প্রতিদিন স্কুলে গিয়ে জাতীয় সঙ্গীত আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি গাইতাম। আজ থেকে গাওয়া হবে না। বাবা-মা ও ভাইয়ের সঙ্গে প্রিয় দেশ ত্যাগ করে নতুন দেশে পাড়ি জমালাম। আমার স্কুলের বন্ধুদের অনেক মিস করবো। কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন পাটগ্রাম জোংড়া ন্যাশনাল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সুচরিতা রানী।
পাটগ্রাম উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল বাঁশকাটা ১১৯নং থেকে শরৎ চন্দ্র (৪৫) তার স্ত্রী প্রতিমা রানী (৩০) তার দুই সন্তান প্রদিপ (১০) ও সুচরিতা রানী (১৫) ভারতে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিল। তাই স্বপরিবারে ভিটে মাটি বিক্রি করে ভারতে চলে যাচ্ছেন। পড়ে রইলো আঙিনার তুলশি গাছ ও শুন্য ভিটা।
শরৎ চন্দ্র জানান, ভারতে ভাই, বোন, মা বাবা থাকায় আমাদেরও স্বপরিবারে চলে যেতে হচ্ছে। প্রতিবেশিদের ছেড়ে যেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে তারপরও যেতে হবে।
সোমবার দুপুরে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ভেতরে থাকা সদ্যবিলুপ্ত ১১২, ১১৫ ও ১১৯ বাশঁকাটা এবং ১৫ খড়খড়িয়া ছিটমহলের ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণকারীরা ১৩১ জন শিশু, নারী ও পুরুষ বুড়িমারী স্থলবন্দর হয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন।
বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে একের পর এক ভারতে প্রবেশ করেন বাংলাদেশি ও ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশ আটকেদেন মিনতী (৩০) ও তিন মাসের শিশু প্রসেনজিৎ। শিশু প্রসেনজিতের ট্রাভেল কার্ড না থাকায় কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয় তাদের। পরে উভয় দেশের প্রসাশনের মধ্যে আলোচনা করে যাওয়ার অনুমতি মেলে শিশু প্রসেনজিতের।
এসময় একজন আরেকজনকে উপহারও তুলে দেন। কেউ কেউ আবার পোষা গরু বা ছাগলের মতো গবাদি পশু নিয়ে বের হন।
জোংড়া ইউনিয়নের বিলুপ্ত ১১৯ বাঁশকাটা ছিটমহলের পক্ষঘাতগ্রস্থ খগেন্দ্রনাথ (৮০) পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে পারি জমান ভারতে।
ট্রাভেল পাসধারী ব্যক্তিরা লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমার চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যান। এসময় উভয় দেশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
লালমনিরহাট প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, জেলার তিনটি উপজেলায় থাকা ৫৯টি ছিটমহলের মধ্যে সাতটি থেকে ১৯৫ জন মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণকারী ১৯২ জন বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে প্রবেশ করেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার একই উপজেলার ১১৪ লতামারীর একটি এবং হাতীবান্ধার ১৩৫ ও ১৩৬ নম্বর গোতামারী বিলুপ্ত ছিটমহলের ১৭টি পরিবারের ৬২ জন বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে নিজ দেশে ফিরেছেন।