আসছে সপ্তাহগুলোয় ভারত ব্যাটারিচালিত এক লাখ বাস ও অটোরিকশা রাস্তায় নামানোর কথা ভাবছে। মূলত ২০৩০ সালের মধ্যে সব ধরনের যানবাহন ইলেকট্রিকে রূপান্তর করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খবর এএফপি।
দিল্লির রাস্তায় পর্যায়ক্রমে এসব ইলেকট্রিক রিকশা ও বাস নামানো হবে। এ লক্ষ্যে দেশটির সরকার গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ১০ হাজার ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাণের টেন্ডার জারি করেছে। ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশগুলোর একটি। দেশটি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার পুরোপুরি বাতিলের যে উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা নিয়েছে, বিশ্লেষকদের মতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এর বাস্তবায়ন বেশ কঠিন।
ভারতে কার্বন নির্গমনের প্রধান উত্স যানবাহন। পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন পিসের মতে, দেশটিতে প্রতি বছর কমপক্ষে ১২ লাখ মানুষ পরিবেশ দূষণের কারণে মারা যায়। ডিজেল ও পেট্রল ব্যবহার বন্ধ করে দেয়ার পর আশা করা যাচ্ছে, ভারতের দূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যার অনেকখানি সমাধান হবে। এ পদক্ষেপ ২০১৫ সালে প্যারিসে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে দেশটির অঙ্গীকার রক্ষা করতেও সহায়তা করবে।
বিশ্বে ভারতই যে প্রথম জীবাশ্ম জ্বালানি বাতিল করে পুরোপুরি ইলেকট্রিক গাড়ির দিকে যেতে চাচ্ছে তা নয়, তবে তারা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক আগে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। এর আগে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ২০৪০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি পুরোপুরি বাতিল করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সম্প্রতি চীনও পেট্রলচালিত গাড়ি নিষিদ্ধ করে ইলেকট্রিক গাড়ি বিক্রি বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।
কিন্তু লন্ডনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসি জানাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী দাপিয়ে বেড়ানো গাড়ির মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড মডেলের। স্বাভাবিকভাবেই ভারতে এর সংখ্যা আরো অনেক কম। লন্ডনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসি অংশীদার আবদুল মাজেদ এ প্রসঙ্গে জানান, সব গাড়ি ইলেকট্রিক করে ফেলা সত্যিই কঠিন।
এদিকে বিদেশী নির্মাতারা ইলেকট্রিক গাড়ি নিয়ে এখনো ভারতের বাজারে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত নয়। বিখ্যাত জার্মান গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মার্সিডিজ তাদের ইলেকট্রিক গাড়ি বাজারে আনতে আরো কিছু সময় লাগবে বলে জানিয়েছে। টেসলা জুলাইয়ে মডেল-৩ নামের নতুন ইলেকট্রিক গাড়ি বাজারে ছাড়লেও ভারতের বাজারে এখনই তা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে টেসলার সবচেয়ে সস্তা ইলেকট্রিক গাড়িটির দাম ৩৫ হাজার ডলার, যা অধিকাংশ ভারতীয়র সাধ্যের বাইরে। প্রতি বছর ভারতের রাস্তায় যে তিন মিলিয়ন নতুন গাড়ি নামে, সেগুলো ইলেকট্রিক গাড়ির তুলনায় অনেক সস্তা।
অন্যদিকে নিশান মোটর ভারতের রাস্তা, চরম দূষণ ও আবহাওয়ার সঙ্গে কতটা মানিয়ে নিতে পারে তা দেখার জন্য তাদের ইলেকট্রিক গাড়ি ‘লিফ’ পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে দেখছে। এই বাস্তবতায় দেশটির ইলেকট্রিক গাড়ির বাজারে মাহিন্দ্রা ছাড়া আর কেউ নেই। মাহিন্দ্রা ভারত সরকারের কাছ থেকে গাড়িপ্রতি ২ হাজার ৩০০ ডলার ভর্তুকি পাওয়ার পর তাদের সেডান ও ভেন গাড়ির মূল্য ধরেছে ১১ হাজার ও ১৫ হাজার ডলার। কোম্পানিটি প্রত্যাশা করছে চলতি বছর তারা অটোরিকশাসহ পাঁচ হাজার ইউনিট ইলেকট্রিক গাড়ি বিক্রি করতে পারবে। বণিক বার্তা