ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতাগ্রহণের পর বিতর্কিত নির্বাহী আদেশের কারণে উৎকন্ঠা আরো বেড়েছে সারা বিশ্বে। দক্ষিণ কোরিয়াও ট্রাম্প যুগে যুক্তরাষ্ট্রের কোরীয় নীতি কি হতে পারে তা নিয়ে হিসাব নিকাশ শুরু করেছে। নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প কোরিয়া বিরোধী যে সব বক্তব্য রেখেছিলেন তা যদি আসলেই বাস্তবায়ন করেন তাহলে কোরিয়ার জন্য অন্য এক অধ্যায় অপেক্ষা করছে। তাই দীর্ঘদিন থেকে যুক্তরাষ্ট্র যে কোরীয় নীতি অনুসরণ করে আসছে তাতে যেন ট্রাম্প বড় ধরণের পরিবর্তন না আনেন তার জন্য ওয়াশিংটনে সিউলের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়।
নির্বাচনী প্রচারণাকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ায় মোতায়ন করা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে যথেষ্ট অর্থ না দেয়ার জন্য দক্ষিণ কোরিয়াকে দায়ী করে। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন মার্কিনীদের ঘাড়ে না চড়ে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যেন পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথ বেছে নেয়। যদিও উভয় দেশ তার পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করে। ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়াকে মার্কিন নেতৃত্ব ও খরচে গঠিত সামরিক ব্যবস্থার উপর বিনামূল্যে সওয়ারি হিসাবে অভিযুক্ত করে আসছে। যদিও দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন সেনাদের খরচের ৪০% সিউল বহন করছে। ট্রাম্প চায় ধনী দেশ হিসাবে দক্ষিণ কোরিয়া খরচের সিংহভাগ বহন করুক। ট্রাম্পের এই নানা বৈরী মন্তব্যের মাঝে সিউল উত্তর কোরিয়ার পরমাণু হুমকির কারণে বেশ উৎকন্ঠিত হয়ে পড়েছে।
নববর্ষ উপলক্ষে দেওয়া বক্তব্যে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বলেছেন তাঁর দেশ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালেষ্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার দ্বারপ্রান্তে। তাছাড়া গত বছর পিয়ংইয়ং কয়েক দফা সল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল। ২০০৬ সাল থেকে পরমাণু পরীক্ষা চালিয়ে আসছে উত্তর কোরিয়া। গত সেপ্টেম্বরে পঞ্চমবারের মত সর্বশেষ পরমাণু পরীক্ষা চালায়। উত্তরের ঘন ঘন পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর ফলে দক্ষিণ কোরিয়া প্রতিনয়ত উত্তর কোরিয়ার থেকে পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভয়ে আতঙ্কগ্রস্থ অবস্থায় আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তরের ক্ষেপণাস্ত্র দক্ষিণের সব অঞ্চলে আঘাত হানতে সক্ষম। তাই সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাড মোতায়নে পাকের রক্ষণশীল সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্মত হয়। কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সব হিসাব-নিকাশ উলট-পালট হয়ে গেছে।
উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে যেকোন সময় আন্ত:মহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর ঘোষণা আসার পর এই মাসের শুরুর দিকে দক্ষিণ কোরিয়া সফরে এসেছিলেন ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেমস ম্যাটিস। সফরকালে তিনি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, পিয়ংইয়ং এর যে কোন পরমাণু হামলার কার্যকর ও বিধ্বংসী জবাব দেওয়া হবে। কিন্তু ম্যাটিসের উপর কতটা আস্থা রাখাতে পারবে সিউল তা প্রশ্নাতীত নয়। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিকে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তাঁর আপত্তি নেই বলে জানান । যদিও ওবামা কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু শক্তি মুক্ত করার পূর্বশর্ত ছাড়া আলোচনায় বসতে রাজি ছিল না।
এছাড়া থাড মোতায়ন নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভক্ত মত রয়েছে। কারণ থাড মোতায়ন নিয়ে চীন ও রাশিয়ার জোরালো আপত্তি রয়েছে। উত্তর কোরিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা চুক্তিকে কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে বলে হুশিয়ারি দিয়ে আসছে। বিরোধী উদারপন্থী ডেমোক্রেটরা মনে করে থাড মোতায়ন হলে দক্ষিণের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার চীন অর্থনৈতিক প্রতিশোধ নিতে পারে। তারা মনে করে, অবরোধ ও থাড মোতায়নের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করা সম্ভব নয়। রক্ষণশীলদের বিরুদ্ধে গিয়ে বাম ঘরনার উদারপন্থীরা উত্তর কোরিয়ার সাথে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা আরো বাড়াতে চায়। কিন্তু রক্ষণশীল সরকার বলছে, কেসং ফেক্টরি পার্ক থেকে পাওয়া নগত অর্থ পিয়ংইয়ং পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করছে।
উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির সাথে রক্ষণশীল সেনুরি পার্টির মধ্যে নীতিগত যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির শাসন আমলে (১৯৯৮ থেকে ২০০৮) কিম দে জং সানসাইন পলিসি নামক এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন যাতে করে দুই কোরিয়ার মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হয়। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমন করে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান নিশ্চিত করতে কিম দে জং কোরীয় যুদ্ধের পর প্রথম উত্তর কোরিয়া সফর করেন। কোন শর্ত ছাড়া উত্তর কোরিয়ার সীমান্তবর্তী শহর কেসং এ দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থায়নে ফেক্টরি পার্ক গড়ে তুলেন। দক্ষিণ কোরিয়া মনে করেছিল দুই দেশের মাঝে অর্থনৈতিক বিনিময় বাড়লে পারষ্পরিক অবিশ্বাস কমবে, সেই সাথে তা বিভক্ত কোরিয়াকে একীভূত করতে সাহায্য করবে। কিন্তু উত্তর কোরিয়া তাদের পারমানবিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখায় কিম দে জাং এর প্রচেষ্টা আলোর মুখ দেখেনি।
ট্রাম্প-যুগে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে সামরিক ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করার মত শক্ত নেতৃত্ব দক্ষিণ কোরিয়ার হাতে এখন নেই। নজিরবিহীন গণ-আন্দোলনের মুখে সংসদ প্রেসিডেন্ট পাককে অভিসংশন করার কারণে দক্ষিণ কোরিয়ায় নেতৃত্ব শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। জনসমর্থন না থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন রক্ষণশীলদের পক্ষে শক্ত কোন পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়।
অভিসংশিত হওয়া প্রেসিডেন্ট পাকের দূর্নীতি কেলেংকারীর ফলে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী ডেমোক্রেটিক দল থেকে মোন জে ইন এর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভবনা রয়েছে। মোনের মতে, শুধু অবরোধের মাধ্যমে পরমাণু উন্নয়নকে বন্ধ করা সম্ভব নয়। মোন চায় তাঁর দেশের উচিত ওয়াশিন্টনের সাথে এমনভাবে সম্পর্ক রক্ষা করে চলা যাতে সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশিদার চীনের বিরাগবাজন হতে না হয়। ধারণা করা হচ্ছে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে থাড মোতায়নের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারে সিউল।
বাণিজ্যিকভাবেও স্বস্তিতে নেই দক্ষিণ কোরিয়া। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার করা দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তিকে ‘জব-কিলিং’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বারবার বলে আসছেন এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ধ্বংসাত্মক ও অন্যায্য। তাঁর মতে, এই চুক্তির ফলে আমেরিকানরা ১ লক্ষ চাকরি হারিয়েছ, বিশেষ করে অটো-ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে। ট্রাম্প যে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের করা দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তিকে পুনর্বিবেচনা করবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, যার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সিউলের বাণিজ্যিক স্বার্থও সীমিত হয়ে আসতে পারে।
মূলত ট্রাম্প নানা মন্তব্যের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র দক্ষিণ কোরিয়াকে শুধু বাণিজ্যিকভাবে হতাশা করেনি, উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক হুমকির বিরুদ্ধে আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের আকুন্ঠ সহায়তা অব্যাহত থাকবে কিনা সেই বিষয়েও স্নায়ুচাপে ফেলেছে। মূলত ট্রাম্পের উপর সিউলের হতাশা ও উদ্বিগ্নতা কমাতে নবনিযুক্ত মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস দক্ষিণ কোরিয়ায় ঝটিকা সফর করেছেন। জেমস ম্যাটিস পিয়ংইয়ং এর সামরিক হুমকির বিরুদ্ধে সিউলের পাশে থাকার কথা বললেও সামরিক ও বানিজ্যিক চুক্তির ব্যাপারে ট্রাম্পের নীতির কোন পরিবর্তনের ইংগিত দেননি। এতে সিউল বাহ্যিকভাবে কিছুটা স্বস্তিবোধ করলেও খুব বেশী আশ্বস্ত হতে পেরেছে বলে মনে হয় না।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে যুক্তরাষ্ট্র সফর করে ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করেছেন। ট্রাম্প যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু হুমকির মোকাবেলায় জাপানের পাশে ১০০% থাকার ঘোষণা দেন। এটি কূটনৈতিক বক্তব্য যদিও সামরিকভাবে চীনকে মোকাবেলা করতে পূর্ব এশিয়ায় জাপানের প্রয়োজনীয়তা ওয়াশিন্টনের রয়েছে। ট্রাম্পের মূল এজেন্ডায় বাণিজ্যিক স্বার্থ থাকায় এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী মিত্র দেশদ্বয়ের সাথে ট্রাম্পের বুঝাপড়া কেমন হবে তা বুঝতে আরো অপেক্ষা করতে হবে। তবে এ কথা হলফ করে বলা যায় যে, ট্রাম্প যুগে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া আগের মত একচেটিয়া সহযোগিতা পাবে না। কারণ পারমাণবিক অস্ত্র ও আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন থেকে পিয়ংইয়ংকে নিভৃত করতে ট্রাম্প প্রশাসন উত্তর কোরিয়ার সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় যেতে পারে। তাছাড়া ট্রাম্প-আবের বৈঠকের সময় উত্তর কোরিয়া নতুন ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে গত ১২ ই ফেব্রুয়ারী, যা ট্রাম্পের কাছে কিম জং উনের স্পষ্ট বার্তা বহন করে। এছাড়া উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রেও পরমাণু হামলার হুমকি দিয়ে আসছে। কিন্তু এই হুমকি মোকাবেলায় পিয়ংইয়ং এর উপর আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা কোন কাছে আসেনি। পিয়ংইয়ং অল্প সময়ের মধ্যে আন্তঃমহাদেশী ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা অর্জন করতে পারে যা যুক্তরাষ্ট্রের ভুমিতে আগাত হানতে সক্ষম হবে। এই সব কিছু বিবেচনা করলে ট্রাম্প আগে তাঁর নিজের দেশের নিরাপত্তার কথা ভেবে বাস্তবে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের পক্ষে খুব বেশী মাখামাখি করার সম্ভবনা কম।
ট্রাম্পের ক্ষমতাগ্রহণের পর নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো আরো বেশী শঙ্কিত করে তুলেছে দক্ষিণ কোরিয়াকে। ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকে “মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন” স্লোগান দিয়ে আমেরিকান জাতীয়তাবাদের জয়গান গেয়ে চলছেন। ‘আমেরিকা ফাস্ট’, ‘বাই আমেরিকা, হায়ার আমেরিকা’, এই সব স্লোগান মূলত মুক্তবাণিজ্য চুক্তি বাতিলসহ মিত্র দেশগুলোকে দেওয়া সামরিক সহযোগিতা কর্তনের নির্বাচনী অঙ্গিকার পূরণের পূর্বাভাস। তাঁর এই সব উগ্র জাতীয়তাবাদী স্লোগানে যে কয়টা দেশ সবচেয়ে বেশী আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছে তার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান অন্যতম কারণ এই দেশদ্বয়ের নিরাপত্তার চাবি যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। তাই ট্রাম্পের অনুগ্রহ পেতে এই দুই দেশকে বেশী তৎপর হতে দেখা যাচ্ছে। ইরান, পাকিস্থান ও চীনের মত কড়া জবাব দেওয়ার মত সামর্থ্য এদের নেই। ট্রাম্প মিত্র দেশদ্বয়ের দূর্বলতাকে নিজ দেশের স্বার্থে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে। অর্থাৎ, নিরাপত্তা দেওয়ার শর্তে যুক্তরাষ্ট্রকে অধিক পরিমাণ অর্থ পরিশোধের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে চাপ দিবে ট্রাম্প। এতে তাদের মধ্যকার সম্পর্কে শীতলতা আসতে পারে যা দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে মার্কিন নির্ভরতা কমানোর সুযোগ সৃষ্ট করে দিবে। ট্রাম্পের সাথে বুঝাপড়া অনুকূলে না হলে জাপান সংবিধানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত সামরিক বিষয়ক ৯ নম্বর ধারা পরিবর্তন করে সামরিক ব্যয় বাড়ানোর মত পদক্ষেপ নিতে পারে।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় যে ট্রাম্পকে বিশ্ব অবলোকন করেছিল, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার চেয়ে উগ্র, অনমনীয় ও অনিশ্চিত। অনেকের ধারণা ছিল ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর তাঁর নীতি এমনভাবে পরিবর্তন-পরিবর্ধন করবেন যাতে বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ ও বিশ্বব্যবস্থার সাথে খাপ খাওয়া যায়। উদাহরণ হিসাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রসঙ্গ এনেছিলেন বিশ্লেষকরা। ২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গায় সাম্প্রদায়িক উসকানি দাতা হিসাবে সারা বিশ্বে নিন্দিত ছিলেন মোদি। নির্বাচনী প্রচারণার সময় উগ্র হিন্দুত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে মোদি ক্ষমতায় আসলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের পর মোদিকে রাষ্ট্রযন্ত্রের সাথে অনেকটা খাপ খেয়ে নিতে দেখা গেছে। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের তিন সাপ্তাহে বিতর্কিত নির্বাচনী অঙ্গিকার পালনে আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে ওবামাকেয়ার, টিটিপি বাতিল করে দিয়েছে। নাফটাকে পুনঃবিবেচনার জন্য আলোচনার টেবিলে পাঠিয়ে দিয়েছে। সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন যদিও একটি ফেডারেল আদালত তা সাময়িকভাবে আটকে দিয়েছে। ভবিষ্যতে উচ্চ আদালতকে ব্যবহার করে ট্রাম্পের এই বাসনা পুরণের সম্ভবনা রয়েছে কারণ ট্রাম্প টুইটার বার্তায় বিচারকদের আদালতে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন । অল্প সময়ে স্পর্শকাতর বিষয়ে হাত দেওয়ায় ট্রাম্প নিয়ে সারা বিশ্ব উদ্বিগ্ন। দক্ষিণ কোরিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে করা দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য ও সামরিক চুক্তির ভবিষ্যত নিয়ে সংশয়ে থাকবে এটাই স্বভাবিক।
ট্রাম্প দক্ষিণ কোরীয় নীতিতে আদৌ কোন পরিবর্তন আনবেন কিনা সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছুদিন। নাফটা, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ও অভিবাসন ঘিরে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের কারণে সৃষ্ট বিতর্ক সামাল দিয়ে হয়ত দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর দিকে নজর দিবেন ট্রাম্প। যদিও কোরীয় নীতিতে পরিবর্তন রোধ করার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করছে। তবে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন একটা বড় ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।