নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার একটি বিবরণ অনুযায়ী উত্তর কোরিয়া ইউক্রেনের কালোবাজার থেকে রকেট ইঞ্জিন কিনে পরে সেই প্রযুক্তির আরো বিকাশ ঘটায়৷ পূর্ব ইউক্রেনের নিপ্রো শহরে অবস্থিত সাবেক সোভিয়েত রকেট তৈরির কারখানাটির নাম ইয়ুঝমাশ৷ ভিটালি জুশচেভস্কি এখানে ডেপুটি প্রোডাকশন ম্যানেজার ছিলেন৷ মার্কিন নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সোমবারের সংস্করণে দাবি করা হয় যে, রকেট প্রযুক্তিতে উত্তর কোরিয়ার চমকপ্রদ প্রগতির সঙ্গে ইয়ুঝমাশের সংযোগ থাকতে পারে।
ইয়ুঝমাশ ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানাটি আর্থিক বিপাকে; সেই কারণেই হয়তো অপরাধীরা কারখানার সাবেক কর্মীদের সঙ্গে যোগসাজসে পুরনো সোভিয়েত রকেট ইঞ্জিন – বা তার যন্ত্রাংশ – উত্তর কোরিয়ায় পাচার করেছে৷ এনওয়াইটি এই প্রসঙ্গে লন্ডনের ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ’ (আইআইএসএস)-এর একটি সমীক্ষা ও মার্কিন গুপ্তচর সংস্থাগুলির অনুমানের কথা উল্লেখ করেছে৷ তবে পত্রিকাটি শুধু হদিশের কথা বলেছে, কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণের কথা বলেনি৷
হঠাৎ এই প্রগতি ঘটল কী করে?: আইআইএসএস-এর মাইকেল এলম্যান উত্তর কোরিয়ার হোয়াসং ১২ ও ১৪ গোত্রের মাঝারি পাল্লার ও আন্তঃ-মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রগুলি বিশ্লেষণ করে দেখেছেন৷ এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি সম্ভবত মূল মার্কিন ভূখণ্ডে পৌঁছানোর ক্ষমতা রাখে৷ উত্তর কোরিয়ার পক্ষে মাত্র দু’বছরের মধ্যে রকেট প্রযুক্তিতে এই পরিমাণ প্রগতি করা শুধুমাত্র বিদেশি সরবরাহকারী, এক্ষেত্রে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবেক সদস্যদেশগুলির সাহায্যেই সম্ভব – এলমান এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন৷
সর্বাধুনিক হোয়াসং রকেটগুলিতে যে এক চেম্বারের ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে, তা সোভিয়েত আরডি-২৫০ রকেট ইঞ্জিনটির কথা মনে করিয়ে দেয়, বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত – যদিও আরডি-২৫০-এর ইঞ্জিনের দু’টি চেম্বার ছিল৷ ষাটের দশকে এই রকেট ইঞ্জিন তৈরি করা হয়৷
ইয়ুঝমাশ কারখানায় আরডি-২৫০ রকেট ইঞ্জিনটি তৈরি করা হয়েছে কি হয়নি, তা প্রমাণ করা শক্ত৷ জুশচেভস্কির বিবৃতি অনুযায়ী, রাশিয়া থেকে এই ইঞ্জিনগুলি এসেছিল ও ‘‘স্বল্প পরিমাণে উৎপাদন করা হয়েছিল”৷ ইউক্রেনে আরডি-২৫০ রকেট ইঞ্জিন যথেষ্ট পরিমাণে তৈরি করা হয়েছিল, বলে এলমানের ধারণা৷ আইআইএসএস-এর সমীক্ষায় তিনি লিখেছেন যে, ‘‘শত শত, কিংবা তারও বেশি” আরডি-২৫০ রকেট ইঞ্জিন রাশিয়া ও সেই সঙ্গে ইউক্রেনে রয়ে গেছে৷ কাজেই মস্কো স্বয়ং পিয়ংইয়ং-কে রকেট ইঞ্জিন সরবরাহ করেছে, এমন সম্ভাবনাও দেখেন তিনি৷
রুশ অপপ্রচার?: ‘‘নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ যে ধরনের ইঞ্জিন দেখানো হয়েছে, (ইয়ুঝমাশে) আমরা কখনো সে ধরণের ইঞ্জিন উৎপাদন করিনি”, বলেন অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার জুশচেভস্কি, যিনি প্রায় ৫০ বছর ধরে কোম্পানিটিতে কাজ করেছেন৷ ক্রাইমিয়া দখলের পর যখন রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যায়, তখন থেকে নিপ্রোর রকেট কারখানাটি ‘‘প্রায় মৃত”, বলে বর্ণনা করেন তিনি৷ ইয়ুঝমাশ থেকে উত্তর কোরিয়ায় প্রযুক্তি পাচার তাঁর কাছে অকল্পনীয়৷ ইউক্রেন সরকার ও ইয়ুঝমাশের কর্মকর্তারাও নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার বিবরণ অস্বীকার করেছেন৷ কিয়েভ সরকার প্রযুক্তি পাচার সম্পর্কে কিছু জানতেন না, বলেই এলম্যানের ধারণা৷
সোভিয়েত ইউনিয়নের সুবিশাল এসএস-১৮ ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইলটি তৈরি হতো এই ইয়ুঝমাশ কারখানায়৷ ইয়ুঝমাশ জাতিসংঘের আরোপিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ এই প্রথম৷ তবে উত্তর কোরিয়া যে ইউক্রেনীয় জানকারিতে আগ্রহী, অতীতে তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে: ২০১২ সালে ইয়ুঝমাশের উপর গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ইউক্রেনে দু’জন উত্তর কোরীয় নাগরিকের বিচার হয়৷
নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টটি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ অপপ্রচারের অঙ্গ, বলে কিয়েভের অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের বিশ্বাস৷ ডয়েচে ভেলে