বেলজিয়াম সরকারের আহ্বানের পরে উত্তর কোরিয়ার ৩টি ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে ব্রাসেলসভিত্তিক আন্তঃব্যাংক ম্যাসেজিং সিস্টেম সুইফট। দেশটির বিরুদ্ধে আরোপিত জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার আওতায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক সিরিজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পরপরই এ উদ্যোগ নেয়া হল।
বেলজিয়ামের পররাষ্ট্র দফতর উত্তর কোরিয়ার সিরিজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে ‘তীব্র উস্কানি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর পরপরই দেশটির সরকার জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা মেনে দেশটির ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার জন্য সুইফটের প্রতি আহ্বান জানায়।
এর ফলে উত্তর কোরিয়ার ইস্ট ল্যান্ড ব্যাংক, কোরিয়া ডায়েসং ব্যাংক ও কোরিয়া কোয়াংসং ব্যাংকিং গ্রুপ নামের ৩টি ব্যাংক সুইফটের সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। ইস্ট ল্যান্ড ব্যাংকের নামে ২০১৩ সালে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জাতিসংঘ। বাকি দুটি ব্যাংকের নাম গত বছর কালো তালিকাভুক্ত হয়। ২০১১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সুইফটের সেবার আওতায় ছিল।
গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট দেয়। এতে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ায় নিবন্ধিত কোনো ব্যাংকের সঙ্গে কোনো কোম্পানি লেনদেন করলে, তা জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। এজন্য নিয়ম মেনে শাস্তি পেতে হবে। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুমতি থাকলেও তা গ্রাহ্য হবে না।
রিপোর্টে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা উত্তর কোরিয়ার ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কোন কোন কোম্পানি লেনদেন করতে পারবে তা ঠিক করার এখতিয়ার শুধুমাত্র জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের হাতে থাকবে। কোনো দেশের সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। যদিও এতদিন সুইফট এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে ছিল।
ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) মুখপাত্র জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এ রকম নিষেধাজ্ঞার ব্যবস্থা জাতিসংঘের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই সুইফটও এ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলবে।
গত সোমবার (৬ মার্চ) সকালে চীন সীমান্তের নিকটবর্তী তংচ্যাং-রি অঞ্চল থেকে জাপান সাগরে পর পর ৪টি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পরীক্ষাকৃত ক্ষেপণাস্ত্রের ৩টি প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জাপানের বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকায় (ইইজেড) গিয়ে পড়ে। জাপানে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে সম্ভাব্য আক্রমণের জন্য এ পরীক্ষা চালানো হয় বলে মনে করা হচ্ছে।
পর দিনই জরুরি বৈঠকে বসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য। নিন্দা জানানো হয় দেশটির সিরিজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার। ২০০৬ সালে পিয়ংইয়ংয়ের প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর এখন পর্যন্ত দেশটির উপর ৬ দফায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নিরাপত্তা পরিষদ। নিষেধাজ্ঞা-অবরোধ সত্ত্বেও একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। এর মধ্যে গত বছর সেপ্টেম্বরে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে।