নতুন যুগে প্রবেশ করেছে চীন, সময় এসেছে এবার বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম মহাসম্মেলনে এভাবেই নিজের নেতৃত্বে দেশের এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়ে উদ্বোধনী ভাষণ দিলেন আত্মবিশ্বাসে অটল শি জিনপিং। গতকাল বুধবার শুরু হয় এ সম্মেলন। চলবে এক সপ্তাহ। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১২ সাল থেকে নেতৃত্বে থাকা শি জিনপিংই পুনরায় দলীয় প্রধান নির্বাচিত হবেন। এমন হলে, দ্বিতীয় দফায় তিনিই হবেন প্রেসিডেন্ট। ১৪০ কোটি মানুষের দেশ চীনের নেতৃত্ব দেবেন আরও পাঁচ বছর। সম্মেলন শেষে কমিউনিস্ট পার্টি ৭ সদস্য বিশিষ্ট পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। চীনের শীর্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী এ পরিষদই নেতৃত্ব দেবে দেশের। খবর বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সের।
সারাদেশ থেকে আসা প্রায় ২ হাজার তিনশ’ দলীয় নেতার উদ্দেশে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব পিপলে সাড়ে তিন ঘণ্টার মতো এক দীর্ঘ বক্তব্য দেন শি জিনপিং। দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক লক্ষ্য এবং তা বাস্তবায়নের বিষয়গুলো সবিস্তারে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সমাজতন্ত্রের হাত ধরে চীন একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। সময় এসেছে বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্বের কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়ার। চীনা ধারার সমাজতন্ত্র অন্য দেশগুলোর সামনে এখন উদাহরণ হয়ে উঠছে।
এই শতকের মাঝামাঝি চীন বিশ্বের সেরা সেনাবাহিনীর অধিকারী হবে বলেও শি দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সম্মেলনে নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সব সময় জনগণের সঙ্গে আমাদের ভাগ্য ভাগাভাগি করে নিন এবং সব সময় জনগণের কল্যাণের কথা মনে রাখুন।’ দলের ভেতরে তার চালানো ব্যাপক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন শি। গতকাল বুধবার রাজধানী বেইজিংয়ে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী এ সম্মেলন। পাঁচ বছর পর পর চীনের নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণে দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই রাজনৈতিক সম্মেলন হয়ে থাকে।
পার্টির কংগ্রেস উপলক্ষে উৎসবের আবহ জেগে উঠেছে বেইজিংজুড়ে। পার্টি নেতাদের স্বাগত জানিয়ে অনেক ব্যানার ও বিলবোর্ড টানানো হয়েছে পুরো রাজধানীতে। পাশাপাশি শহরজুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। উচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে পুলিশ। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিক থেকেই রেলস্টেশন ও পরিবহন কেন্দ্রগুলোতে চলছে অতিরিক্ত তল্লাশি। এ জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। কঠোর নিরাপত্তার কারণে রেস্তোরাঁ, জিম, নাইটক্লাব ও কারাওকি বারগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। বেইজিংয়ের প্রাণকেন্দ্রে হোটেল বুকিংও বাতিল করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
অনেক বিশ্নেষকই মনে করেন, এই কংগ্রেসে শি পার্টিতে নিজের অবস্থান আরও সংহত করবেন। দেশটির রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, শি’র ‘কর্ম প্রতিবেদন’ বা রাজনৈতিক চিন্তা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নিজেদের সংবিধান নতুন করে লেখার প্রত্যাশা করছে পার্টি। এতে নেতা হিসেবে শি পূর্ববর্তী দিকপাল পার্টি নেতা মাও দে জং এবং দেং শিয়াওপিংয়ের উচ্চতায় উন্নীত হবেন।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই শি সেন্সরশিপ বৃদ্ধি এবং আইনজীবী ও আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার বাড়ানোর মাধ্যমে পার্টি ও চীনা সমাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করেছেন। তবে তার নেতৃত্বে চীনের আধুনিকায়ন এবং সংস্কারকাজে গতি আসে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও চীনের প্রভাব বেড়েছে। সমকাল