Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

south-korea1দক্ষিণ কোরিয়ার যে অফিসে আমার গবেষণা বিষয়ক চাকরি সে অফিসে এর আগেও আমি বেশ কিছুদিন চাকরি করেছি। ফলে অফিসের অনেক নিয়মকানুনই আমার জানা।

কিন্তু এই অফিসটা আগে ছিলো সুয়ন বলে এক জায়গায় যা রাজধানী সিউল (কোরিয়ায় বলে সোল) থেকে মাত্র ৩০ মিনিটের ড্রাইভিং দূরত্ব। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে এই পুরো অফিসটা ওয়ানজু জেলায় স্থানান্তর করা হয়েছে, যার দূরত্ব সিউল থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার মতো।

chardike-ad

শুধু আমাদের এ অফিসই নয়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে অনেক অফিস বিশেষ করে যেগুলো গবেষণা কাজের সাথে জড়িত তার সবগুলো সিউল ও তার আশপাশের জেলা থেকে পুরো অফিস (অফিস, গবেষণা মাঠ, যন্ত্রপাতি চেয়ার টেবিল যাবতীয় কিছু) ওয়ানজু ও জনজু এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে এবং এই স্থানান্তরের কাজ এখনো চলছে।

এর জন্য যেমন ছিল দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি তেমনি ছিলো কিছু নির্দিষ্ট সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে বাংলাদেশের গাজীপুরের যেসব গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলো যশোর বা খুলনা এলাকায় স্থানান্তরের মতো।

সরকারি অফিসগুলোর বিকেন্দ্রিকরণের অংশ হিসেবে এবং রাজধানী সিউল এর উপর চাপ কমাতে এই স্থানান্তর কাজ করা হয়েছে বা হচ্ছে বলে শুনেছি আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে।

south-korea3বাংলাদেশে এরকম কাজ করলে হয়তো রাজপথে মিছিল মিটিং আর স্লোগানে সরকার পতনের মত অবস্থা তৈরি হয়ে যেতো। যাক, এবিষয়ে হয়তো অন্য দিন বলা যাবে। যেটা বলতে শুরু করেছিলাম সরকারি অফিসের নিয়ম কানুন নিয়ে।

এখানে প্রতি সোমবার- সপ্তাহ শুরুর দিন, নিয়ম হচ্ছে অফিসে গিয়েই প্রথম কাজ হবে যার যার ময়লার ঝুড়ির ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে ডেক্স, ফ্লোর, ল্যাব, সেমিনারকক্ষসহ পুরো অফিস স্পেস পরিষ্কার করা।

খুশির কথা এই যে, একাজে টয়লেটগুলো অর্ন্তভুক্ত নয়! টয়লেট পরিষ্কারের জন্য ভিন্ন লোক আছে, তারা প্রতিদিন একবার করে আসবে, পরিষ্কার করবে, নির্দিষ্ট জায়গা থেকে ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করে চলে যাবে।

অফিস পরিষ্কারের এ কাজে অফিসের বড় কর্মকর্তাও তার অধীনস্ত কর্মীদের সাথে এমনকি সর্বনিম্ন কর্মীর সাথে অংশ নেয়। মোটকথা ওই সময়টায় কেউ বসে থাকবে না। অন্তত নিজের টেবিল বা জানালার আশপাশের এলাকা পরিষ্কার করবে। প্রথম প্রথম একটু দ্বিধা সত্বেও সবসময় সবাই এই কাজটা আনন্দের সাথে করে বলে এখন আমি এটার সঙ্গে খুবই অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

একাজের জন্য প্রতিটা অফিসের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পরিষ্কার করার উপকরণগুলো যেমন ভ্যাকুম ক্লিনার, স্ক্র্যাপার, সুইপার (আমাদের দেশের ঝাঁটা বা ঝাড়ু সদৃশ জিনিস)। বিভিন্ন রকমের ডাস্টবিন যেমন প্লাস্টিক বোতল, ক্যান, কাগজজাতীয় জিনিষ, পলিথিন আলাদা আলাদাভাবে সাজানো আছে। ওখান থেকে সবাই জিনিসপত্র নিয়ে পরিষ্কার করে আবার সেখানে রেখে দিচ্ছে।

আর বিভিন্ন ডাস্টবিনে জমানো ময়লা আবর্জনাগুলো প্রতিদিন যখন বাথরুম টয়লেট পরিষ্কার করা লোক আসে, তারা নিয়ে দূরে অফিসের কেন্দ্রিয় আবর্জনা ব্যবস্থাপনার জায়গায় ফেলে আসে। সেখান থেকে মাঝে মাঝে বড় বড় ট্রাক এসে নিয়ে যায়।

আমি জেনেছি যে সবগুলো ময়লা আবর্জনা রিসাইকেল করে। পচনশীল জিনিস দিয়ে জৈবসার, পলিথিন দিয়ে আবার পলিথিন, কাগজ দিয়ে আবার কাগজ, কাঁচ দিয়ে আবার কাঁচ, ক্যান দিয়ে আবার ক্যান বা টিনের কোন জিনিস বানায়।

south-korea5যা হোক, অফিসের এই পরিষ্কারের কাজ বলা চলে সকাল ৯টার আগেই শেষ হয়ে যায়। যেহেতু সবাই অংশ নেয়, পুরো কাজ করতে ১৫/২০ মিনিটের বেশি লাগে না। আর যেহেতু সকাল ৯টায় ওয়ার্কিং টাইম শুরু হয়, সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে অফিসে কেউ পৌঁছতে না পারলে বুঝতে হবে সে অলস, তাকে দিয়ে কিছু হবে না। যদি কোনোদিন সাড়ে ৮টার পরে বা কাঁটায় কাঁটায় ৯টার ২/৫ মিনিট আগে কেউ অফিসে ঢুকে তো সবাই হা করে তার দিকে তাকিয়ে থাকবে যেন সে ভীষণ অন্যায় করেছে।

সারাদিন কেউ তার সাথে ভাল করে কথাও বলবে না। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কেউ দেরি করে আসলে অফিসে ঢুকেই দেরির কারণ ব্যাখ্যা করবে ও দুঃখ প্রকাশ করবে।

বলছিলাম সপ্তাহের প্রথম দিনের সকালের কথা। পরিষ্কার শেষে সবাই যে যার মতো হাত ধুরে এক কাপ কফি নিয়ে নির্দিষ্ট টিম লিডার বা তত্ত্বাবধায়কের নেতৃত্বে সাপ্তাহিক মিটিং এ বসে যাবে। এই মিটিং এ বেশরিভাগ ক্ষেত্রেই কিছু স্ন্যাকস্, ড্রাইকেক, চকলেট, ফলের তৈরি কেক বা শুকনো কোনও খাবার থাকবেই।

এ মিটিং-এ পুরো সপ্তাহের কী কী কাজ, কে কে কোন কোন কাজ করবে, কে ওই সপ্তাহে কোন দিন ছুটি নিবে ইত্যাদিসহ গত সপ্তাহের কাজের অগ্রগতি, কোনও প্রকল্প বা কাজ বা কোন যন্ত্রপাতি চালাতে সমস্যা থাকলে যাবতীয় কিছু নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হবে এবং একটি নির্দিষ্ট সমাধানও থাকবে।

সত্যি বলতে কি, আমার কাছে এই নিয়মটা দারুণ ভাল লাগে। এতে করে পুরো সপ্তাহের একটা পরিকল্পনা জানা যায়। কারও কোনও কথা থাকলে সে জমিয়ে রাখে সাপ্তাহিক মিটিংয়ে আলোচনা করার জন্য।

এতো গেলো অফিসের ভেতরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার খবর। অফিসের বাইরে ও আশপাশের এলাকা পরিষ্কার করার লোক থাকা সত্ত্বেও প্রতি দুই মাস পর পর একটি নির্দিষ্ট দিনের নির্দিষ্ট সময়ে অফিসের সবাই বেরিয়ে পড়বে। প্রত্যেকের হাতে হাত মোজা, একটি ময়লা সংগ্রহের চিমটা জাতীয় লম্বা হাতলযুক্ত জিনিস আর ময়লা সংগ্রহের ব্যাগ।

সবাই কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে অফিসের বাইরের রাস্তা আশপাশের এলাকা, পার্কিং এলাকা, বাগান, মোটকথা পুরো অফিসের সম্পূর্ণ সীমানায় সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ময়লা সংগ্রহ করবে। একাজে অফিসের ডাইরেক্টর জেনারেল নিজেও নেমে পড়েন দেখে অবাক হয়ছি। দেখেছি প্রতিদিন দুপুরের খাবারের সময় ডাইরেক্টর জেনারেলকে দেখেছি সাধারণ কর্মীদের মত লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার সংগ্রহ করতে।

এই পরিচ্ছন্ন কাজে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তেমন কোন ময়লা আবর্জনা পাওয়া যায় না বললেই চলে। কারণ বেশিরভাগ কোরিয়ান লোকই নির্দিষ্ট জায়গা ব্যতীত ময়লা ফেলে না। যদি কেউ কোন আবর্জনা পায়, এরকম কাড়াকাড়ি লেগে যায় কে সেটা তার ব্যাগে পুরবে। কারণ এটা ভাবা হয় যে, যে যত বেশি ময়লা আবর্জনা তার ঝুঁড়িতে তুলতে পারবে সে তত বেশি কাজ করেছে বলে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

মোট এক ঘণ্টার এ অভিযান ৩০ মিনিটে শেষ হয়ে যায়। বাকি সময়টুকু নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এতে করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও বোঝাপড়টা বাড়ে। সারাদিন অফিসের কাজে একটু ভিন্নতা আনে এই এক বা আধঘণ্টার পরিচ্ছন্ন অভিযান। এর আগে আমি অনেকবার এই পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছি।

এবার কোরিয়া আসার প্রায় মাসখানেক পরে আমার সহকর্মীদের একজন বলল পরিচ্ছন্ন অভিযানে যেতে হবে। আমি তো ভেবেছি এটা আমাদের অফিসের আশপাশের এলাকা। কিন্তু সহকর্মীটি অর্ধেক ইংরেজি অর্ধেক কোরিয়ানে বলল যে, এখান থেকে প্রায় ৭০/৮০ কিলোমিটার দূরে ‘মাইসান’ নামক জায়গায় যেতে হবে। এখানে বলে রাখি ‘মাইসান’ শব্দের অর্থ ঘোড়ার কানের মতো দেখতে পাহাড়।

সত্যি সত্যিই ওই জায়গায় একটা উঁচু পাহাড় আছে যা ঘোড়ার কানের মতো দেখতে। যাহোক, আমি ধরে নিলাম সহকর্মীটি ভাল করে বলতে পারছে না বা বোঝাতে পারছে না। তখন ভাল ইংরেজি বলা আরেক সহকর্মীর কাছে বিষয়টা জানতে চাইলে সে জানাল যে, হ্যাঁ ঠিকই, আমরা একটি প্রত্যন্ত গ্রামে যাব। সেখানে একটা ছোট সরু নদীও বয়ে গেছে। ওই এলাকার মানুষদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের ডিভিশনের সবাই ওখানে যাবে।

তারপর সেই দিনটি এল। যতদূর মনে পড়ে এপ্রিলের ১৮ তারিখ। তখন কোরিয়ায় চলছে চেরি ফুল দেখার মহোৎসব। আর আমরা যাচ্ছি কিনা গ্রাম পরিষ্কার করতে, গ্রামের মানুষদের পরিচ্ছন্ন বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে। আগে থেকেই সব ঠিক করা ছিল কে কোন্ দলে যাবে। আমাদের ডিভিশনের বিভিন্ন টিম লিডার তাদের দলের লোকদের নিয়ে গাড়িতে করে যাত্রা শুরু করলেন।

south-korea2সব মিলে ৪৩ জন মানুষ। টুপি, হাতমোজা, পলিব্যাগ, ময়লা সংগ্রহের চিমটা ইত্যাদি সরঞ্জামাদি আগেই প্রস্তুত করা হয়েছিল। প্রায় ১ ঘণ্টা ড্রাইভিংয়ের পর আমরা কোরিয়ার একেবারে এক অজপাড়া গাঁয়ে পৌঁছলাম। যদিও সে গ্রামটা বাংলাদেশের যেকোনো উপজেলা সদরের চেয়েও উন্নত ও ভাল বলে আমার মনে হয়েছে। আমাদের ডিভিশনের ডাইরেক্টর আগেই কথা বলে রেখেছিলেন ওই এলকার নেতাদের সাথে।

আমার কাছে মনে হয়েছে বাংলাদেশের ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বা চেয়ারম্যান টাইপের লোক হবেন উনারা। প্রথমে আমাদের ডিভিশনের সবার পরিচয় পর্ব শেষে স্থানীয় নেতারা আমাদেরকে সংক্ষিপ্ত মৌখিক বক্তব্য দিয়ে অভ্যর্থনা জানালেন বলে মনে হলো। কারণ কোরিয়ান ভাষা খুব কমই বুঝি, কেবল ইশারা ঈঙ্গিত থেকে অনুমান করলাম। তারপর শুরু হলো আমাদের পরিচ্ছন্ন অভিযান।

গ্রামের রাস্তা, বাড়ির আশপাশ, ড্রেন, নদী, ছোটখাট বাগান এসবে পড়ে থাকা পলিথিন, কাগজ, ক্যান, প্লাস্টিক বোতল, কাঁচ ও লোহা জাতীয় কোন জিনিস ইত্যাদি সংগ্রহের কাজ চলল প্রায় এক ঘণ্টা। সত্য কথা হলো আমাদের অফিসের আশপাশের তুলনায় অনেক বেশি ময়লা-আবর্জনা পাওয়া গেল। এসব সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বড় বস্তার মধ্যে ভরে স্তুপ করে রাখা হলো।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে ভালো ইংরেজিতে কথা বলতে পারা সেই সহকর্মীকে জিজ্ঞেস করলাম এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান সম্পর্কে। সে জানাল কোরিয়ার প্রতিটি সরকারি চাকরিজীবী জনগণকে ভলেন্টিয়ার সার্ভিস দিতে বদ্ধপরিকর। কোরিয়ার শহরগুলো দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় গ্রামগুলো উপেক্ষিত হচ্ছে। ফলে গ্রামে কেবল বয়স্কলোক ছাড়া কোন যুবক-যুবতী বা ছোটো বাচ্চারা থাকে না বললেই চলে।

তাই গ্রামকে ভালবাসা ও গ্রামের সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য ২০১৫ সাল থেকে সব সরকারি অফিসের চাকরিজীবীরা বছরে অন্তত একবার কোন গ্রামে গিয়ে সেবামূলক কাজ করবে। যেমন কৃষি/ফরেস্ট্রি বিষয়ের লোকেরা পরিচ্ছন্নতা, মাটির স্বাস্থ্য, বৃক্ষ রোপন, ডাক্তাররা স্বাস্থ্য বিষয়ক কোন কার্যক্রম, ইঞ্জিনিয়াররা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ বা দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা যেমন অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প, বন্যা বা ওই জাতীয় কোন কার্যক্রম ইত্যাদি করতে পারে।

আমাদের অভিযান চলাকালে স্থানীয় নেতারা আমাদের প্রত্যেকের জন্য একটি করে জুসের ক্যান সরবরাহ করলেন। কার্যক্রম শেষে স্থানীয় নেতাদের সাথে ‘মাইসান’ পাহাড়ের সামনে গ্রুপ ছবি তোলা হল এবং স্থানীয় নেতাদের অফিসে কিছু সংক্ষিপ্ত আলোচনা হল যার বেশিরভাগ কথাই ছিল ধন্যবাদজ্ঞাপন বিষয়ক।

south-korea4এসব শেষ করে আমাদের কর্মস্থল ফেরার পালা শুরু হলো। আবারো প্রতিটি টিম লিডারদের নেতৃত্বে গাড়ি ছেড়ে দিল। পথের মধ্যেই ১২টা বেজে গেল। একটা স্থানীয় রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাওয়া হলো, তবে সবাই টাকা শেয়ার করে। আসার পথে বারবার আমার সামনে ভেসে উঠছিল বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জের দৃশ্য। কোরিয়াতে সরকারি অফিসের লোকেরা গ্রামে গিয়ে পরিচ্ছন্ন অভিযান চালাচ্ছে তাদের সেবামূলক কাজের অংশ হিসেবে। অথচ বাংলাদেশে গ্রামের লোকগুলো সরকারি অফিসে গেলও নূন্যতম সেবাটুকুও পায় না।

বাংলাদেশের কিছু কিছু সরকারি অফিসে গেলে নিচে উপরে তাকানো যায় না এমন অবস্থাও চোখে পড়ে। ঝুলঝাল, ধুলো ময়লা ভর্তি থাকে, এলোমেলো ফাইলগুলো যেখানে সেখানে পড়ে থাকে, কোনো কোনো চেয়ার-টেবিলে তো হাতও রাখা যায় না।

ধুলো ময়লার জন্য নষ্ট কাগজপত্র যেখানে সেখানে পড়ে থাকে। অফিস বা সংস্থাগুলোর হয়ত কিছু ঝাড়ুদার আছে। হয়ত ঝাড়ুদার ঠিকমত কাজ করে না অথবা যে দুয়েকজন ঝাড়ুদার বা পরিচ্ছন্নতা কর্মী, যারা আছেন তারা এতো বেশি কাজ শেষ করতে পারে না।

এটাও অসম্ভব নয় যে, পরিচ্ছন্ন কাজ সুষ্ঠুভাবে করার সেরকম উপযুক্ত, আরামদায়ক ও গতিশীল উপকরণ বা যন্ত্রপাতিও ঠিকমতো নেই। তাছাড়া ঝাড়ুদার যেহেতু আছে, আমি অফিসার আমি পরিষ্কার করতে যাব কেন- এই মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

ফেরার পথে আমার বারবার মনে হচ্ছিল আমরাও কি কোরিয়ার মত গ্রামকে ভালবাসতে পারি না? এরকম একটি উদ্যোগ কি খুব বড় বা অসম্ভব কিছু যা বাংলাদেশে করা যাবে না?

আমি তো একজন বাংলাদেশি, আমি কোরিয়া এসে করতে পারলে বাংলাদেশে পারব না কেন? আমাদের শুধু দরকার সেই উদ্যোগটা, আর সৃষ্টিকর্মী অভিনব ধারণা। হোক না সেটার শুরুটা কেবল সরকারি অফিসগুলো দিয়েই।

লেখক: দুলাল চন্দ্র (পোস্ট ডক্টরাল ফেলো, পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি ডিভিশন, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হর্টিকালচারাল এন্ড হার্বাল সায়েন্স, রুরাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, দক্ষিণ কোরিয়া)
ইমেইল: dchandrajp@gmail.com

সৌজন্যেঃ বিডিনিউজ