ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে এটিএম বুথ। যার মাধ্যমে গ্রাহকরা যেকোনো জায়গা থেকে চটজলদি টাকা তুলতে পারছেন। তবে এবার খাবার পানিও মিলছে এটিএম বুথের মাধ্যমে। নির্ধারিত বুথে এটিএম কার্ড ঢুকালেই পাইপ থেকে বেরিয়ে আসবে পানি। রাজধানী ঢাকাতেই চালু হয়েছে অভিনব এই পদ্ধতি।
রাজধানীর ফকিরাপুল পানির পাম্পে এই বুথ বসিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। আর এটি নির্মাণে সহযোগিতা করেছে ডেনমার্কভিক্তিক কোম্পানি গ্রুন্ডফোজ (Grundfos)। ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ফকিরাপুল ছাড়াও মুগদাতেও আরেকটি বুথের কাজ চলমান রয়েছে। ঢাকা ওয়াসার পাইলট প্রকল্পের আওতাধীন এরকম আরও ২০টি বুথ হবে রাজধানীতে।
ফকিরাপুল পানির পাম্পের এই বুথটির দেখভাল করছেন মো. জুয়েল নামের এক কর্মী। জানতে চাইলে তিনি জানান, গত বছরের ৬ অক্টোবর এটি উদ্বোধন করা হয়। এ এলাকার মানুষের পানির সমস্যা সমাধানে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই বুথ খোলা থাকে।
তিনি জানান, প্রতিদিন প্রায় ৪০০ মানুষ এই বুথ থেকে পানি ক্রয় করে থাকেন। বিকেলের দিকে এখানে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। প্রতি লিটার পনির দাম রাখা হচ্ছে ৪০ পয়সা করে। বর্তমানে ১ হাজার ২ জন কার্ডধারী এই বুথ থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন বলে জানান তিনি।
এটিএম বুথের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করার কারণে পানির অপচয় কম হচ্ছে। আগে অনেকে গোসলের কাজে এখান থেকে পানি সংগ্রহ করতেন। তবে যে কেউ এখন আর সহজেই অতিরিক্ত পানি নিতে পারছেন না, বলেন জুয়েল।
কার্ড সংগ্রহের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জুয়েল জানান, খাবার পানি সংগহের জন্য যে কেউ এই বুথ থেকে এটিএম কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে তাকে দুই কপি ছবিসহ জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হবে। এছাড়া কার্ডের জামানত মূল্য ২০০ টাকা জমা দিতে হবে।
ফকিরাপুল এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হাকিম। বয়স আনুমানিক ৬৫ এর উপরে। এটিএম বুথ থেকে প্রতিদিন পানি সংগ্রহ করেন। আগে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে পানি সংগ্রহ করতেন । তবে এখন আর সেই ঝামেলা নেই। কার্ড পাঞ্চ করে সহজেই পানি সংগ্রহ করা যাচ্ছে। কার্ডে যতক্ষণ টাকা থাকবে ততক্ষণ পানি সংগ্রহ করা যাবে। কার্ডে ২০০ টাকা রিচার্জ করলে ২ মাস চলে যায় বলে জানান তিনি।
আগের তুলনায় ঝামেলা কমলেও পানিতে ময়লা জমে যায় বলে অভিযোগ করেন এ এলাকার আরেক বাসিন্দা কাকলী বেগম। তিনি বলেন, এই পানি বাসায় নেয়ার পর দেখা যায়, পানির নিচে ময়লা জমে গেছে।
ফকিরাপুলের এই প্রকল্পে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন ঢাকা ওয়াসার ইঞ্চিনিয়ার ইমাম হোসেন। প্রকল্পটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অর্থসূচককে বলেন, এটি ঢাকা ওয়াসার একটি পাইলট প্রকল্প। রাজধানীতে এখন দুটি বুথ রয়েছে। একটি ফকিরাপুলে এবং আরেকটি মুগদায়। মুগদা বুথের কাজ এখনও চলমান রয়েছে। পাইলট প্রকল্পের আওতাধীন এরকম ২০টি বুথ হবে রাজধানীতে।
তিনি জানান, রাজধানীর যেসকল অঞ্চলে পানির স্বল্পতা রয়েছে এবং আয়রন আছে সে সকল স্থানে এই বুথ বসানো হবে।
পনিতে ময়লা জমে যায় এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এই অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার পরে আমরা এই পানি ল্যাবে পরীক্ষা করেছি। আমরা তেমন কোনো সমস্যা পাইনি। তবে অনেক সময় কিছু আয়রনের সমস্যা থাকতে পারে; যা সামান্য। পরবর্তী প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে আমরা সেখানে ফিল্টারের ব্যবস্থা করবো। তখন এই সমস্যা আর থাকবে না।