Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

sohidজাতীয় দলের পেসার শহীদ ছয় বছরের সংসার জীবনে দুই সন্তানের জনক। প্রথম জন আড়াই বছর বয়সী ছেলে শিশু। তাকে ভীষণ আদর করেন তিনি। স্বজনরা জানান, দ্বিতীয় সন্তান ১১ মাস বয়সী মেয়ে শিশুটিকে তিনি রেখেছেন অনাদর-অবহেলায়।

শহীদের স্ত্রী ফারজানা আক্তার জানিয়েছেন, সন্তানকে কোলে নিতে চাপাচাপি করায় নিজের মায়ের গায়েও হাত তুলেছেন শহীদ। তিনি জানান, গর্ভে দ্বিতীয় সন্তান আসার পর সেটি নষ্ট করতে চেয়েছেন শহীদ। তিনি রাজি না হওয়ায় তার পেটে লাথিও মেরেছেন শহীদ। শারীরিকভাবে নির্যাতনও করা হয়।

chardike-ad

ছয় বছরের সংসারে শহীদ ও ফারজানা আক্তারের সন্তান দুই জন। প্রথমটি ছেলে সন্তান হওয়ায় তিনি ছিলেন খুশি। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তান মেয়ে হওয়ায় স্ত্রীর ওপর শুরু হয় অত্যাচার, নির্যাতন। এক পর্যায়ে ঈদের তিন দিন আগে স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দেন শহীদ। এরপর তিনি মুন্সীগঞ্জে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

মুন্সীগঞ্জ ফিরেই হাতিমারা পুলিশ ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দিতে যান। কিন্তু সেখানে তার অভিযোগ নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঘটনা যেহেতু নারায়ণগঞ্জের সেখানকার স্থানীয় থানা বা আদালতে গিয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে।’

এসব বিষয়ে জানতে ক্রিকেটার শহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে অস্বীকার করেন। আর শহীদের মা ডলি বেগম তার ছেলের দায় অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, তার পুত্রবধূ মিথ্যাচার করছেন।

২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট রাজধানীর সেগুন বাগিচায় অবস্থিত বারডেম জেনারেল হাসপাতালের মা ও শিশু বিভাগে কন্যাসন্তান প্রসব করেন শহীদের স্ত্রী ফারজানা আক্তার।

হাসপাতালের কেবিন নম্বর ২০২-এ চিকিৎসক রুনা লায়লার তত্ত্বাবধানে তিনি টানা ১৪ দিন হাসপাতালে ছিলেন। ক্রিকেটার শহীদ তখন মিরপুর ক্রিকেট একাডেমিতে ছিলেন। কিন্তু এক বারের জন্যও তিনি সন্তানের মুখ দেখার জন্য হাসপাতালে আসেননি। এই সময় ফারজানার সঙ্গে ছিলেন তার মা ও শাশুড়ি।

স্বজনরা জানান, হাসপাতাল বিলের এক লাখ ১০ হাজার টাকার এক পয়সাও পরিশোধ করেননি শহীদ। এরপর ফারজানা তার পাঁচ ভরি স্বর্ণ নারায়ণগঞ্জের এক দোকানে বন্ধক রেখে টাকা এনে হাসপাতালের বকেয়া বিল পরিশোধ করার ব্যবস্থা করান।

শহীদের স্ত্রী ফারজানা বলেন, হাসপাতাল থেকে তিনি নারায়ণগঞ্জ শ্বশুর বাড়িতে ফিরে আসেন। তখন শহীদ ঢাকাতেই। পরে শহীদ তার মাকে ফোন করে বলেন, ‘ফারজানা যদি আমার বাড়িতে থাকে তাহলে কোরবানি ঈদে বাড়ি আসব না, কোরবানিও দেব না।’ পরে শাশুড়ির নির্দেশে দুই সন্তানকে নিয়ে মুন্সীগঞ্জ বাবা বাড়িতে চলে যান ফারজানা।

শহীদ ঈদের পরের দিন স্ত্রী ও সন্তানকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। ফারজানার শাশুড়ি এ সময় মেয়ে সন্তানকে শহীদের কোলে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শহীদ তাকে কোলে নিতে অস্বীকৃতি জানান। শহীদের মা আবারও শিশুটিকে তার কোলে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শহীদ ক্ষেপে গিয়ে নিজের মাকে গালে থাপ্পড় মেরে বসেন। এরপর শহীদ তার মাকে বলেন, ‘আমি বার বার নিষেধ করছি না ওকে কোলে নেব না। কেন বার বার আমাকে কোলে নিতে বলছিস।’

এরপর শহীদ আর কোনো দিন তার ছোট্ট মেয়েকে কোলে নেননি। এমনকি তার জন্য চিকিৎসা বাবদ বা কাপড়চোপড় কেনার জন্য টাকা খরচ করতে অস্বীকার করেন। শিশুটি অসুস্থ হলে ফারজানা তার শাশুড়ির কাছ থেকে অনুনয়-বিনয় করে টাকা-পয়সা নেন।

গত ২৩ জুন ফারজানার দুই সন্তানসহ নারায়ণগঞ্জের বাড়ি থেকে বের করে দেন শহীদ। রবিবার মুন্সীগঞ্জে লোক পাঠিয়ে শহীদ তার ছেলে নিয়ে গেলেও স্ত্রী ও কন্যাকে বাসায় নিয়ে যাননি। ১১ মাসের মেয়ে শিশুকে এবারের ঈদও কাটাতে হয়েছে বাবা ছাড়া।

শহীদের স্ত্রী জানান, ২০১১ সালের ২৪ জুন পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী আগে বেশ ভালোই ছিল। আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝত না। কিন্তু টাকা হওয়ার পর পাল্টে গেছে। অন্য মেয়েতে ভীষণভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছে। নানা সময়ে ফোনে কথা বলার সময় আমার কাছে সে ধরা পড়েছে। ওই মেয়েদের সঙ্গে সে অনৈক্তিক সম্পর্কও স্থাপন করেছে। সেটাও আমি জানি। এর প্রতিবাদ করলে শারীরিকভাবে প্রচণ্ডভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।’