বাংলাদেশি মেয়েদের ‘হেয়’ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘প্রাণ আপ’ এর প্রকাশিত এক বিজ্ঞাপন চিত্র নিয়ে সমালোচনায় ফেটে পড়েছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রাণের এমন নিম্নমানের বিজ্ঞাপণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়া উচিত বলে মনে করছেন নারী বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান।
আমাদের ভাবনা ও বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে ওই বিজ্ঞাপণ চিত্রটির এক পাশে একটি ছবিতে উপস্থাপন করা হয় টাই পরিহিত পরিপাটি একটি বিদেশি মেয়ের ছবি। এই ছবিটির মেয়ের মতো হওয়াই আমাদের ভাবনা বলে উল্লেখ করা হয় সেখানে।
ছবিটির অন্যপাশে একটি বাংলাদেশি মেয়ের ছবি দেওয়া হয়। আমাদের বাস্তবতা উল্লেখ করে উপস্থাপন করা ওই মেয়েটিকে তুলনামূলকভাবে ‘অপরিচ্ছন্ন’ ও ‘অগোছালোভাবে’ উপস্থাপন করা হয়।
এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশের মেয়ে শিশুদের হেয় করা হয়েছে বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও কমেন্ট করতে থাকেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।
সজিব ঘোষ নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেন, ‘বাণিজ্যের এই বাজারে বার বার বিজ্ঞাপনে লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে; মনস্তত্ব, মানবিকতা, মূল্যবোধ। বাণিজ্যের যাঁতাকলে হারিয়ে যাচ্ছে বিবেক বোধ। সৃষ্টি হচ্ছে কুরুচিপূর্ণ এক সমাজ ব্যবস্থার।’
তিনি লিখেন, ‘কেন বলছি এ কথাগুলো তা পরিষ্কার করা দরকার। আজ দেশের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল এর পণ্য প্রাণ আপের একটি প্রচারণা মূলক ছবি দেখলাম। যেখানে স্বপ্ন আর বাস্তবতার ফারাক বোঝানো হচ্ছে। ভালো কথা, পা মাটিতে রাখা শেখানো খারাপ কিছু না। তাই বলে আমার বোনকে ছোট করে কেন? কেন আমার বোনের অপরিস্কার স্কুলের পোশাকটিকে ‘বাস্তবতা’ বলে আখ্যায়িত করা হলো। তারা কি বোঝাতে চাইল? বাংলার প্রতিটি শিশুর অবস্থা এমন! তারা কি বঝাতে চাইলো, এদেশের শিশুরা লাল টাই পড়ে কল্পনায়?’
মালিহা মরিয়ম নামের অপর এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেন, দেশের নারীদের হেয় করে বিজ্ঞাপনচিত্র প্রচার করে ব্যবসা শুরু করেছে প্রাণ। পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেখানে দেশের নারীরা ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছেন সেখানে প্রাণের এমন রুচিহীন বিজ্ঞাপন সত্যিই ব্যবসায়িক নীতি বিবর্জিত। দেশের মেয়েদের এভাবে উপস্থান করে প্রাণের ব্যবসার ইতি চাই।
শুধুমাত্র ফেসবুক স্ট্যাটাসই নয়, প্রাণের ওই বিজ্ঞাপণের নীচে কমেন্ট করেও সমালোচনা জানান অনেকে।
আলিফ নামের এক ব্যবহারকারী লিখেন, খুবই রুচিহীন বিজ্ঞাপন। সারাদেশের মেয়েদের শুধুমাত্র একটি ছবির মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটি কি আমাদের দেশের মেয়েদের প্রকৃত চিত্র?
এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুধু দেশের গরিব মেয়ে শিশুদেরই নয় বরং সারাদেশের নারীদের হেয় করা হয়েছে বলে মনে করেন নারী বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান।
তিনিবলেন, একটা মেয়ে যদি দেখতে কালো হয় তবে সে জন্ম থেকেই কালো। এটাকে খারাপভাবে উপস্থাপন করার কী আছে? দেশের নারীরা যেখানে পুরুষের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করছে সেখানে এমন বিজ্ঞাপন কখনোই কাম্য নয়।
এলিনা খান বলেন, বাংলাদেশের নারী মানে কখনোই এমনটা নয় যে সে দেখতে আনস্মার্ট কিংবা দেখতে খারাপ হবে। প্রাণের উচিত এই বিজ্ঞাপন সংশোধন করা। তারা যদি এমনটি না করেন তবে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়া প্রয়োজন। যদি তাতেও তারা সংশোধন না করেন তবে সকলের উচিত হবে প্রাণের পণ্য বয়কট করা।
বিজ্ঞাপনের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রাণ-আরএফএলের ডিজিটাল মিডিয়া বিভাগের প্রধান আজিম বলেন, ‘প্রতিমাসে আমাদের প্রায় ১ হাজার ২০০ বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। এটি কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে সে সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। আমি বিজ্ঞাপনটি সরিয়ে নিচ্ছি।’ প্রিয়