পাঠাগারের ইংরেজি শব্দ লাইব্রেরি। যেখানে পড়াশোনা করার ব্যবস্থা রয়েছে। পাঠাগারের জন্য নির্ধারিত স্থান, নির্দিষ্ট ভবন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং আসবাবপত্র আবশ্যক। এমন বিখ্যাত অনেক পাঠাগারের কথা আমরা জানি। এর বাইরেও অভিনব কিছু পাঠাগার রয়েছে বিশ্বজুড়ে। সে খবর হয়তো অনেকেরই জানা নেই। জানা না থাকলে আসুন জেনে নেই।
উদ্যানে পাঠাগার: কানসাসের উইচিতা স্টেট ইউনিভার্সিটির ভেতর দিয়ে উদ্যানের মত লেকের পাশে কিছু চেয়ার-টেবিল দিয়ে বসার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে পথবাতি। রাস্তার পাশেই একটি ছোট্ট পাঠাগার। এখানে মানুষ এসে বসে গল্প করতে কিংবা বই পড়তে পারে।
ঘোড়ার পিঠে পাঠাগার: ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের বানটেন প্রদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের নাম সেরাং। এখানে কোন স্থায়ী পাঠাগার নেই। তাই রিদওয়ান সুরুরি নামের এক ব্যক্তি তার ঘোড়ার পিঠে শিকল দিয়ে দুইটি বড় কাঠের বাক্সে বই ভর্তি করে বানিয়ে ফেলেছেন একটি ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার। প্রতি সপ্তাহে ঘোড়াকে নিয়ে ওই অঞ্চলে যান সুরুরি। ঘোড়ার পায়ের আওয়াজ পেলেই শিশু থেকে বৃদ্ধরাও হাসিমুখে ছুটে আসে।
ট্যাঙ্করূপী পাঠাগার: আর্জেন্টিনার অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিশেষ পুলিশ বাহিনী এ গাড়িতে ঘুরতো। আর সেই ভয়াবহ স্মৃতিকে প্রতীক হিসেবে নিয়ে ১৯৭৯ সালে রাউল লেমেসঅফ একটি ফ্যালকন গাড়িকে ট্যাঙ্কের রূপ দান করেন। এরপর একে ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন। যেসব অঞ্চলে কোন স্থায়ী পাঠাগার নেই; রাউল সেখানেই ছুটে যান তার পাঠাগার নিয়ে।
বাগানে পাঠাগার: ইসরাইলের তেল আবিব পার্কে ঘুরতে আসা বইপ্রেমীদের মনের খোরাক মেটায় লেভিনস্কি গার্ডেন লাইব্রেরি। এই পাঠাগারের কোন দরজা কিংবা দেওয়াল নেই। পাঠাগারটি বানিয়েছেন আর্টিম এবং ইয়োভ মেইরি নামের দুই ব্যক্তি। লেভিনস্কি গার্ডেন লাইব্রেরিতে বিশ্বের ১৫টি ভাষার মোট ৩ হাজার ৫শ’ বই রয়েছে।
ক্ষুদ্র পাঠাগার: সামান্য কয়েকটি বই নিয়ে তৈরি লিটল ফ্রি লাইব্রেরি। মায়ের স্মৃতিকে ধরে রাখতে ২০০৯ সালে পাঠাগারটি তৈরি করেন টড বেল নামে এক ব্যক্তি। মায়ের মৃত্যুর পরে টড বেল কাঠের তৈরি একটি ছোট্ট বক্স বানিয়ে তা বই দিয়ে ভর্তি করে বাড়ির সামনে রেখে দেন। মাত্র চার মাসের মধ্যেই এটি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৪০টি দেশে ৬ হাজার লিটল ফ্রি লাইব্রেরি রয়েছে।
আঙিনায় বই: বেলজিয়ামের ঘেন্টে সেন্ট পিটার্স অ্যাবি ভিনিয়ার্ডে ইতালিয়ান শিল্পী মাসিমো বার্তোলিনি পাঠাগারটি তৈরি করেছেন। ২০১২ সালে বেলজিয়ান আর্ট ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে বানানো হয় বুকইয়ার্ড নামের পাঠাগারটি।
সৈকতে বইয়ের তাক: ইকিয়া বুন্দি বিচ আউটডোর বুককেস পাঠাগারটির স্থায়িত্ব ছিল মাত্র একদিন। অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত বুন্দি বিচে এটি বানানো হয়েছিল। ইকিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৩০টি বুককেস স্থাপন করে হাজারেরও অধিক বই রেখেছিল। বইপ্রেমীরা তাদের পছন্দমত বই নিতে পেরেছিল। তবে একটি বইয়ের বিনিময়ে তাদের সংগ্রহের একটি বই এখানে দিতে হবে। কিংবা একটি স্বর্ণমুদ্রাও দান করা যাবে।
উন্মুক্ত পাঠাগার: জার্মানির ম্যাজবার্গে ২০০৫ সালে কারো নামে একটি দল পাঠাগারটি নির্মাণ করে। নাম রাখেন ওপেন এয়ার লাইব্রেরি। এখানে মনোরম পরিবেশে খোলা হাওয়ায় বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টার বই পড়তে পারেন যে কেউ।
ফোন বক্স পাঠাগার: ব্রিটেনে চালু করা হয় ফোন বক্স লাইব্রেরি। বাতিল হয়ে যাওয়া ও পরিত্যক্ত ফোন বক্স দিয়েই তৈরি করা হয়েছে এই পাঠাগার। ২০০৯ সাল থেকে ব্রিটেনে এই অভিনব পাঠাগারের যাত্রা শুরু হয়।