নিয়ম মানছে না বিমানের বিভাগীয় ও কেন্দ্রীয় প্রশাসন। অপ্রয়োজনীয় বদলি ও পদোন্নতি অহরহ হলেও অবৈধ অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত ডমেস্টিক স্টেশনগুলোতে ১০/১২ বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন অনেকে। অভিযোগ আছে, অবৈধ লেনদেন ও উচ্চপর্যায়ের তদবিরের কারণে তাদের বদলি করা হচ্ছে না।
একই স্টেশনে দীর্ঘদিন থাকার ফলে অনেকে আবার সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা অবৈধ অর্থ উপার্জন করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী একজন বিমানকর্মী ডমেস্টিক স্টেশনে ১৪ মাস থেকে সর্বোচ্চ তিন বছর থাকতে পারেন। কখনও এর বেশি থাকার সুযোগ নেই। কিন্তু নিয়ম অমান্য করে ১০/১২ বছর ধরে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে একই স্টেশনে কর্মরত আছেন ট্রাফিক বিভাগের দুই ডজন কর্মী। বিশেষ করে সিলেট ও চট্টগ্রাম স্টেশনে বছরের পর বছর থেকে বিশাল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন এসব কর্মী। চালাচ্ছেন এলিয়ন, প্রিমিও’র মতো দামি গাড়ি।
বিমান সূত্র জানায়, বিমানের চলমান ডমেস্টিক স্টেশন ছয়টি। এগুলো হচ্ছে- সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহী, সৈয়দপুর ও যশোর। ডমেস্টিক হলেও সিলেট ও চট্টগ্রামে বেশকিছু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালিত হয়। বিশেষ করে সিলেট থেকে রয়েছে সরাসরি লন্ডনের ফ্লাইট। এ স্টেশনে পোস্টিং নিয়ে আসতে পারলে কেউ আর যেতে চান না। বলা হয়, এখানে এক বছর চাকুরী করলে আর কিছুই লাগে না। এখানে আট/নয় বছর ধরে পড়ে আছেন অনেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রাফিক বিভাগের জিএসএস (গ্রাউন্ড সার্ভিস সুপারভাইজার) মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন খান (পি নং-৩৬৬৬৭) সিলেটে পোস্টিং নিয়েছেন ২০০৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। এ স্টেশনে তিনি আট বছর ছয় মাস ১৯ দিন রয়েছেন। জিএসএস মো. রাজা মিয়াও (পি নং-৩৬১৮৩) আছেন আট বছর ছয় মাস ১৯ দিন ধরে। জিএসএ মো. আজিজুল হক (পি নং-৫০১৮৯) অবস্থান করছেন আট বছর চারদিন, জিএসএ মো. আওলাদ হোসেন ভূইয়া (পি নং-৫০১৯৬) আছেন সাত বছর আট মাস নয়দিন, মো. মুজিবুর রহমান (পি নং-৩৪১২৩) চার বছর পাঁচ মাস ২৭ দিন, জিএসএস এসএম এহসানুল হক (পি নং-৩৬৫১৩) চার বছর আট মাস ২১ দিন এবং জিএসএ মাহবুবা ইয়াসমিন মিনু (পি নং-৫০৫৯৩) সিলেটে অবস্থান করছেন চার বছর সাত মাস ১৭ দিন ধরে।
সিলেটের পরই কাঙ্ক্ষিত স্টেশন হলো চট্টগ্রাম। এখানেও পোস্টিং নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন দেড় ডজনের মতো ট্রাফিক স্টাফ। এর মধ্যে জিএসএস এফএম দিদারুল আলম চৌধুরী (পি নং-৩৬৯০৮) আট বছর পাঁচ মাস নয়দিন ধরে আছেন চট্টগ্রামে। জিএসএস সঞ্জয় সিনহা (পি নং-৩৬৪৭৬) আছেন ১০ বছর ধরে। এছাড়া সাজেদা বেগম ১০ বছর, নাসের উল্লাহ খান ছয় বছর আট মাস, ওমর ফারুক চৌধুরী সাত বছর, এমএম ইকবার কবির আট বছর, মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন সাড়ে সাত বছর, হাবিবুর রহমান সাড়ে নয় বছর, শেখ ইমতিয়াজ উদ্দিন ছয় বছর, এমএম মইনুদ্দিন মুরাদ নয় বছর, মইনুল ইসলাম পাঁচ বছর, সাইদুল ইসলাম সাত বছর, আকতার হোসাইন সাড়ে সাত বছর ধরে চট্টগ্রামে স্টেশনে অবস্থান করছেন। তাদের অনেকেই এখন বাড়ি-গাড়ির মালিক।
দীর্ঘদিন একই স্টেশনে কর্মরত থাকার পরও কেন তাদের বদলি করা হচ্ছে না- জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক প্রশাসন মো. মুমিনুল ইসলাম বলেন, সিলেট ও চট্টগ্রাম স্টেশনে ট্রাফিক বিভাগে কর্মরতদের বদলি করে কাস্টমার সার্ভিস বিভাগের জিএম ও পরিচালক।
এ বিষয়ে সদ্য বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (কাস্টমার সার্ভিস) আতিক সোবহানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি এয়ারপোর্ট সার্ভিসের জিএম’র দায়িত্ব। তিনি ডমেস্টিক ট্রাফিকের পোস্টিং দিয়ে থাকেন।
আপনিও কয়েক বছর এয়ারপোর্ট সার্ভিসের জিএম’র দায়িত্বে ছিলেন। তখন কেন এ অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি- এমন প্রশ্নের জবাবে আতিক সোবাহান বলেন, হজ ফ্লাইট পরিচালনাসহ বিভিন্ন ঝামেলার কারণে বদলি করার সময় পাইনি।
বর্তমানে এয়ারপোর্ট সার্ভিসের জিএম নুরুল ইসলাম হাওলাদার হজ ডিউটিতে জেদ্দা অবস্থান করছেন। এ কারণে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কাস্টমার সার্ভিস বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে সম্প্রতি দায়িত্ব পাওয়া আলী আহসান বাবু এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি আজই দায়িত্ব নিয়েছি। এ বিষয়ে তেমন কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানাতে পারব।
যদি অনিয়ম হয় তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। বিমানের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছেন আলী আহসান বাবু।
তদবিরের কারণে বদলি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ অনিয়ম প্রসঙ্গে বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) ইনামুল বারী বলেন, প্রশাসনকে গতিশীল রাখার বিকল্প নেই। বদলি, পদোন্নতির মতো গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো এখানে এতদিন অনিয়মিত ছিল। এখন এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
ইতোমধ্যে অনেককে প্রমোশন দেয়া হয়েছে। বদলির বিষয়টিও দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।