ঈদের দিন দুপুরে গ্রাম থেকে মা ফোন করেছে ছেলের কাছে। দেখুন কত বড় মিথ্যে কথা বলে এই প্রবাসী ছেলেটা।
ছেলে: হ্যালো মা কেমন আছো?
মা: আমরা ভাল আছি বাবা তুই ভাল আছিস?
ছেলে: মা আমিও ভাল আছি
মা: বাবা আজ তোমাদের ঐখানে না ঈদের দিন।
ছেলে: (একটু অবাক হয়ে বলে) ঈদ আইজগা মা! হ মা আইজগা তো ঈদের দিন।
মা: বাজান তোমার পাঠানো টাকায় বাড়ির সবাই নতুন জামা কাপড় জুতা কিনছে আর ঈদের জন্য অনেক বাজার করছে। সবাই নতুন কাপড় পইরা নামাজ পড়ছে। এখন সবাই খেতে বসছে। আইজ কি তোমগো কাজে ছুটি দিছে? তুমি কি রান্না করছো এই ঈদের দিনে।
ছেলে: মা সবাই নতুন জামা পইড়া নামাজ পড়ছে শুইনা ভিষন খুশি হইছি। আর একসাথে খাইতে বসছো এইটা তো অনেক আনন্দের কথা। (ভাবছে আজ ডিউটি করছে শুনলে মা কষ্ট পাবে। তাই মাকে বুঝতে দেবেনা সে আজও ডিউটি করছে তাহলে সবার মন খারাপ হয়ে যাবে। হয়তো সবার ঈদটাই মাটি হয়ে যাবে। তাই কিছুতেই বুঝতে দিবেনা সে ডিউটি করছে)। মা আইজ আমগো সারাদিনের ছুটি দিছে। গতকাল বাজার থাইকা মুরগী আর গরুর মাংস সাথে পোলায়ের চাউল কিন্না আনছিলাম, আজ সেগুলি রান্না করছি, এখন খামু।
মা: বাবা তুমি এখনও খাও নাই তাড়াতাড়ি খাও। পড়ে ঠান্ডা হইয়া গেলে খাইয়া মজা পাইবা না। তাছাড়া তুমি তো ঠান্ডা খাবার খাইতে পারোনা
ছেলেঃ মা আমি এখনই খাইতাছি। তুমি খাইছো মা।
মাঃ বাজান এমন একটা খুশির দিন তুমি খাইছো কিনা না যাইনা আমি কেমনে খাই মা হইয়া বাজান তুমি মোবাইলটা মুখের সামনে রাইখা খাইতে থাকো মায় তোমার খাওয়ার আওয়াজ শুইনা তারপর নিজে খামু।
ছেলেঃ (আজ ঈদ হলে কি হবে প্রবাস জীবনে ঈদ চাদেঁর কোন ছুটি নাই প্রতিদিন ডিউটি বাধ্যতামুলক, কিন্তু মাকে তো আর সেই কথা বলতে পারবে না। তাই মায়ের মন রক্ষা করতে গিয়ে শেষে কাষ্টমারের ঝুঠা প্লেট থেকে কিছু খাবার মুখে দিয়ে চিবুচ্ছে আর দুই চোখ বেয়ে অঝড়ে অশ্রু বেয়ে পরছে কান্না জড়িত কন্ঠে মাকে বলতেছে) এই যে মা আমি খাইতাছি তুমি আমার খাওয়ার শব্দ পাইতাছো না মা। দারুন স্বাদ হইছে মা আইজগার রান্নাডা ঠিক যেন তোমার হাতের রান্না মা।
মা: হ বাজান তোমার খাওয়া শব্দ পাইতাছি(গর্ভধারীনী তাই বেশ বুঝতে পেরেছে যে ছেলে তার কাদঁছে) বাজান তুমি কি কানতাছো?
ছেলে: না মা আমি কান্দিনা মজার খাবারটায় ঝাল একটু বেশি দিছি তো তাই গলায় একটু ঠেকছে এমন খুশির দিনে আমি কি কানতে পারি মা। তুমি শুধু শুধু টেনশন কইরো না মা। (ছেলে কিছুতেই আর কান্না চেপে রাখতে পারবে না যেনে শেষে মা কে বলছে)। মা গো খাওয়া শেষ কইরা তোমারে কল দিমু
এই ফাকে তুমিও খাইয়া লও। এই বলে ছেলে আর একটা কথাও না বাড়িয়ে ফোনটা কেটে দিয়ে শিশুর মতো হাউমাউ করে কাদঁতে থাকে।
হায়রে প্রবাসী! পরিবারের দশজনের মুখের হাসির জন্য ঝুঠা প্লেটের খাবার খেয়ে বলে ঠিক যেন তার মায়ের হাতের রান্না খাচ্ছে। কত্তোবড় মিথ্যাবাদী এই প্রবাসীরা! আর আমরাও কতো বোকা তাদের এই কথা অবলিলায় বিশ্বাস করে যাচ্ছি। ভাবছি বিদেশ মানেই রাজকীয় জীবন। সত্যিই কি প্রবাস জীবনটা রাজকীয়, না মনকে মিথ্যের আবরণে ডেকে সবার মুখে হাসি দেয়ার অক্লান্ত চেস্টা?