দক্ষিণ কোরিয়ার আজকের এই পর্যায়ে আসাটা অনেকটাই রুপকথার মত। অনেকটাই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে কোরিয়ানরা। অর্থনীতি এবং রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন দেশটিকে পৃথিবীজুড়ে একটি মডেল দেশ হিসেবে পরিচয় এনে দিয়েছে। কোরিয়ার উত্থানের গল্প নিয়ে বাংলা টেলিগ্রাফের একটি বিশেষ সিরিজ “কোরিয়ার উন্নতদেশ হয়ে উঠার গল্প”
প্রথম পর্ব
কোরিয়ানদের উন্নত হওয়ার গল্পে যাওয়ার আগে কিছু তথ্য দিয়েই শুরু করি।দুই কোরিয়ার যুদ্ধের পর দক্ষিণ কোরিয়া ছিল বিশ্বের অন্যতম গরীব দেশ। মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৬৪ ডলার। তখনকার রিপোর্ট অনুযায়ী আফ্রিকার অন্যতম দরিদ্র দেশ কংগোর চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে খারাপ অবস্থানে ছিল দক্ষিণ কোরিয়া।
যুদ্ধ পরবর্তী খাবারের স্বল্পতার কারণে কোরিয়ানদেরকে জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন সংস্থার দেওয়া খাবারের পিছনে ছুটতে হয়েছে। যুদ্ধে ধ্বংস হয়েছিল অধিকাংশ মৌলিক অবকাঠামো। স্বাভাবিকভাবেই কোরিয়ার অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থা ছিল একেবারেই নিন্ম অবস্থানে।
ঠিক আজকে যখন সিউলে বসে এই লেখা লিখছি তখন দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের এগারতম এবং এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। এই মুহুর্তে কোরিয়ার শিক্ষাব্যবস্থাকে বলা হচ্ছে পৃথিবীর সেরা কয়েকটি শিক্ষা ব্যবস্থার একটি। জাহাজ নির্মাণে বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে কোরিয়া। ইন্টারনেটের গতিতে কোরিয়া নাম্বার ওয়ান টানা পাঁচবছরের বেশি সময় ধরে। স্যামসাং, এলজি, হুন্দাইসহ ১০টির বেশি কোম্পানী এখন সারাবিশ্বের বাঘা বাঘা কোম্পানীরগুলোকে পিছনে ফেলেছে।
সেবায় বিশ্বের সেরা এয়ারপোর্টের দখল অনেকদিন ধরেই ইনছন এয়ারপোর্টের হাতে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর দক্ষিণ কোরিয়ার পোর্ট সিটি বুসানে। গবেষণায় সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা দেশের একটি দক্ষিণ কোরিয়া। যার সুফল পাচ্ছে এবং এই গবেষণার কল্যাণে হয়ত অদূর ভবিষ্যতে অনেক ক্ষেত্রেই কোরিয়াকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যাবে।
শুধু অর্থনীতিতে দক্ষিণ কোরিয়া দ্রুত গতিতে এগিয়েছে তা নয়। কোরিয়ার শহরগুলোকে নিরাপদ শহর হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছে দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ এবং সরকার। বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আয়োজন করা একটি অনুষ্ঠানে ৭০জন বিদেশী ছাত্রছাত্রীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কোরিয়ার কোনদিক সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে। যতদুর মনে পড়ে সবচেয়ে বেশি ছাত্রছাত্রী উত্তর দিয়েছিল নিরাপত্তার দিক। একটি মেয়ে একা সারারাত সিউলের অলিগলি নিরাপদে হেটে বেড়াতে পারবে যেটা বেশিরভাগ দেশে একেবারেই অসম্ভব।
যুদ্ধের পর অর্থাৎ ১৯৫৩ সাল থেকে হিসাব শুরু করলে ৬৩ বছর মাত্র। এত দ্রুত সময়ে অন্যকোন দেশ এত বেশি উন্নত হতে পারেনি বলেই উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য দক্ষিণ কোরিয়া একটি মডেল। বড় বড় অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে ইকোনমিস্ট কিংবা গার্ডিয়ানের মত বিখ্যাত পত্রিকাগুলো অর্থনীতির জন্য কোরিয়াকে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
কোরিয়ার এই পথচলা খুব একটা সহজ ছিলনা। দুই কোরিয়ার যুদ্ধের পর দক্ষিণ কোরিয়া কিভাবে দ্রুত বদলাতে শুরু করলো কিংবা কোন নীতি অবলম্বন করে সফলতার পথ খুঁজে পেলো সেইসব থাকছে দ্বিতীয় পর্ব থেকে।
লেখকঃ সম্পাদক, বাংলা টেলিগ্রাফ