Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

shipবাংলাদেশ নৌবাহিনীর নৌবহরে প্রথমবারের মতো যুক্ত হলো দেশের তৈরি দুটি সর্ববৃহৎ যুদ্ধজাহাজ। একই সঙ্গে প্রথমবারের মতো নৌবহরে যুক্ত হয়েছে দুটি সাবমেরিন টাগ (সাবমেরিনকে সহায়তাকারী জাহাজ)। ‘দুর্গম’ ও ‘নিশান’ নামের জাহাজ দুটি এবং ‘হালদা’ ও ‘পশুর’ নামের টাগ দুটি তৈরি করেছে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড।

গতকাল বুধবার খুলনার নৌঘাঁটি বানৌজা তিতুমীরের নেভাল বার্থে ওই জাহাজ ও টাগ দুটি নৌবাহিনীর কাছে কমিশনিং (হস্তান্তর) করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

chardike-ad

নৌবাহিনীতে সদ্য সংযোজিত হওয়া সাবমেরিন বিধ্বংসী ওই যুদ্ধজাহাজ দুটির দৈর্ঘ্য ৬৪ দশমিক ২ মিটার ও প্রস্থ ৯ মিটার। জাহাজ দুটি ঘণ্টায় ২৫ নটিক্যাল মাইল বা ৪৬ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম। এতে রয়েছে দুটি করে টর্পেডো লঞ্চার, যা মোট ছয়টি টর্পেডো ধারণ করতে সক্ষম। এ ছাড়া রয়েছে শক্তিশালী সোনার, যার মাধ্যমে নির্ধারিত দূরত্বে মধ্যে শত্রুর সাবমেরিন খুঁজে বের করে টর্পেডো দিয়ে ধ্বংস করা সম্ভব। জাহাজ দুটিতে রয়েছে ৭৬ ও ৩০ মিলিমিটারের একটি করে কামান, যা শত্রুদের বিমান ও যুদ্ধজাহাজ মোকাবিলার পাশাপাশি সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় স্থলযুদ্ধে গোলাবর্ষণ করতে সক্ষম। অন্যান্য যুদ্ধজাহাজ ও বিমানের সঙ্গে সমন্বয় করে অপারেশন পরিচালনার জন্য জাহাজ দুটিতে রয়েছে আধুনিক নেভিগেশন সিস্টেম এবং কমব্যাট ইনফরমেশন সেন্টার। আধুনিক সমরাস্ত্রের পাশাপাশি জাহাজ দুটিতে রয়েছে একটি করে উচ্চগতিসম্পন্ন বোট, যার মাধ্যমে সমুদ্রে উদ্ধার তৎপরতা, সন্ত্রাস ও জলদস্যু দমন এবং চোরাচালানবিরোধী নানা অপারেশন পরিচালনা করা সম্ভব।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা শিপইয়ার্ডে জাহাজ দুটি তৈরির কাজ উদ্বোধন করেন।

প্রথমবারের মতো নৌবাহিনীতে সংযোজিত হওয়া টাগ দুটির দৈর্ঘ্য ৩২ মিটার ও প্রস্থ ১১ দশমিক ৬ মিটার। টাগ দুটি বহির্নোঙরে ও পোতাশ্রয়ে সাবমেরিনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি নৌবাহিনীর অন্যান্য জাহাজ ও বাণিজ্যিক জাহাজকে টোয়িং (বন্দরে ঢোকা ও বহির্গমনে সহায়তা) সুবিধা প্রদান, পোতাশ্রয়ে ও সমুদ্রে অগ্নিনির্বাপণ এবং উদ্ধারকারী জাহাজ হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

রাষ্ট্রপতি খুলনার নৌঘাঁটি বানৌজা তিতুমীরে এসে পৌঁছালে নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ ও কমডোর কমান্ডিং খুলনার কমডোর সামসুল আলম তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। এরপর এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে রাষ্ট্রপতি যুদ্ধজাহাজ ‘দুর্গম’-এর কমান্ডিং অফিসার সাব্বির আহমেদ ও নিশানের কমান্ডিং অফিসার মঈন ভূঁইয়ার কাছে জাহাজ দুটি হস্তান্তর করেন। এরপর একে একে টাগ দুটিও কমান্ডিং অফিসারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, দেশে নির্মিত সর্ববৃহৎ যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন টাগ নৌবাহিনীতে সংযোজিত হওয়ার ফলে এ বাহিনী আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। নৌবাহিনীর অগ্রযাত্রায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি কার্যকর ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বর্তমান সরকার ইতিমধ্যে স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ওই পরিকল্পনা ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে নৌবহরে দুটি আধুনিক সাবমেরিন ও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যুদ্ধজাহাজ, এয়ারক্রাফট ও আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর শক্তি বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং একটি নব অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। চীনে আরও দুটি করভেট (যুদ্ধজাহাজ) নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ইতিমধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত চট্টগ্রাম ড্রাই ডকে ফ্রিগেট নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে খুলনা শিপইয়ার্ডসহ অন্যান্য শিপইয়ার্ডে দেশীয় প্রযুক্তিতে জাহাজ নির্মাণের মাধ্যমে এ খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।

চট্টগ্রামে সাবমেরিন ঘাঁটি হবে: নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পটুয়াখালীর রাবনাবাদ এলাকায় ও ঢাকার খিলক্ষেতে পূর্ণাঙ্গ নৌঘাঁটি এবং চট্টগ্রামের পেকুয়ায় একটি সাবমেরিন ঘাঁটির নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রপতি। তিনি আরও বলেন, ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী গঠনের লক্ষ্যে প্রথম ধাপ ছিল নৌবাহিনীর জন্য আকাশসীমা উন্মোচন। বর্তমান সরকারের আমলে দুটি হেলিকপ্টার ও দুটি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট নিয়ে গঠিত হয় নেভাল এভিয়েশন। নেভাল এভিয়েশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অত্যাধুনিক সমর ক্ষমতাসম্পন্ন আরও দুটি হেলিকপ্টার এবং মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট শিগগিরই যুক্ত হবে; যা সমুদ্রসম্পদ এবং সমুদ্রসীমা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সৌজন্যে: প্রথম আলো