নিজেকে ৬ বছর আগে থেকেই চট্টগ্রামের ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম হযরত আশরাফ শাহ রহ. এর অলৌকিক খেলাফতপ্রাপ্ত বলে দাবি করছেন তিনি। সে কারণে ঝাড় ফুঁকও করতেন। নানান পেশার মানুষের পাশাপাশি নিয়মিত যাতায়াত করত নারীরা।
দীর্ঘ ৬ বছর ধরেই নানাভাবে প্রতারণা করে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে দিয়েছেন। নিজেকে লোকদের মাঝে প্রচার করে বেড়াতেন ফকির বাবা বলে। লোকদের দেখানোর জন্য প্রতি বুধবার যেতেন কদলপুর ইউনিয়নে অবস্থিত হযরত আশরাফ শাহ রহ. এর মাজারে। যাতে করে লোকজনের বিশ্বাস অর্জন করা যায়।
প্রতি বুধবারের মতো গত বুধবার রাতেও (২১-সেপ্টেম্বর) তিনি যান হযরত আশরাফ শাহ রহ. মাজারে। তবে এবার একটু অন্যভাবে। গিয়েছেন চমৎকার একটি নাটকীয়তার অভিনয় করে।
ঘটনাটি উত্তর চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ৮নং কদলপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সিকদার পাড়ার মো. শফির ছেলে ছৈয়্যদ মো. ছোটন শাহ’র। সে নিজেকে হযরত আশরাফ শাহ’র খলিফা দাবি করে আসছিল।
উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, বুধবার দিবাগত রাত ৩টায় সময় সে ছাগলের নাড়ি-ভুড়ি নিজের পেটের সাথে বেধে পুকুরে ধৌত করছিল। কিন্তু লোকদের বলছিল সে অলৌকিক ভাবে তার ক্বলব পরিস্কার করছে। মুহূর্তেই এ ঘটনা চারদিকে ছড়িলে পড়লে হাজার হাজার স্থানীয় জনতা ছোটন শাহ’কে (বাবা) দেখার জন্য ভিড় জমায় হযরত আশরাফ শাহ (রঃ) মাজারে।
এক পর্যায়ে ঘটনাটি নাটকীয়তা প্রমাণ হলে লোকজন খবর দেন রাউজান থানায়। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে ঘটনার সত্যতা যাচাই করার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে প্রমাণ হয় কোন অলৌকিক ঘটনা নয়, বরং সাধারণ মানুষকে ধোকা দেবার জন্য প্রতারণা করে নাড়ি-ভুড়ি পেটে বেঁধে অভিনয় করেছে সে। পরে তাকে দুপুরে হাসপাতাল থেকে রাউজান থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
জানা যায়, পরিবারের ৪ ভাই ১ বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। তার বাবা মো.শফি কৃষি কাজ করেন। বাকি ভাই বিভিন্ন কাজ করেন আর বোন বিবাহিত।
ছোটন শাহ’র বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, সে অনেক বড় একজন ভণ্ড। আমার নানীর কাছ থেকে ক্যান্সার ভাল হবার নাম করে সে ১০হাজার টাকা নিয়েছিল, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
তারই গ্রামের মো. ইলিয়াছ নামের এক ছেলে বলে, বিভিন্ন সময় আমরা দেখতাম তার কাছে মেয়েরা বেশি আসত। সে নাকি তাদের তাবিজসহ ঝাড় ফুঁক করে। তবে আমরা এগুলো বিশ্বাস করতাম না। আজকেই ভালো করে বাবা নামের ভন্ডের ভন্ডামীর চিত্র দেখলাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাউজান থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার এসআই মুরাদ হোসেন বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি উৎসুখ জনতার ভিড়। পরে সে ভণ্ড প্রতারক প্রমাণ হলে তাকে আমরা থানায় নিয়ে আসি।
মামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো কোন মামলা হয়নি, আমাদের (ওসি) টেকনাফে গিয়েছেন ত্রাণ বিতরণ করতে এমপি সাহেবের সাথে। তিনি আসলে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।