প্যারিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর বিশ্বব্যাপী যখন ইসলামের সাথে সন্ত্রাসবাদের সম্পর্ক নিয়ে পুরোনো বিতর্কের পালে নতুন হাওয়া যোগ হয়েছে, তখন ফক্স নিউজের মতো জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেলে নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে শক্ত অবস্থান ব্যক্ত করেছেন এক মুসলিম নারী। টেলিভিশন পর্দায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পতাকায় নিজের মাথা মুড়ে (হিজাব) হাজির হয়েছেন।
এ নারীর নাম সাবা আহমেদ। তিনি রিপাবলিকান মুসলিম কোয়ালিশন নামের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। জনপ্রিয় উপস্থাপক ও সাংবাদিক মেগিন কেলির অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে তিনি স্বাধীন ও সাংবিধানিকভাবে মুসলমানদের ধর্ম পালনের অধিকার এবং মুসলমানদের অন্যান্য অধিকার সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেছেন।
মাথায় আমেরিকান পতাকার হিজাব পরা সম্পর্কে বিবিসি-কে সাবা বলেন, এটা আসলে শেষ মূহুর্তের সিদ্ধান্ত ছিল। আমি বেগুনি রঙের হিজাবই পরেছিলাম। কিন্তু ফক্সের একজন কর্মীই আমাকে এটি পরার পরামর্শ দিলেন, যাতে হিজাবটি আরো অর্থবোধক হয়। ফক্সের কর্মীরা আমাকে বলছিল, তুমি যদি সবার উদ্দেশ্যে কোনো বার্তা দিতে চাও, তাহলে আমেরিকান পতাকার হিজাব পরো।
আমেরিকায় ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অন্যতম প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসবাদ রুখতে মসজিদগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এ কথার জবাবে সাবা আহমেদ বলেন, আমরা যে বার্তাটি সবাইকে দিতে চাই, সেটা হচ্ছে আমরা সবাই আমেরিকার নাগরিক। আমরা মুসলিম, আমরা রিপাবলিকান। আমাদেরকে জায়গা দিতে হবে এবং আমাদেরকে গ্রহণ করতে হবে।
সাবাকে প্রশ্ন করা হয়, মুসমলমানরা মসজিদে গিয়ে বিভিন্ন হামলার পরিকল্পনা করছে। উদাহরণ স্বরূপ বোষ্টন হামলার প্রধান অভিযুক্ত দুই ভাইয়ের প্রসঙ্গ টানা হয়। জবাবে সাবা বলেন, আমেরিকার মতো একটা দেশে এটা খুবই দুঃখজনক যে, কেউ ভাবছে মসজিদে গিয়ে কেউ হামলার পরিকল্পনা করছে। মসজিদ মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় স্থান। সেখানে মুসলমানরা যান ইবাদত করতে। মসজিদের সাথে সন্ত্রাসবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এখন দুই একজন খারাপ খ্রিষ্টানের জন্য কেউ যদি বলে চার্চগুলো বন্ধ করে দিতে হবে, তাহলে সেটা কেমন শোনাবে?
সাবা আহমেদের আমেরিকান পতাকার হিজাব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তীব্র আলোড়নের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই সাবার দেশপ্রেমের প্রশংসা করেছেন।
একজন লিখেছেন, পতাকার হিজাব পরাটা দেশ প্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত। অন্য একজন লিখেছেন, ফক্স নিউজে আমেরিকান পতাকার হিজাব পরায় ওই নারীকে পুরস্কারে ভূষিত করা উচিত।
তবে কেউ কেউ আবার সমালোচনা করতেও ছাড়েনি। একজন লিখেছেন, মার্কিন সেনারা এ পতাকার জন্য জীবন দিয়েছেন। মার্কিন পতাকা হিজাব বানানোর জন্য নয়।
তবে এ সমালোচনার জবাবও দেওয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে। অনেকেই এমন অভিযোগের জবাবে অভিযোগকারীদের বিভিন্ন সময় মার্কিন পতাকার ব্যবহার সম্পর্কে মনে করিয়ে দিয়েছেন। তারা বলেছেন, আপনারা যদি মার্কিন পতাকায় ব্রা, পেন্টি, অন্তর্বাস ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে কেন একজন মুসলমান সে একই পতাকায় হিজাব পরতে পারবেন না?
তবে এসব নেতিবাচক মন্তব্য নিয়ে ভাবেন না সাবা। তিনি এসবের জবাবে বলেছেন, অধিকাংশ মানুষই ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখেন না। তাই তারা এ ধরনের মন্তব্য করেন।