রূপরেখা তৈরিই ছিল। সাকিব আল হাসান বিশ্রাম চাওয়ায় তাতে খানিক রদবদল। সাকিবকে ধরেই তৈরি করা হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দল। যেহেতু দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট ফাস্ট ও বাউন্সি, সেখানে স্পিনাররা তেমন সুবিধা করতে পারবেন না, সেই চিন্তায় ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তিন স্পিনার (সাকিব, মিরাজ ও তাইজুল ) ফর্মুলা থেকে সরে এসে দুই স্পিনার নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাবার চিন্তা ছিল চূড়ান্ত। আর তাতে সাকিবের সঙ্গে ছিলেন মিরাজ।
আর ঘরের মাঠে ১৪ জনের দলে তিন পেসার (মোস্তাফিজ, শফিউল ও তাসকিন) থাকলেও প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দ্রুত গতির বাউন্সি ট্র্যাকে পাঁচজন পেসার দলে নেয়ার সিদ্ধান্তও মোটামুটি চূড়ান্ত। তিন স্পিনার থেকে একজন কমানো মানেই তাইজুল ইসলাম বাদ।
এই ছিল প্রথম ছক। কিন্তু সাকিব বিশ্রাম চাওয়ায় হিসেবে পাল্টেছে। এতে করে কপাল খুলে গেছে তাইজুলের। এখন তাকে নিতেই হচ্ছে। কারণ শেষ পর্যন্ত হয়তো একাদশে তিন পেসার খেলানো হবে। সঙ্গে মিরাজ। আর একজন বাড়তি স্পিনার তো লাগবে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তি যতই নিশ্চিত হোক না কেন, এই মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি স্পিন বোলিংটা যত ভালই করুন না কেন, তিনি তো আর তাইজুলের মত স্পেশালিষ্ট স্পিনার নন। কাজেই বলেই দেয়া যায় তাইজুল শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট দলের সঙ্গী হচ্ছেন। সাকিব না খেললে তাকে বাইরে রেখে দল সাজানোর সে অর্থে অবকাশ নেই।
আগেই জানা সাকিব ‘টু ইন ওয়ান’। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে এক সিরিজে হাতের ব্যথায় খেলতে পারেননি সাকিব। তখন দল ঘোষণার সময় আনুষ্ঠানিক প্রেস কনফারেন্সে সে সময়কার প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ বলেছিলেন, সাকিব হচ্ছে টু ইন ওয়ান। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার না খেলার অর্থ একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানের পাশাপাশি একজন বোলার কমে যাওয়া। তাই সাকিব বিশ্রামে থাকার অর্থ একজন ব্যাটসম্যান ও একজন বোলারের অন্তর্ভুক্তি। সেখানে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সন্দেহাতীতভাবে সম্ভাব্য বিকল্প । তারপরও একজন স্পেশালিষ্ট স্পিনার বিশেষ করে বাঁ-হাতি স্পিনার দরকার। কারন মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ দুজনই অফব্রেক বোলার। তাই একজন বাঁ-হাতি স্পিনারের কোটায় শেষ পর্যন্ত হয়ত তাইজুল ঢুকে যাবেন দলে।
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর বিকেল পাঁচটায় আনুষ্ঠানিক সংবাদ সন্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দল ঘোষণা। দল নিয়ে আগে বোর্ড সভাপতির একটি মন্তব্যের আলোকে কারো কারো মনে হয়েছিল যে, আনামুল হক বিজয় বুঝি টেস্ট দলে ফিরছেন। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ব্যাটিং লাইন আপে প্রথম পাঁচজন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ( তামিম, সৌম্য, ইমরুল, মুমিনুল ও সাকিব ) থাকায় বিষয়টা চোখে লেগেছে।
বিসিবি বিগ বস নাজমুল হাসান পাপন ওপরের দিকে একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যানের আবশ্যকতার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে আনামুল হক বিজয়ের নাম রেফারেন্স হিসেবে উদ্ধৃত করলে কারো কারো মনে হয় বিসিবি প্রধান বুঝি বিজয়কে দলে চাচ্ছেন। আসলে অমন নয়।
একদম নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর, আনামুল হক বিজয় ক্রিকেটার নির্বাচন ও দল সাজানোর কোন ছকেই নেই। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু রোববারও জাগো নিউজকে বলেছেন, আনামুল হক বিজয় আমাদের হিসেবেই নেই। কাজেই তার দলে থাকার প্রশ্নই আসে না।
যে দুজনকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে কারো কারো অভিযোগ, সেই সৌম্যতো আছেনই, ইমরুল কায়েসের দলে থাকাও মোটামুটি নিশ্চিত। ঢাকার শেরেবাংলা টেস্টে প্রথমে ১৪ জনে জায়গা না পেলেও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের চোখের সমস্যায় দলে জায়গা পেয়ে খেলা মুমিনুলও যাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকা। আর তামিম, অধিনায়ক মুশফিক, মিরাজ ও সাব্বির অটোমেটিক চয়েজ। সঙ্গে একজন বিকল্প কিপার। লিটন দাস না হয় নুরুল হাসান সোহানের একজন।
সাকিবের বিকল্প মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আর পাঁচ পেসার; অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলে থাকা মোস্তাফিজ, তাসকিন, শফিউলতো আছেনই। আর নতুন করে যুক্ত হতে যাচ্ছেন রুবেল হোসেন ও কামরুল ইসলাম রাব্বি। যোগ করে দেখেন ১৪ জন হয়। কিন্তু দল তো ১৫ জনের, তাহলে আর একজন কে? ঐ যে বলা হলো সাকিব নেই তাই মিরাজের সঙ্গে স্পেশালিষ্ট স্পিনার হিসেবে তাইজুল।
সম্ভাব্য স্কোয়াড: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহীম (অধিনায়ক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ , সাব্বির রহমান রুম্মন, লিটন দাস/ নুরুল হাসান সোহান, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, শফিউল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন , কামরুল ইমলাম রাব্বি ও তাইজুল ইসলাম।