রোহিঙ্গাদের প্রথম স্বাধীন ফুটবল টিম গড়ে উঠেছে মালয়েশিয়ায়। নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশটিতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা তরুণরা এ টিমের খেলোয়াড়।
কুয়ালালামপুরে ‘রোহিঙ্গা ফুটবল ক্লাব’ নামে যাত্রা শুরু করা দলটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৩৫ জন। নির্যাতিত-নীপিড়ত জীবনে তাদের প্রত্যেকের রয়েছে করুণ গল্প। কিন্তু সেই গল্পে নতুন কিছু যোগ করতে চান তারা। ফুটবলের মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কষ্টের কথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।
রোহিঙ্গা ফুটবল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফারুক। বয়স ২৪ বছর। তিনি জানিয়েছেন, তাদের স্বপ্ন ফুটবলের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সমস্যা মানুষের পৌঁছে দেওয়া।
রোহিঙ্গা ফুটবল টিমের নিয়মিত প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন ফারুক। তিনি জানিয়েছেন, সুইডেনভিত্তিক কনফেডারেশন অব ইন্ডিপেনডেন্ট ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনসের (কোনিফা) আয়োজনে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠেয় ‘ওয়ার্ল্ড মাইনরিটিস কাপ’-এ খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। উল্লেখ্য, ফিফার সদস্য দেশগুলোর বাইরে থাকা দেশ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের আয়োজন করে থাকে কোনিফা।
ফারুকের দাবি, ‘রাখাইনে এখন যে অবস্থা চলছে, তার মধ্যে ফুটবল খেলা ঠিক বলে আমাদের কাছে মনে হয় না।’ তিনি আরো বলেন, ‘এখন আমরা প্রশিক্ষণ করাচ্ছি না।’ তবে তার দাবি, ‘এটিই রোহিঙ্গাদের প্রথম জাতীয় ফুটবল দল।’
মোহাম্মদ ফারুক ছোটবেলায় মালয়েশিয়ায় আসেন। কিন্তু নিজ দেশের জন্য তার মন কাঁদে। রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু করার প্রচেষ্টা থেকে ফুটবল দলের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তবে রাখাইনে এখন যে অবস্থা, সে তুলনায় তিনি হয়তো কিছুটা ভালো আছেন। তবে তিনি এ-ও জানেন, জাতিগত নিধনের মুখে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর কী ধরনের বর্বরতা চলছে। সাম্প্রতিক সহিংসতায় বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। তাদের জন্য কিছু করতে চান ফারুকরা।
মালয়েশিয়ায় এখন ১ লাখ ৫০০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে আবু তয়ুব একজন। রাখাইনের মংডুতে তার বাড়ি। ২১ বছর বয়সি তয়ুব ফুটবল টিমের সদস্য। ২০১২ সালে নির্যাতনের মুখে রাখাইন থেকে পালিয়ে আসেন তিনি। ১৫ দিন নৌকায় ভেসে মালয়েশিয়া পৌঁছান। সাগরে ভাসার সেই ১৫টি দিনের প্রতিটি মুহূর্তে মৃত্যুর ভয় তাকে গ্রাস করেছিল।
মোহাম্মদ ফারুকের ভাষ্যমতে, গত মাসের ২৬ আগস্ট আবু তয়ুবের দুই চাচাকে হত্যা করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তাদের পরিবারের বাকি সদস্যরা পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
আবু তয়ুব কুয়ালালামপুরে বাগানে ঘাস কাটার কাজ করেন। তিনি বলেন, মংডুতে তরুণ রোহিঙ্গাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছিল সেনাবাহিনী। আমার ভয় হতে থাকে, তারা আমাকেও তুলে নিয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি তখন বুঝতে পারি, জীবন বাঁচানোর এ-ই একমাত্র পথ (মালয়েশিয়া পালিয়ে আসা)।’
২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কোনিফার নিবন্ধিত ফুটবল টিমের সদস্য সংখ্যা ৪৬টি। রোহিঙ্গা ফুটবল ক্লাব তার মধ্যে একটি। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাধীনতাকামী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকারীরা কোনিফার সদস্য। তিব্বত, মোনাকো, নর্দান সাইপ্রাস, পাঞ্জাব ও কুইবেকও এর সদস্য।
২০১৮ সালের কোনিফা মাইনরিটিস ওয়ার্ল্ড কাপ হওয়ার কথা রয়েছে সোমালিয়ার বারাওয়ায়। তবে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনিফার পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি।
ফারুক বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংগ্রহে কাজ করছে তাদের ফুটবল ক্লাব। স্থানীয় বিভিন্ন ক্লাব ও প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে প্রীতি ম্যাচ খেলে যে অর্থ পান, পরিমাণ সামান্য হলেও তা তারা শরণার্থীদের জন্য পাঠান। ফারুক বলেন, ‘প্রতিমাসে আমরা ৩ হাজার রিংগিত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য পাঠাই, কখনো কখনো নিজেদের পকেট থেকেও দিতে হয়।’