মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সুচির একটি পুরস্কার স্থগিত করেছে ব্রিটেনের একটি বৃহত্তম বাণিজ্য ইউনিয়ন। সুচি তার রাজনৈতিক জীবনে গৃহবন্দী থাকার সময়ে ওই পুরস্কার পেয়েছিলেন। শুধু ওই একটি সংস্থাই নয়, ব্রিটেনের আরো কয়েকটি সংস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয় সুচিকে দেয়া তাদের পুরস্কার এবং সম্মানসূচক ডিগ্রি স্থগিত করেছে বা পর্যালোচনা করছে। খবর গার্ডিয়ানের।
সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন, নিপীড়নের ঘটনায় মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সু চি এক প্রকার নীরব অবস্থান করছেন। মঙ্গলবার রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন এই নেত্রী।
স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৪ মিনিটে টেলিভিশনে ভাষণ দেন তিনি। রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার পর এই প্রথম জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন সু চি। ভাষণে সু চি বলেন, আন্তর্জাতিক চাপে ভীত নয় মিয়ানমার। তিনি বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী শান্তিরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। শান্তি না আসা পর্যন্ত সেনা অভিযান চলবে। আমরা শান্তি এবং ঐক্য চাই। যুদ্ধ চাই না। জাতির উদ্দেশে ভাষণে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তেমন কোনো সমাধানের কথা উল্লেখ না করলেও সেনাবাহিনীর পক্ষেই ঠিকই সাফাই গেয়েছেন এই নেত্রী। ফলে আবারও আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার শিকার হলেন সু চি।
মানবিক সংকটে সু চির এমন অবস্থানকে কেন্দ্র করেই তার পুরস্কার স্থগিত করা হলো। সামরিক জান্তা সরকারের অধীনে নিপীড়নের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের ডাক দিয়েছিলেন সু চি। আর এ কারণেই তিনি পুরস্কৃত হয়েছিলেন, সম্মান পেয়েছেন। কিন্তু বর্তমান সহিংস পরিস্থিতিতে তিনি নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। ব্রিটেনের বেশ কিছু সংস্থা বলছে, তারা সু চিকে দেয়া সম্মান পর্যালোচনা বা অপসারণের চিন্তা করছেন।
ব্রিটিনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য ইউনিয়ন ইউনিসন ঘোষণা করেছে, তারা সু চির সম্মানিত সদস্যপদ স্থগিত করছে। একই সঙ্গে তারা মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রীকে রোহিঙ্গা জনগণের ওপর যে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে তা বন্ধ করার আহ্বানও জানিয়েছে। এ বিষয়ে তার অনেক কিছুই করার আছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
ইউনিসনের প্রেসিডেন্ট মারগারেট ম্যাককি গার্ডিয়ানকে বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা যে পরিস্থিতির শিকার তা সত্যিই ভয়াবহ। তিনি আরো বলেন, আমরা ইউনিসনে তার সম্মানিত সদস্যপদ স্থগিত করেছি। আমরা আশা করছি তিনি আন্তর্জাতিক চাপে সাড়া দেবেন।
এই বার্মিজ নেত্রী যখন বিরোধী দলে থেকে সামরিক জান্তা সরকারের বিরোধীতা করে গণতন্ত্রের ডাক দিয়েছিলেন তখন তাকে সম্মানজনক ডিগ্রি প্রদান করেছিল ব্রিসটল ইউনিভার্সিটি। তারাও সু চিকে দেয়া পুরস্কার পর্যালোচনা করবে বলে জানিয়েছে।
ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ১৯৯৮ সালে ড. অং সান সু চিকে সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করা হয়।সে সময় তিনি বার্মায় মানবিক অধিকার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সু চিকে প্রদান করা ওই সম্মানসূচক ডিগ্রি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এদিকে, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস স্টুডেন্ট ইউনিয়ন বলছে, তারা সু চির সম্মানসূচক প্রেসিডেন্সি বাতিল করবে।
ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতির পাশা বলেন, গণহত্যা বন্ধে সু চির বিরোধী অবস্থান প্রকাশ করতেই আমরা তার সম্মানসূচক প্রেসিডেন্সি বাতিল করব।
গত ত্রিশ বছরে গ্লাসগো, বাথ অ্যান্ড ক্যামব্রিজসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন সু চি। অক্সফোর্ডের উপদেষ্টারা ঘোষণা করেছেন, তারা সু চিকে দেয়া ১৯৯৭ সালের দ্য ফ্রিডম অব দ্য সিটি অব অক্সফোর্ড পুরস্কার পরবর্তী মাসের উপদেষ্টা পরিষদের আলোচনায় পুনর্বিবেচনা করবেন। ১৯৯৩ সালে সু চিকে সম্মানিত ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছিল অক্সফোর্ড।
১৯৯১ সালে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের বিরোধী নেত্রী অং সান সু চি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা অর্জন করেন এবং নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।