনা হতে পারে।
দক্ষিণ অাফ্রিকার প্রিটরিয়াভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের বিশ্লেষক দেরেক ম্যাটিসজ্যাক বলেন, তিনি প্রত্যাশা করছেন; মুগাবে এবং সেনাবাহিনী নতুন একজনের হাতে রাষ্ট্রের য়িত্ব তুলে দিতে দর কষাকষি করছে।
‘আমি মনে করি মুগাবে এখনো দেশে থাকতে পারবেন। আমার বিশ্বাস তারা মুগাবেকে দেশ্বের স্বাধীনতার নায়ক হিসেবে তুলে ধরবেন এবং শ্রদ্ধার আসনে রাখবেন।’ জিম্বাবুয়ের এই সঙ্কটের অত্যন্ত নিবিড় দৃষ্টি রাখছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। বুধবার আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) বিরল একটি বিবৃতিতে বলছে, পরিস্থিতির শুরু দেখে এটিকে অভ্যুত্থান বলে মনে হচ্ছে। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরে গিয়ে সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আহ্বান জানিয়েছে।
জিম্বাবুয়ের ঔপনিবেশিক শাসক রাষ্ট্র ব্রিটেন সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করতে সতর্ক করে দিয়েছে। একটি গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে রবার্ট মুগাবেকে চাপ প্রয়োগ করেছে সেনাবাহিনী। তবে তিনি সেনাবাহিনীর চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না বলে জানিয়েছেন।
জিম্বাবুয়ের এই সঙ্কটের সূত্রপাত হয়েছে ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন এমন্যানগ্যাগওয়াকে বরখাস্ত করার পর। এমারসনের সঙ্গে সেনাবাহিনী প্রধান ও দেশটির স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন প্রবীণ এক নেতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। প্রেসিডেন্ট মুগাবের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে গত সপ্তাহে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।
ক্ষমতাচ্যুত করার পর ফার্স্ট লেডি গ্রেস মুগাবেকে মুগাবের পর পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার পথ পরিষ্কার করা হয়েছে বলে দেশটির রাজনীতিকরা বলছেন। গত ৩৭ বছর ধরে দেশটির শাসন ক্ষমতায় থাকা মুগাবের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এমারসন এমন্যানগ্যাগওয়া। মুগাবের সবচেয়ে অনুগত সেনা কর্মকর্তাও ছিলেন তিনি।
কিন্তু বরখাস্ত করার পর দক্ষিণ অাফ্রিকায় পালিয়ে যান তিনি। সেখানে গিয়ে মুগাবে ও গ্রেস মুগাবের রাজনৈতিক উচ্চাশা ও নেতৃত্ব নিয়ে পাঁচ পৃষ্ঠার নথি প্রকাশ করেন। সোমবার দেশটির সেনাপ্রধান কনস্ট্যান্টিনো চিওয়েঙ্গা নজিরবিহীন সংবাদ সম্মেলনে মুগাবে নেতৃত্বাধীন দেশটির ক্ষমতাসীন দল জানু-পিএফে হস্তেক্ষেপের হুমকি দেন।
এর একদিন পর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রেসিডেন্টকে ঘিরে থাকা অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানা সেনাবাহিনী। একই সঙ্গে অভ্যুত্থানের কথা নাকচ করে দিয়ে নাগরিকদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়। হারারেতে পার্লামেন্ট ভবন ও বেশ কিছু সরকারি কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণও নেয় সেনাবাহিনী।