হৃদয়কে নাড়া দেওয়া এক ছবি। এই শিক্ষক একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিটি নিয়ে অনেকের পোস্টে বলা হচ্ছে, এই শিক্ষক তার বাচ্চাকে নিয়ে ক্লাস করছেন। জন্মের সময় ওর মা পৃথিবী ছাড়েন। তাই বাবা ওকে কোলে নিয়েই পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কিন্তু ঘটনা আসলে তা নয়। এর পেছনে আসলেই দারণ ও মজার এক ঘটনা আছে। ছবিটা সবাই সম্প্রতি দেখছেন। কিন্তু ঘটনা গত বছরের।
পেছনের কাহিনীটা হলো, বাচ্চাটা আসলে তারই এক ছাত্রীর। এত ছোট বাচ্চাকে বাড়িতে রেখে ওই শিক্ষার্থীর পক্ষে ক্লাস করা সম্ভব নয়। কিন্তু শিক্ষক চান, ছাত্রীর শিক্ষাজীবন এভাবে নষ্ট না হোক। তাই তিনি ছাত্রীর বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ক্লাস করছেন।
এ ছবিটা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শ্রেণীকক্ষের- এমন খবরও ছড়িয়েছে। কিন্তু ঘটনাটি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কর্মকির্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ রকম কোনো শিক্ষকের সন্ধান মেলেনি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের প্রধান বেলাল আহমেদ জানান, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই শিক্ষক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নন।
তাহলে কোথাকার ঘটনা ছিল ওটা? এই মহান শিক্ষকটির ঠিকানা মেক্সিকোর উপকূলীয় শহর আকাপুলকো। ঘটনাটি নিয়ে প্রতিবেদন করেছিল মেক্সিকোর এক পত্রিকা। যদিও এই সত্যিকারের ‘হিরো’ সম্পর্কে তেমন তথ্য দেওয়া হয়নি। তিনি ওই শহরের একটি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। তারই এক ছাত্রী হাইস্কুল শেষ না করতেই মা হয়েছেন। তাই ক্লাসে আসতে পারছিলেন না। কিন্তু তার কোর্স শেষ করা জরুরি। তাই ক্লাসের সময় বাচ্চাটিকে দেখার দায়ভার শিক্ষক নিজেই নিলেন। পেশাদারিত্বের এই অনন্য নজির ভাইরাল হয়ে পড়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায়।
এই শিক্ষককে অসংখ্য মানুষ আদর্শ শিক্ষকের চূড়ান্ত নমুনা বলে গণ্য করেছেন। এই মানুষটির মাঝে কেবল একজন শিক্ষকই নয়, বাস করেন একজন পিতা, দায়িত্বশীল পেশাজীবী এবং একজন আদর্শ অভিভাবক।
তিনি ছাত্রীর শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করতে কোনমতে কিন্তু বাচ্চাটিকে কোলে রাখেননি, এমনভাবে নিয়েছেন এবং তার সঙ্গে এমন আচরণ করেছেন যে, বাচ্চাটিও নাকি রীতিমতো মনোযোগী দর্শক ও শ্রোতা হয়ে ওঠে। মূলত মোইসেস রেইয়েস সান্দোভাল নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ছবিসহ পোস্ট দিয়েছিলেন। তার সেই পোস্ট থেকেই এই শিক্ষক সবার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ