সস্তা শ্রমের সর্বোচ্চ সুবিধা উসুল করে ফুলে ফেঁপে উঠছে চায়নার তৈরি পোশাক খাত। বৃহত্তর জনসংখ্যার দেশটি তার ডেনডং সীমান্তবর্তী উত্তর কোরিয়ার কারখানাগুলোর কাছ থেকে এ সুবিধা নিচ্ছে। যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলছে উল্লেখ করে ১৩ আগস্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
পোশাক তৈরি হচ্ছে উত্তর কোরিয়ায়, লেভেলে লেখা ‘মেইড ইন চায়না’। এ ট্যাগ দেওয়া পোশাকগুলোই পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী।
উত্তর কোরিয়া জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ায় সস্তায় তৈরি পোশাক খাতের এ সুবিধা হাসিলের পথগুলো সব বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও নিষেধাজ্ঞাটি বলবৎ করা হয়েছে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা এবং পারমানবিক বোমা প্রকল্পের পাল্টা জবাব হিসেবে। নিষেধাজ্ঞায় তৈরি পোশাক রফতানির বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত নয় বলেও জানানো হয়।
‘আমরা সমগ্র বিশ্ব থেকে পণ্য সরবরাহের অর্ডার নিয়ে থাকি’, বললেন ডেনডং এর একজন কোরীয়-চীনা ব্যবসায়ী। ডেনডং হচ্ছে চীনের সীমান্তবর্তী একটি শহর। পুরো বিশ্বে কোনঠাসা দেশ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চীনের অধিকাংশ ব্যবসা সম্পন্ন হয়ে এ শহর দিয়েই।
এ বিষয়ে ওখানকার ব্যবসা সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু ইস্যুটির স্পর্শকাতরতা বিবেচনায় তারা নাম প্রকাশ না করার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন।
একজন ব্যবসায়ী বলেছেন, ডেনডংয়ে ডজনেরও বেশি এজেন্ট কাজ করে। যাদের কাজ হচ্ছে যোগানদাতা ও উত্তর কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা এবং রাশিয়ান ক্রেতাদের মধ্যে মধ্যস্থতা করা।
তিনি যোগ করেন- ‘আমাদের সঙ্গে আসলে কারা কাজ করেন, তা আমরা চাইনিজ সাপ্লায়ারদের কাছে জিজ্ঞেস করতে পারি। মূল ক্রেতারা অনেকসময় বুঝতেই পারবে না যে পণ্যটি উত্তর কোরিয়ায় তৈরি হয়েছে। এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর’।
২০১৬ সালে উত্তর কোরিয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে পোশাক শিল্পের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। যার অঙ্ক ৭৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রায়। প্রথম স্থানে ছিল কয়লা এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ। তথ্যটি সরবরাহ করেছে কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সি (কেওটিআরএ)। ২০১৬ সালে উত্তর কোরিয়ার মোট রপ্তানি আয় বেড়েছে ৪.৬ শতাংশ। দেশটির মোট রপ্তানি আয়ের বর্তমান আকার ২.৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এ মাসের শুরুর দিকে জাতিসংঘে পাশ হওয়া নিষেধাজ্ঞায় উত্তর কোরিয়া থেকে কয়লা রফতানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পোশাক খাতের ব্যাপ্তি লাভ উত্তর কোরিয়াকে দাঁড়াতে সাহায্য করছে। ২০০৬ সালের নিষেধাজ্ঞার পর থেকে তারা প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। প্রথমবারের মতো পারমানবিক বোমা পরীক্ষার কারণে তাদের উপর এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। উত্তর কোরিয়ার এই অগ্রগতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, অর্থনৈতিক লাইফলাইন হিসেবে তারা চীনের ওপর কতটা নির্ভরশীল। যারই প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প বেইজিংকে বার বার চাপ দিয়ে যাচ্ছে যেন তারা উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষার রাশ টেনে ধরে।
অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ায় চীনের রপ্তানি প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে অর্ধেক বছরের মধ্যেই। যার পরিমাণ ১.৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার অধিকাংশই পোশাক খাত ভিত্তিক এবং ঐতিহ্যগত শ্রম সংশ্লিষ্ট পণ্য। এর মধ্যে জাতিসংজ্ঞের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা পণ্যগুলো অন্তর্ভূক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চীনা কাস্টমস কর্মকর্তা হুয়ান সঙপিং।
এক্ষেত্রে চীনা সরবরাহকারীরা ফেব্রিকস এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ উত্তর কোরিয়ার কারখানাগুলোতে পাঠিয়ে দেয়। যেগুলো প্রক্রিয়াজাত হয়ে উত্তর কোরিয়ান সীমান্তের কারখানাগুলো থেকে রপ্তানী হয়ে যায় বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা।
সূত্র: রয়টার্স