খুন না আত্মহত্যা? ঢাকাই ছবির অমর নায়ক সালমান শাহের মৃত্যু নিয়ে এই প্রশ্নের কোনো সঠিক জবাব আজও মেলেনি। এই নায়কের মৃত্যুর পর থেকে চলেছে অনেক আলোচনা ও সমালোচনা।
ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। লাশ উদ্ধারের পর ধারণা করা হয় তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু পরিবারের দাবি, তাকে খুন করা হয়েছে। খুনের মামলাও করেছে সালমানের পরিবার। সেখানে আসামি করা হয়েছে সামিরা ও তার মাকে। আছেন রুবি, ডন, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ আরও বেশ কয়েকজন।
কিন্তু বেশ কয়েকবার তদন্তের পরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রিপোর্ট দিয়েছে এটি আত্মহত্যা। সেই রিপোর্টে নারাজি দিয়েছেন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। সেই সূত্র ধরে নতুন করে এই মৃত্যু রহস্যের জট খুলতে তদন্ত করছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনস (পিবিআই)।
এদিকে সালমান খুনের আসামি আমেরিকা প্রবাসী রুবি সুলতানা সম্প্রতি এ ভিডিও বার্তা দিয়ে জানান, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেনি। তাকে খুন করা হয়েছে। এই খুনের সঙ্গে জড়িত সামিরা ও তার পরিবার। তার তথ্য পেয়ে তোলপাড় শুরু হয় দেশজুড়ে।
কিন্তু বরাবরের মতোই চুপ ছিলেন সালমানের স্ত্রী সামিরা। সালমান মৃত্যুর দীর্ঘ ২১ বছর পেরিয়ে গেলেও কখনো প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি তিনি। অবশেষে সেই নীরবতার অবসান ঘটল। গতকাল রোববার (১৩ আগস্ট) রাতে এই প্রতিবেদকের মুখোমুখি হন সামিরা। দীর্ঘ সময়ের আলাপচারিতায় তিনি বলেছেন, সালমান শাহের সঙ্গে পরিচয়, প্রণয়, বিয়ে, দাম্পত্য জীবন, সালমানের ফিল্ম ক্যারিয়ার ও তার মৃত্যু নিয়ে অনেক কথা।
সবার আগেই তিনি জানান, এতদিন চুপ করে থাকার কারণ। সামিরা বলেন, ‘ইমনের (সালমান শাহ) কথা ভেবেই আমি কোথাও মুখ খুলিনি। আমাকে যেসব অপবাদ দেয়া হয়েছে সেসব নিয়ে রিঅ্যাক্ট করিনি। কারণ আমার যেখানে কথা বলার দরকার সেখানে আমি কথা বলেছি। বারবার তদন্ত হয়েছে সালমানের মৃত্যু রহস্য নিয়ে। আমাকে তলব করা হয়েছে। আমি গোয়েন্দা, পুলিশ ও র্যাবের কাছে জবানবন্দি দিয়েছি। যখন যে যা জিজ্ঞেস করেছে আমি তার জবাব দিয়েছি। আমার যেখানে যেখানে যেটা ক্লিয়ার করার আমি করে যাচ্ছি। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ক্লিয়ার করেই যাচ্ছি।
এতে আমার কোনো ক্লান্তি বা আপত্তি নেই। কারণ আমি জানি আমি কোনো ভুল করিনি। আমিও সালমানের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত চেয়েছি সবসময়। চেয়েছি প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসা স্বামীকে খুনের অপবাদ থেকে মুক্তি পেতে। আমি জানি ইমন আত্মহত্যাই করেছে। সেদিন আমাদের বাসায় বাইরে থেকে কেউ আসেনি, কেউ বেরও হয়নি। অনেক মানসিক প্রেসারে ছিল সেই সময় ইমন। সে এমন কিছু করে বসবে ভাবনাতেও ছিল না।
ইমন খুন হয়েছে দাবি করে রুবি যেসব কথা বলছেন তার কোনো ভিত্তি নেই। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। এটিও রেজভীর মতো সালমানের মায়ের কোনো সাজানো পরিকল্পনা হতে পারে। এসব কথা প্রেসের কাছে বলতেও আমার সমস্যা ছিল না। কিন্তু আমি নিজেই ইচ্ছে করে প্রেসে আসতে চাইনি।
কেন প্রেসে আসতে চাননি সেই প্রসঙ্গে সামিরা বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তার লাইফটা শুরু হয়েছিল প্রেসকে দিয়ে ইমনের হাত ধরে। ইমন যখন ছিল না আমি আর এই জীবনটা চাইনি। তাকে ছাড়া আমি আর এই প্রেসের মুখোমুখি হতে চাইনি। সবকিছু থেকে বের হয়ে এসে আমি একটা নরমাল লাইফ চেয়েছি। নরমাল লাইফ বলতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকা।’
সামিরা আরও বলেন, ‘তিনটা বছর একা একা কাটালাম। একটা সময় আমি ভেবেছি বিদেশ চলে যাব পড়াশোনা করতে। সেটা আর হয়নি। আমি ইমনের মৃত্যু মানতে পারছিলাম না। তার স্মৃতি নিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাইলাম। তখন খুব প্রয়োজন বোধ করলাম যদি একটি সন্তান আমাদের থাকত! একটা সময় ইমনেরই বন্ধু মোস্তাক ওয়াইজ আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল। আমি তাকে ফিরিয়ে দেই। পরে তার পরিবার ও আমার পরিবারের প্রচেষ্টায় বিয়েটা হয়। আমি এখন ভালো আছি।’
সামিরা তার বর্তমান সংসার নিয়ে বলেন, ‘এখানে আমার তিনটি সন্তান রয়েছে। বড় সন্তান মালয়েশিয়ায় থাকে। আরও দুটি সন্তান রয়েছে আমার। তারা ঢাকার একটি স্কুলে পড়াশোনা করছে।’
তিনি বলেন, ‘যতদিন আমার এই পক্ষের শাশুড়ি বেঁচে ছিলেন আমার পুরনো শাশুড়ি কিন্তু চিৎকার চেচামেচি করেননি। অনেকদিন তিনি এসব নিয়ে কিছু বলতেন না। কারণ ইমনের মা আমার শাশুড়িকে হাড়ে হাড়ে চিনতেন। তারা প্রতিবেশী ছিল। যখনই আমার শাশুড়ি মারা গেলেন তিনি আমাকে নিয়ে নানা রকম ব্লেম দিতে শুরু করলেন নতুন করে। আমার সন্তানদের, আমার স্বামীর, আমার বাবা, মা, বোন ও তাদের পরিবারের যদি কোনো ক্ষতি হয় তবে তার দায় নীলা চৌধুরীকে নিতে হবে।
তার মিথ্যা কথার ফুলঝুড়িতে সালমান ভক্তরা আবেগের বশে আমাকে নিয়ে নানা বাজে কথা ছড়াচ্ছেন। আমার বোনদের ছবি দিয়ে বলা হচ্ছে এটা আমি। আমার বোনদের সন্তানদের দেখিয়ে বলা হচ্ছে আমার সন্তান। এদের কারো কিছু হলে দায়ী হবেন নীলা চৌধুরী।’ সৌজন্যে: জাগোনিউজ