চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদে অভিজাত আবাসিক হোটেল সেন্টমার্টিনে ঢুকে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছেন আলোচিত-সমালোচিত পুলিশ পরিদর্শক মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি ওই হোটেলের চারজন কর্মী এবং ডবলমুরিং থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) সৈয়দ আলমকে পিটিয়েছেন। এসময় তিনি মাতাল অবস্থায় ছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দুই বছর আগে হোটেল থেকে বিনা অপরাধে ছাত্রলীগের এক নেতাকে আটকের পর মারধর করে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন নগরীর সদরঘাট থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়া। বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের পর বর্তমানে তিনি নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনে সংযুক্ত আছেন।
গত জানুয়ারিতে নগরীর খুলশীতে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত একটি গেস্ট হাউস থেকে অপ্রীতিকর অবস্থায় বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষকে আটকের পরও আলোচনায় এসেছিলেন মাইনুল, কারণ সেটির মালিক ছিলেন তিনি নিজে।
সেন্টমার্টিন হোটেলে ঢুকে মাইনুলের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির কথা স্বীকার করে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুকুর রহমান বলেন, ভিডিও ফুটেজে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। পুরো ঘটনা তদন্ত করে ডবলমুরিং থানার ওসি পুলিশ কমিশনার বরাবরে প্রতিবেদন দিয়েছেন। মাইনুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
সূত্রমতে, সোমবার (০৩ জুলাই) গভীর রাত দেড়টার দিকে মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়া হোটেল সেন্টমার্টিনে যান। আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখা হোটেলের চারতলায় ৪১৫ নম্বর কক্ষে অবস্থান করে তিনি মদ পান করতে থাকেন। রাত আনুমানিক ২টার পর আরও মদের অর্ডার দেয়া নিয়ে তার সঙ্গে হোটেলের এক কর্মীর কথা কাটাকাটি হয়। মাইনুল ওই কর্মীকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজের পর মারতে মারতে হোটেলের নিচতলায় অভ্যর্থনা কক্ষে নিয়ে যান।
এসময় হোটেলের আরেক কর্মী তাকে রক্ষা করতে এসে তিনিও মারধরের শিকার হন। ঘটনা দেখে বাইরে থেকে নিরাপত্তা রক্ষীদের একজন দৌঁড়ে আসেন। মাইনুল তাকে দেখে পিস্তল বের করে মেরে ফেলার হুমকি দেন এবং চড়-থাপ্পড় দেন। আনুমানিক ৬০ বছর বয়সী হোটেলের নিরাপত্তা রক্ষীদের প্রধান অভ্যর্থনা ডেস্কের সামনে আসলে তিনিও লাঞ্ছিত হন।
খবর পেয়ে হোটেলের বাইরে থেকে মাইনুলের প্রাইভেট কারের চালক তাকে নিয়ে যাবার জন্য আসেন। তাকেও গালিগালাজ করেন মাইনুল। তবে বিল পরিশোধ করে মাইনুলকে হোটেল থেকে বের করে নিয়ে যেতে সক্ষম হন গাড়িচালক।
আলমের নেতৃত্বে একটি টিম সেন্টমার্টিন হোটেলে যায়। তারা হোটেলে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য গিয়েছিলেন। এসময় ওসি মাইনুল আবারও প্রাইভেট কার নিয়ে হোটেলের সামনে আসেন। একজন নিরাপত্তা রক্ষী দ্রুত গিয়ে এস আই সৈয়দ আলমকে বলেন, ওসি স্যার এসেছেন।
তখন এস আই সৈয়দ আলম হোটেলের লবিতে বসে চা খাচ্ছিলেন। তিনি আয়না দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেন। প্রাইভেট কারের ভেতরে ডবলমুরিং থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম আছেন ভেবে তিনি দ্রুত বেরিয়ে যান এবং ওই গাড়ির সামনে দাঁড়ান। কিন্তু তিনি দেখতে পান, সেখান থেকে বেরুচ্ছেন মাইনুল ইসলাম।
এসময় আকস্মিকভাবে মাইনুল এস আই সৈয়দ আলমের কলার চেপে ধরে বলেন, তুই উঁকি দিছস কেন ? একথা বলেই তাকে চড়-থাপ্পড় দেয়া শুরু করেন। সৈয়দ আলম বারবার নিজের পরিচয় দিয়েও মাইনুলকে নিবৃত্ত করতে পারেননি। মাইনুল তার চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন।
এসময় সৈয়দ আলম উপ-কমিশনারকে (পশ্চিম) ফোন করেন এবং ঘটনার বর্ণনা দেন। উপ-কমিশনার দ্রুত ডবলমুরিং থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিমকে ঘটনাস্থলে যাবার নির্দেশ দেন। রাত সাড়ে তিনটার দিকে ডবলমুরিং থানার ওসি, পরিদর্শক (তদন্ত) শাহাদাৎ হোসেন এবং সেকেন্ড অফিসার নূরুল ইসলাম ও আকবর শাহ থানার একজন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান। এর আগেই অবশ্য মাইনুল ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
মঙ্গলবার আরও দুই দফা হোটেলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও ঘটনার শিকার হোটেলের কর্মীদের বক্তব্য নিয়েছেন। এরপর বুধবার (০৫ জুলাই) সকালে সিএমপি কমিশনার বরাবরে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ পরিদর্শক মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, কি হয়েছে আমি কিছু জানি না। সব আপনারা (সাংবাদিক) জানেন আর মহিউদ্দিন সেলিম স্যার জানেন। উনি আমার স্যার, আমার গুরু। আমি সবসময় উনারে পায়ে ধরে সালাম করি। উনি যেভাবে চাইবেন সেভাবে হবে।
এদিকে মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন সিএমপি কমিশনার। সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) নাজমুল হাসানকে প্রধান করে কমিটিতে ডবলমুরিং জোনের সহকারি কমিশনার এবং নগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন পরিদর্শককে সদস্য রাখা হয়েছে। বাংলানিউজ