বিশ্বের সব মহাদেশের মধ্যে বিলিয়নিয়ার বা শীর্ষ শতকোটির সংখ্যা এখন এশিয়া মহাদেশে সবচেয়ে বেশি। বিশ্বে এখন মোট বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ১ হাজার ৫৫০, এর মধ্যে এশিয়াতেই এমন ধনী ব্যক্তি আছেন ৬৩৭। যুক্তরাষ্ট্রে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা এখন ৫৬৩। সুইজারল্যান্ডের বহুজাতিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইউবিএস এবং বহুজাতিক নিরীক্ষা ও প্রযুক্তি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারসের (পিডব্লিউসি) ‘বিলিয়নিয়ার ইনসাইটস ২০১৭’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিলিয়নিয়ারের এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটির হিসাব অনুযায়ী, গত বছর পর্যন্ত বিলিয়নিয়ারদের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ ট্রিলিয়ন বা ৬ লাখ কোটি মার্কিন ডলার। বিলিয়নিয়ারের সংখ্যায় এশিয়া এগিয়ে থাকলেও সম্পদের বিচারে আবার এগিয়ে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ধনীরা। যুক্তরাষ্ট্রের ৫৬৩ বিলিয়নিয়ারের মোট সম্পদের পরিমাণ ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার। আর এশিয়ার শীর্ষ ধনীদের সম্পদের পরিমাণ ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি ডলার। তবে এশিয়ায় যে হারে ধনীদের সম্পদ বাড়ছে, তাতে আগামী চার বছরের মধ্যে এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র পেছনে পড়বে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ইউবিএস সিকিউরিটিজ অব চায়নার সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান কিওং ঝ্যাং বলেন, প্রতি তিন সপ্তাহে চীনে একজন নতুন বিলিয়নিয়ার তৈরি হয়। সম্পদের অন্যতম বৃহৎ বাজার হিসেবে চীনের গুরুত্ব তাই সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোর কাছে অনেক বেশি।
২০১৬ সালে যতজন নতুন বিলিয়নিয়ারের খাতায় নাম লিখিয়েছেন, তাঁদের দুই-তৃতীয়াংশ চীন ও ভারতের। গত বছর এশিয়ায় নতুন করে বিলিয়নিয়ার হয়েছেন ১১৭ জন, এঁদের বেশির ভাগই নিজের চেষ্টায় এ পর্যায়ে এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালে নতুন বিলিয়নিয়ার বেড়েছে ২৫ জন, এঁদের অনেকেই আবার পারিবারিক সূত্রে ধনী হয়েছেন। এশিয়ায় ২০১৪ ও ২০১৫ সালের মধ্যে নতুন করে যত বিলিয়নিয়ার তৈরি হয়েছে, এর ৭০ শতাংশই চীনের নাগরিক। চীনের গত দুই–তিন বছরে যতজন লোক বিলিয়নিয়ার খাতায় নাম লিখিয়েছেন, তার অর্ধেকই এসেছেন তিনটি খাতে ব্যবসা করে। তিনটি খাত হলো প্রযুক্তি, ভোগ্যপণ্যের খুচরা ব্যবসা ও আবাসন। ইউরোপের ধনীদের অবস্থা এশিয়ার মতো রমরমা নয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইউরোপে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪২।
বিশ্বের সবচেয়ে দামি চিত্রকলা যাঁরা সংগ্রহ করেন, এমন ২০০ ব্যক্তির মধ্যে ১৫০ জনই বিলিয়নিয়ার বলে ইউবিএস ও পিডব্লিউসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ১৯৯৫ সালে দামি ২০০ চিত্র সংগ্রাহকের মধ্যে বিলিয়নিয়ার ছিলেন মাত্র ২৮ জন। জাপানের বিলিয়নিয়ার ইয়ুসাকু মায়জাওয়া চলতি বছরে নিলামের মাধ্যমে ১১ কোটি ডলারের বেশি দাম দিয়ে একটি ছবি কিনেছেন। এটি এ বছরে কেনা সবচেয়ে দামি ছবির মর্যাদা পেয়েছে।
বিলিয়নিয়ারদের নিয়ে ইউবিএসের এত গবেষণার কারণ হলো পৃথিবীর শীর্ষ ধনীরা যাতে সুইস এই ব্যাংকে তাঁদের সম্পদ রাখতে আগ্রহী হন। শুধু বিলিয়নিয়ারদের ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবা দেওয়ার জন্য ইউবিএস একটি নতুন বিনিয়োগবিষয়ক কার্যালয় খোলার উদ্যোগ নিয়েছে।
ইউবিএসের প্রধান বিনিয়োগকারী কর্মকর্তা মার্ক হাফেল এশিয়ার ধনীদের বিষয়ে বলেন, রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বিনিয়োগের পরিবর্তে চীনে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কোন গতিতে বাড়বে তার ওপর দেশটিতে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি নির্ভর করবে। অর্থনীতির গতি বাড়াতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নীতিও এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। প্রথম আলো