Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

 shipবাংলার ‘টাইটানিক’ সুন্দরবন-১০ লঞ্চটি রাত পৌনে ৯টায় ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে যাত্রীসেবায় আরও সুবিধা দিতে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সর্ববৃহৎ ও সর্বোচ্চ ১৪শ’ যাত্রীধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বিলাসবহুল এ চারতলা লঞ্চটি চালু করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে সদরঘাট নৌ-টার্মিনালে লঞ্চটির উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর জাকিউর রহমান ভূঁইয়া, বিআইডব্লিউটিএ সদস্য ভোলানাথ দে, সুন্দরবন-১০ এর মালিক সাঈদুর রহমান রিন্টু ও তিন সংসদ সদস্য। লঞ্চটির মালিক সাঈদুর রহমান রিন্টু জানান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত সুন্দরবন-১০ লঞ্চটি ঘন কুয়াশার মধ্যে নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারবে। এটি নির্মাণ করতে প্রায় ১৬ থেকে ১৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। জনতা ব্যাংক লঞ্চটি নির্মাণে অর্থায়ন করেছে। লঞ্চটি চালু করার পর পরই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রিক যোগাযোগ বৃদ্ধি ঘটবে বলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিন মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। বরিশাল-ঢাকা-ঝালকাঠী-পটুয়াখালী রুটে চলছে সুন্দরবন নেভিগেশনের আরও ৯টি লঞ্চ। এর মধ্যে ‘সুন্দরবন-৮’ই ছিল দেশের সর্ববৃহৎ লঞ্চ। ‘সুন্দরবন-৮’ দৈর্ঘ্যে ৩০০ ফুট প্রস্থে ৪৬ ফুট। সুন্দরবন-১০ এটির চেয়েও বড়। এটি দৈর্ঘ্যে ৩৩২ ফুট প্রস্থে ৫২ ফুট। সুন্দরবন নেভিগেশনের লঞ্চগুলোর মধ্যে ‘সুন্দরবন-১০’ অত্যাধুনিক। লঞ্চটিতে রয়েছে ডুপ্লেক্স কেবিন, ফুডকোর্টসহ আধুনিক নানা প্রযুক্তির ছোঁয়া। এই প্রথম কোনো লঞ্চে যুক্ত হলো লিফট ও সিসিইউ ইউনিটের সুবিধা। লঞ্চের নিচতলায় অগ্রভাগে হৃদরোগীদের জন্য এক শয্যার সিসিইউ ও সিসিইউ ইউনিট। যেখানে অক্সিজেনের পাশাপাশি চিকিৎসক ও সেবিকার সহায়তা পাওয়া যাবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রয়েছে প্রথম শ্রেণির জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সিঙ্গেল ও ডাবল মিলিয়ে ২৪০টি কেবিন। লঞ্চের সিঁড়ি এমনভাবে নির্মিত যে নিচতলা থেকে সরাসরি দ্বিতীয় বা তৃতীয় তলায় যাওয়া যাবে। রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৪০টি সোফা ও ১২টি কমন বাথরুম। ভিআইপি কেবিন ছাড়াও রয়েছে ৬টি বিশেষ ভিআইপি কেবিন। যার প্রতিটি কক্ষের সঙ্গেই রয়েছে আলাদা বাথরুম, বারান্দা, এসি ব্যবস্থা। এর প্রতিটিই আলাদা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। ভিআইপি কেবিনগুলোর নাম রাখা হয়েছে-৭১, অমর একুশেসহ ইতিহাস ঐতিহ্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নাম। সুন্দরবন নেভিগেশনের স্বত্বাধিকারী সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, লঞ্চটির ডেকের নিচে ১২টি কম্পার্টমেন্ট করা হয়েছে। যাতে লঞ্চের তলার কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে অপর অংশে পানি প্রবেশ করতে না পারে। এরপর নিচতলার ডেকে প্রস্তুত হাঁটার জায়গা, পর্যাপ্ত টয়লেট, ডেকের যাত্রীদের জন্য কেন্টিন রয়েছে। নিচতলায় এলইডি ও সাধারণ লাইটের সংযোজনে আলোকসজ্জায় আনা হয়েছে বৈচিত্র্য। বিশেষ করে লঞ্চের ডেক থেকে কেবিন, সোফা, ভিআইপি সবখানেই যাত্রীদের জন্য রয়েছে এলইডি টেলিভিশন। শিশুদের জন্য এই লঞ্চে রয়েছে প্লে-গ্রাউন্ড। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার যাত্রীদের চা-কফি পানের জন্য লঞ্চের অগ্রভাবে রাখা হয়েছে রুচিশীল বসার জায়গা। আর যাত্রীদের জন্য পুরো লঞ্চটিকে ওয়াইফাই জোনের আওতায় আনা হয়েছে। অন্যদিকে নিরাপত্তার জন্য পুরো নৌযানটির পরিচালনা ব্যবস্থা সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। লঞ্চের চতুর্থ তলার সম্পূর্ণটুকুই হুইল হাউজ। এছাড়া লঞ্চটিতে জার্মানির একটি কোম্পানির তৈরি ২ হাজার ৭৫০ অশ্বশক্তির ২টি মূল ইঞ্জিন ছাড়াও নৌ-যানটির প্রথম শ্রেণি ও ভিআইপি কক্ষসহ ডেক যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস নিশ্চিতকরণে ৩টি জেনারেটরসহ আরো একটি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটরও সংযোজন করা হয়েছে। রাখা হয়েছে আধুনিক রাডার, জিপিএস পদ্ধতি। ফগ লাইটের সংযোজনের মাধ্যমে ঘন কুয়াশার মধ্যেও নৌযানটি নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারবে। এছাড়া অগ্নিনির্বাপক আধুনিক যন্ত্রপাতির সংযোজন তো রয়েছেই।