বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে দেশগুলোর ঢাকাস্থ মিশন। পরামর্শে বিদেশীদের নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে এমন আন্তর্জাতিক হোটেল, বড় সুপার মার্কেট, রেস্তোরাঁ, শপিং সেন্টার, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থান এবং ক্লাবসহ গণপরিবহনে চলাচল না করতে বলা হয়েছে। বিদেশীদের ওপর জঙ্গি হামলার কারণে বাংলাদেশকে উচ্চমাত্রার হুমকি হিসেবেও চিহ্নিত করেছে দেশগুলো।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এক জরুরি বার্তায় বলা হয়েছে, গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারির জিম্মি সংকট কাটলেও সব মার্কিন নাগরিকের প্রতি ৭৯ নং সড়ক এড়িয়ে চলার পরামর্শ থাকছে। সেই সঙ্গে কূটনৈতিক এলাকাসহ পুরো বাংলাদেশে চলাচলে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হলো। পাবলিক প্লেসে সে দেশের নাগরিকদের চলাচল না করারও পরামর্শ দিয়েছে মার্কিন দূতাবাস। পাশাপাশি হেঁটে, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, রিকশাসহ গণপরিবহনে চলাচলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
যুক্তরাজ্য সরকারও বাংলাদেশে সে দেশের নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ভ্রমণ সতর্কতায় বলা হয়েছে, যেসব স্থানে বিদেশী নাগরিকদের চলাচল বেশি, সেসব এলাকা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেয়া হলো। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক হোটেল, বড় সুপার মার্কেট, রেস্তোরাঁ ও ক্লাবগুলোয় ব্রিটিশ নাগরিকদের না যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে দেশটি। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সতর্কতা বার্তা জারি থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
কানাডা বাংলাদেশে সে দেশের নাগরিকদের জন্য উচ্চমাত্রায় সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। সতর্কতা বার্তায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের হুমকি রয়েছে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকেই বিভিন্ন উগ্রপন্থী গোষ্ঠী বেশকিছু মানুষ ও দলের ওপর সহিংস হামলা চালিয়েছে। এ হামলাগুলোর দায়িত্ব জঙ্গি সংগঠন আইএস নিজেরা স্বীকার করেছে। বেশকিছু বিদেশী নাগরিক এসব হামলার লক্ষ্যে পরিণত হয়েছেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দুই বিদেশীকে হত্যাও করা হয়েছে।
কানাডার সতর্কতা বার্তায় বলা হয়েছে, পরবর্তী হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। যেকোনো সময়ই হামলা হতে পারে। আর হামলার লক্ষ্য হিসেবে এমন স্থানকে বেছে নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে বিদেশীদের যাতায়াত বেশি। এসব স্থানের মধ্যে রয়েছে— বাণিজ্যিক এলাকা, পাবলিক প্লেস, অন্য দূতাবাস, হোটেল, বাজার, রেস্তোরাঁ, ক্লাব, বার, শপিং সেন্টার, ধর্মীয় স্থান, গণপরিবহন ও ঐতিহাসিক স্থান। ফলে এসব স্থানে নিজ দেশের নাগরিকদের চলাচল সংকুচিত করে আনার পরামর্শ দিয়েছে কানাডা।
অস্ট্রেলিয়াও এক সতর্কতা বার্তায় সে দেশের নাগরিকদের গুলশান-২ এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে। চলাচলে সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনাও অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থানরত অস্ট্রেলিয়ার কর্মকর্তাদের পাবলিক প্লেস ও বিদেশীদের আনাগোনা রয়েছে এমন স্থানে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে দেশটি।
নিউজিল্যান্ড তাদের সতর্কতা বার্তায় বাংলাদেশে উচ্চমাত্রার জঙ্গি হামলার ঝুঁকি রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন ও ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে চলছে। তাই যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে বা বিদেশী নাগরিকদের চলাচল বেশি এমন স্থানে জঙ্গি হামলা হতে পারে। তাই বাংলাদেশে অবস্থানরত নিজ দেশের নাগরিকদের চলাচলের স্থান, সময় ও ধরন পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছে দেশটি। সেই সঙ্গে তথ্যের জন্য গণমাধ্যমকে অনুসরণ করতে এবং হোটেল ও কনফারেন্স সেন্টারে নিরাপত্তার স্বার্থে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে দেশটি।
এর বাইরেও বিভিন্ন দেশ ঢাকায় নিজ দেশের দূতাবাস বা হাইকমিশনের কূটনীতিকদের মাধ্যমে দেশগুলোর নাগরিকদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, সতর্কতা অবলম্বনসহ নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পরামর্শ দিয়েছে।