Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ram-nathভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন রামনাথ কোবিন্দ। ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃাধীন জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চার (এনডিএ) প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। দলিত সম্প্রদায়, তথা পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর সদস্য হওয়ার কারণে এবং সাধারণ জীবনযাপনের জন্য রামনাথকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করেছিল বিজেপির নেতারা।

পার্লামেন্টের সদস্য ও বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত কলেজিয়ামের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে তিনি অনায়াসে হারিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী মীরা কুমারকে।

chardike-ad

ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন যিনি, সেই নতুন রাষ্ট্রপতি কে এই রামনাথ? যা অনেকেরই হয়তো জানা নেই।

জন্ম ও পরিচয়: ১৯৪৫ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুর দেহাত জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম পারোঙ্খে এক দলিত কোলি পরিবারে জন্ম নেন রামনাথ কোবিন্দ। দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ রামনাথ। তার পিতা একজন কৃষক ছিলেন। তার পিতার নাম মাইকু লাল এবং মাতার নাম কালাওয়াতি। তিনি অবশ্য তার গ্রামের পৈতৃক ভিটেবাড়িটি গ্রামবাসীদের উদ্দেশে দান করে দিয়েছেন- সেটিকে এখন ওই গ্রামে বরাতঘর (বিয়েবাড়ি বা বরযাত্রীদের রাখার জায়গা) হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রশান্ত কুমার নামে এক ছেলে ও সুইটি নামে তার এক মেয়ে রয়েছে।

শিক্ষা জীবন: কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাণিজ্য ও আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবন: রামনাথ পেশায় আইনজীবী। ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি দিল্লি হাইকোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী ছিলেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের স্ট্যান্ডিং কাউন্সিলের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ সালের আগ পর্যন্ত তিনি দিল্লি হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে ১৬ বছর ওকলাতি করেন।

রামনাথ ১৯৭১ সালে দিল্লির বার কাউন্সিলে নথিভুক্ত হন। রামনাথ লক্ষ্ণৌয়ের আমবেদকার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতার অল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের বোর্ড সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতিসংঘে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং ২০০২ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেন। ২০১৫ সালের ৮ আগস্ট তাকে বিহারের রাজ্যপাল (গভর্নর) পদে নিয়োগ করা হয়।

লোকসভার ভোটে কোনও দিন না-জিতলেও রামনাথ কোবিন্দ দু’দুবার ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভার সদস্য হয়েছেন। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত টানা বারো বছর তিনি রাজ্যসভার এমপি ছিলেন।

রাজনৈতিক জীবন: ১৯৯১ সালে বিজেপিতে যোগ দেন রামনাথ। বিজেপিতে যোগদান করার পর তিনি দলিত শ্রেণীর একজন নেতা হিসেবে উঠে আসেন। ১৯৭৭ সালে তিনি তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের ব্যক্তিগত সচিব বা প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবেও কাজ করেছেন।

তিনি দলিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করা বিজেপির ইউনিট ‘বিজেপি দলিত মোর্চা’র সাবেক প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি অল ইন্ডিয়া সমাজের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি দলের জাতীয় মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেন।

উত্তর প্রদেশে দলিত নেত্রী হিসেবে মায়াবতীর যখন দ্রুত উত্থান হচ্ছে, তখন বিজেপি রামনাথ কোবিন্দকে মায়াবতীর পাল্টা দলিত মুখ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল। বছরকয়েক আগেও বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং রাজ্যের দলিত এলাকাগুলোতে নির্বাচনী প্রচারের সময় সব সময় মি কোবিন্দকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন।

রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ: রামনাথ কোবিন্দ হবেন উত্তরপ্রদেশ থেকে নির্বাচিত ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি। সাধারণ জীবনযাপনের জন্য রামনাথকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করেছিল বিজেপির নেতারা। ৬৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি হতে চলেছেন দেশটির ১৪তম রাষ্ট্রপতি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি মিরা কুমার পেয়েছেন ৩৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ ভোট।

আগামী ২৫শে জুলাই ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন রামনাথ কোবিন্দ। তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। মজার ব্যাপার হল, ভারতের সবচেয়ে জনবহুল এই রাজ্যটি থেকে দেশের মোট নজন প্রধানমন্ত্রী এসেছেন – কিন্তু কোবিন্দের আগে এ রাজ্যের কেউ রাষ্ট্রপতি হননি!