প্রবাসে বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিদেশের মাটিতে মারা যাওয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের লাশ প্রতিদিনই আসছে দেশে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ জনের লাশ দেশে আনা হচ্ছে। এরমধ্যে সৌদিআরব থেকেই সবচেয়ে বেশী লাশ দেশে আনা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৫ সাল থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত মোট ৩১,৭১৫ জনের মরদেহ দেশে আনা হয়েছে। এরমধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৬ মাসে মোট ১,৭৫৭ জনের মরদেহ দেশে আনা হয়।
অন্যদিকে ২০০৫ সালে ১২৪৮, ২০০৬ সালে ১৪০২, ২০০৭ সালে ১৬৭৩, ২০০৮ সালে ২০৯৮, ২০০৯ সালে ২৩১৫, ২০১০ সালে ২৫৬০, ২০১১ সালে ২৫৮৫, ২০১২ সালে ২৮৭৮, ২০১৩ সালে ৩০৭৬, ২০১৪ সালে ৩৩৩৫, ২০১৫ সালে ৩৩০৭ এবং ২০১৬ সালে ৩৪৮১ জনের মরদেহ দেশে আনা হয়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছরই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশী মানুষের মৃত্যুর হার বাড়ছে। বিদেশে বাংলাদেশীদের সংখ্যা বাড়ার জন্যই এই পরিসংখ্যান বাড়ছে বলে মনে করেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ন সচিব) মোঃ শফিকুল ইসলাম।
তিনি জানান,‘প্রতি বছরই বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ বিদেশে যাচ্ছেন। তাই বিদেশে বাংলাদেশী লোকও বাড়ছে। যতবেশী লোক বাড়বে ততবেশী মৃত্যুর হার বাড়বে। কোনো স্থানে যদি ৫ হাজার মানুষ থাকে তাহলে সেখানে মারা যাবে কম। যদি ৫ লাখ মানুষ থাকে তাহলে মারা যাবে বেশী। তবে বিদেশে বাংলাদেশী মানুষ মারা যাওয়া দুঃখজনক। কারণ আমরা ইয়ং লোককে বিদেশ পাঠাই। তারা যদি সেখানে মারা যায় সেটাতো আমাদের জন্য শোকের বিষয়।’
বিদেশ থেকে আনা মরদেহগুলোর বেশীরভাগই বিভিন্ন দূর্ঘটনায় মারা যান বলে জানান তিনি। এক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের জন্য তারা তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করেন বলে জানান ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের এই পরিচালক।
তিন বলেন, ‘যারা মারা যায় তাদের কোম্পানি তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেয়। না দিলে আমরা তাদের পক্ষে মামলা করি। অথবা তারা (পরিবার) নিজেরাই মামলা করে। এরপর আদালত সিদ্ধান্ত দেয় ক্ষতিপূরণ পাবে কি না। যেমন অসতর্কভাবে রাস্তা পার হতে গিয়ে কেউ যদি মারা যায় সেক্ষেত্রে তো ক্ষতি পূরণ পাবে না।’
বিদেশ থেকে দেশে মরদেহ আনার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিদেশে যখন কেউ মারা যায় তখন আমাদের কাছে খবর পাঠায়। পরিবারের সদস্যরা বা অন্য কেউ খবর দেয়। এরপর লাশটি তারা দেশে আনবে নাকি ওখানে দাফন করবে তা আমাদের জানার বিষয় থাকে। পরিবার যদি দেশে আনতে চায় সেক্ষেত্রে আমরা মরদেহ দেশে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকি।’
মরদেহ আনার ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট সময় বেধে দেয়া নেই বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘একেক দেশ থেকে লাশ আনতে একেক সময় লাগে। যেমন সৌদি আরব থেকে আনতে দেরি হয়। কারণ তাদের ১০ থেকে ১২টা এজেন্সি আছে যারা এটা তদন্ত করে। তাই সৌদি আরবের ক্ষেত্রে ১ থেকে ২ মাস দেরি হয়। কিন্তু অনান্য দেশ থেকে কয়েকদিনের মধ্যেই আনা যায়।’
বিমানবন্দরে মৃত ব্যক্তির মরদেহ গ্রহণ করার পর তা দাফন করার জন্য পরিবারকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে ৩৫ হাজার টাকা দেয়া হয় বলে জানান মোঃ শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যারা বৈধভাবে বিদেশ যান তাদের ক্ষেত্রে এ টাকা দেয়া হয়। ৩৫ হাজার টাকা দেয়ার পরে আবার মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ৩ লক্ষ টাকা দেয়া হয়।’