এ যেন সিনেমার ‘বাস্তব’ কাহিনী। পাত্রী ধনাঢ্য ঘরের মেয়ে, আর পাত্র তথাকথিত গরীব ঘরের। কিন্তু তাদের ভালবাসায় ফাটল ধরাতে পারেনি কোনোকিছুই। সিলেটের সম্ভ্রান্ত পরিবারের তরুণী হালিমা নাসরিন ও সিরাজগঞ্জের দরিদ্র পরিবারের যুবক সাদ্দাম হোসেন। মোবাইল ফোনে রং নম্বরের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক।
সিলেটে থাকাকালে পরিচয় হলেও বছর তিনেক আগে নার্সিংয়ের ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে আমেরিকায় যান নাসরিন। আধুনিক প্রযুক্তির এ যুগে মোবাইল ফোনের ট্যাঙ্গোতে হতো নিয়মিত যোগাযোগ। এক পর্যায়ে নাসরিনের পরিবারের সদস্যরা এ প্রেমের বিষয়টি জেনে যান। বাধ সাধেন তারা। কিন্তু তরুণী তার প্রেমের ব্যাপারে অটল। ওই যুবককেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
এদিকে দীর্ঘ তিন বছর পর আমেরিকা থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে বুধবার সকাল ৯টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন নাসরিন। আসেন প্রেমিক যুবক সাদ্দাম হোসেনও। নাসরিনের পরিবারের সদস্যরাও শাহজালালে এসে টের পান যে, তরুণী সিলেট যাচ্ছেন না, ওই যুবকের সঙ্গে যাবেন। আর তাই তাকে সিলেটে নিতে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের সহায়তা চান পরিবারের সদস্যরা। এ অবস্থায় বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের সদস্যরা নাসরিনকে ডেকে নিয়ে আসেন কার্যালয়ে। কিছুক্ষণ পর নিয়ে আসা হয় ওই যুবককেও।
নাসরিনের ভাই হেলাল বোনকে অনুরোধ করতে থাকেন তাদের সঙ্গে সিলেটে যেতে। কিন্তু অনড় বোন বলেন, আমি সাবালিকা। আমার সিদ্ধান্ত, আমি যাকে ভালবাসি, তাকে বিয়ে করবো। মেয়ের সিদ্ধান্ত ও পরিবারের অনুরোধে বিব্রতবোধ করতে থাকেন দায়িত্বরত এএসপি আসমা আরা জাহান। বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। এরপর ওই তরুণীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে প্রেমিকের সঙ্গে যেতে দেওয়ার পরামর্শ দেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
প্রেমিক সাদ্দাম হোসেন গতকাল বুধবার বলেন, তিন বছর ধরে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। আমরা দু’জন আজ বিয়ে করবো। আমার গ্রামের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন চলছে।
প্রেমিকা হালিমা বলেন, আমি আমেরিকার গ্রিনকার্ডধারী নাগরিক। আমি আমার ভালোবাসার টানে দেশে এসেছি। সাদ্দামের সঙ্গে যেতে দেওয়ার জন্য আমি আর্মড পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই।
বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সিনিয়র এএসপি আলমগীর হোসেন শিমুল বলেন, আমরা মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করি, সে তার পরিবারের সঙ্গে যাবে কি না। সে বলে, আমি এডাল্ট। আমি আমার প্রেমিকের সঙ্গে যাবো। আজ আমরা দু’জন বিয়ে করছি। এ অবস্থায় আমাদের করার কিছু নেই। তাই আমরা তাদের নিরাপদে বিমানবন্দর ত্যাগে সহায়তা করেছি, বলেন তিনি।