‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আবেদন করা যাবে না’-বিষয়টি চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল না। তাই সবকটি নিয়ম মেনে পূবালী ব্যাংকের ‘ট্রেইনি অ্যাসিসটেন্ট টেলার’ পদে আবেদন করেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দেওয়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মো. হাসান। সেই আবেদন অনুসারে প্রবেশপত্রও পেয়েছিলেন তিনি। তার পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটে।
শুক্রবার (২ জুন) সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ছিল এই পদের পরীক্ষা। কিন্তু দৃষ্টিহীন অজুহাত দেখিয়ে হাসানকে পরীক্ষা দিতে দেয়নি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষার হলের পরিবর্তে হাসানের সময় কেটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে বন্ধুর কক্ষে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ‘ট্রেইনি অ্যাসিসটেন্ট টেলার’সহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় পূবালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ১৬ মার্চ ছিল এই আবেদন গ্রহণের শেষ সময়। বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা উল্লেখ ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই আবেদন করেন মো. হাসানও। পরীক্ষার জন্য যোগ্য বিবেচিত হওয়ায় তার নামে ইস্যু হয় প্রবেশপত্রও।
এদিকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় হাসানের পরীক্ষাকেন্দ্রে সহযোগিতার জন্য শ্রুতিলেখকের প্রয়োজন ছিল। এ বিষয়ে গত রোববারে হাসান ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে তাকে পুনরায় যোগাযোগ করতে বলা হয়। বৃহস্পতিবার (১ জুন) সকালে হাসানের হয়ে তার এক আত্মীয় শ্রুতিলেখকের প্রত্যয়নপত্র, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দেওয়া হাসানের প্রবেশপত্র, তার প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনয়ীয় সব কাগজপত্র নিয়ে ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগে যোগাযোগ করেন। কিন্তু মানবসম্পদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে জানিয়ে দেন, তারা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কাউকে নেবেন না। কারণ ক্যাশের হিসেব-নিকেশের বিষয় আছে। যেটা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানানো হয়।
হাসানের কাছে যখন এই খবর আসে তখন তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। খবরটি তার কাছে ধাক্কা হয়ে আসলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যাবে এমন আশায় দুপুর সাড়ে ১২টার ট্রেনে তিনি ঢাকায় রওনা হন।
হাসান বলেন, ‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ না থাকায় আমি আবেদন করি। আবেদনপত্রে ডিজঅ্যাবল ঘরও পূরণ করি। আমাকে তারা প্রবেশপত্রও দেয়। কিন্তু এতো ঝড়-তুফানের মধ্যে অনেক কষ্ট করে আমি যখন সবকিছু গুছিয়ে এনে কাগজপত্র ব্যাংক কার্যালয়ে পাঠাই তখনই বলা হচ্ছে-তারা কোনো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নেবে না,
তাই পরীক্ষাও দিতে দেবে না। নেওয়া-না নেওয়ার কথা পরে, আমাকে অন্তত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগটা দিতে বারবার অনুরোধ করি। কিন্তু ওই কর্মকর্তা সরাসরি না করে দেন।’
হাসান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বর্তমান সরকারেরও আমাদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। তারপরেও আমাদের প্রতি এমন আচরণ কেনো। প্রতিবন্ধী না নিলে সেটা সার্কুলারে উল্লেখ করে দিতো, আবেদন করতাম না। আমাকে এতো হয়রানির সম্মুখীন হতে হলো, অনেক টাকা পয়সাও খরচ করতে হলো। পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারাটা আমার জন্য অনেক বড় মানসিক ধাক্কা। শুধু আমার জন্য নয়, আমরা যারা প্রতিবন্ধী আছি সবার জন্যই এটা হতাশার। ’
এ বিষয়ে পূবালী ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ইসমত আরা হক বলেন, ‘ট্রেইনি অ্যাসিসটেন্ট টেলার পদে যারা মনোনীত হবেন তারা ক্যাশে কাজ করবেন। কিন্তু দৃষ্টিহীন কোন মানুষের পক্ষে ক্যাশে কাজ করা সম্ভব হবে না। তাই এই পদে পরীক্ষার জন্য আমরা তাকে মনোনীত করিনি। ’
চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আবেদন করতে পারবে না-বিষয়টি উল্লেখ না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সার্কুলারে তো এতকিছু উল্লেখ করা সম্ভব না।