ভাই আমারে বাঁচান,ভাই আমার জানডা ভিক্ষা চাই, আমি আর এ বিদেশ করুম না…।
এমনি ভাবে আকুতি জানিয়ে কেঁদে কেঁদে বলছিলেন রুমা আক্তার। চার মাস আগে সৌদিতে পাড়ি দেন দালালের মাধ্যমে। বাবুল নামে এক দালাল তাকে অফিসের কাজ বলে ভিসা দেয় এবং বেশ কয়েকবার হাতিয়ে নেয় বড় অংকের টাকা। এখন তিনি কাজ করেন এক নিষ্ঠুর লোকের বাসাবাড়িতে। ঠিকমতো খেতে পান না, মারধর করে।
রুমা আক্তারে এ করুণ কাহিনী সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের (শ্রম) কাউন্সিলর সারওয়ার আলমকে জানালে তিনি রুমা আক্তারের মোবাইল নম্বর নেন, তার সঙ্গে কথা বলেন এবং রুমা আক্তার কোথায় আছেন সেটি খুব দ্রুত বের করার আশ্বাস দেন।
গত ৪ নভেম্বর বাংলামেইললের সৌদি আরব করেসপন্ডেন্টকে ফোন করেন রুমা। জানান তার বিদেশবাসের করুণ কাহিনী। সেই কথপোকথনটিই তুলে ধরা হলো :
আমি নিহন বলছিলাম, আপনার কী সমস্যা বলেন?
ভাইরে আমি সৌদি আরবে খুব বিপদে, আছি আমাকে একটু দেশে পাঠানো যায় না?
আপনি আছেন কোথায়
আমি আছি রিয়াদে
রিয়াদে কোথায়?
কোথায় বলতে পারি না। আমাদের যে মেডিকেল করায়, আকামা করে সেই অফিসের পাশেই আমার বাসা।
আমার নাম্বার দিছে কে আপনাকে?
দেশ থেকে একজনে মেসেজ করে দিছে।
ঠিক আছে আপনার কোম্পানি কি, আপনি কত বছর আছেন এখানে?
চার মাস হয় এখানে আছি।
চার মাস আসছেন নতুন?
হ্যাঁ।
আপনার সমস্যা কী?
মেইন সমস্যা হলো, যে দালালে আমাকে পাঠাইছে সে আমার থেকে প্রায় ৭০/৮০ হাজার টাকা নিছে। সে বলছে আমাকে অফিসের ভিসা দিতাছি। বাসার কাম এইডা জানি না। আইসা দেখি বাসার কাম। আমি অফিসে ফেরত গেছি বলছি আমার সমস্যা আমি দেশে যাবো। আমি খাইতে-লইতে পারি না। অফিসে কমপ্লিন করছি দেইখা আমাকে বাসায় নিয়ে অনেক মারধর করছে। ১ মাস খাইতে পারি না অনেক শুকাইয়া গেছি। মারধর করে গালাগালি করে। ডিউটি ৯ ঘণ্টা আমাকে ১৬/১৭ ঘণ্টা ডিউটি করায়। কাজের লোক লাগে ২ জন। ২ জনের কাম ১ জনের দিয়া করায়। খাইতে গেলে খেচর খেচর করে। মাছ গোশ খাইতে দেয় না। খাওয়ার থেকে উঠাইয়া নিয়া কাম করায়। খাওয়ার সুযোগ পাই না।
খালি আলু আর দুইডা চাল দেয়। গতকালকে সারাদিন কিছু খাই নাই। আজকেও কিছু খাই নাই। এর মধ্যে চুরি করে আপনাকে ফোন দিছি। এখন ঘরে কেউ নাই।
এখান থেকে বারবার বলা হয়েছে আপনারা ভেবেচিন্তে আসেন। আপনারা এগুলো দেখে-শুনে আসবেন না! আপনার নাম বলেন?
রুমা আক্তার, ভাই আমার জীবনটা একটু ভিক্ষা চাই। একটু উদ্ধার করে দেশে পাঠান
আপনার বাড়ি কোথায়?
বরিশাল। ভাই আমি ১/২ মাস হইছে আমার গত মাসের বেতনের টাকা দিয়া মোবাইলের কাডের লইগা তাও যাইতে দেয় না। আমারে কিছু দেয় না। তেল পানি দেয় না।
আমি দেখতে আসছি। আমরা আজকে আসবো
শুনেন ভাইয়া আপনি ২ মিনিট আমার কথা শুনেন। ওদের যন্ত্রণায় আমার মাথায় বাড়ি মারছি সেই থেকে মাথায় একটু চিরুনিও দিতে পারি না। চুল কাইটা ফাইলছি। মাথা ন্যাড়া করে ফেলছি। অমানসিক অত্যাচার। ধোয়া বাসন বারবার ধোয়ায়। একটু বসা দেখতে পারে না। কাপড়-চাপড় আউলাইয়া আবার ঠিক করায়, খুব কষ্ট দেয়। খালি কাম করায়। আমি যে অফিসে বিচার দেবো তাও পারি না। নাম্বার নাই যদি জানতে পারে তাহলে আমারে পিটাইয়া মাইরা ফেলাইবো। আমি অসুস্থ মইরা যাই আমারে লাথি দিয়া উঠাইয়া আবার কাম করায়।
আপনি এখন যেখানে আছেন ওখানে কোনো বাংলাদেশি মেয়ে আছে?
জানি না।
আচ্ছা ঠিক আছে আমরা যেভাবে হোক দেখতাছি।
শোনেন ভাইয়া
জি বলেন?
আপনি আমারে যে বাড়ির নাম্বার যে ১৮ নাম্বার বাড়ি। মেডিকেল থেকে একটু সামনে আগাইলে পূর্ব দিকে মেইন গেটের লগে। বাড়ির সামনে মার্কেট আছে। আপনারা ইচ্ছা করলে আমারে খুঁজে বের করতে পারেন। আমি কই আছি। ভাই আমারে বাঁচান, আমার জীবনটা ভিক্ষা চাই। এর বিনিময় যদি যা কিছু কন আমি তা করব।
আমরা দেখি কি করা যায় আপনি আপনার মোবাইল খোলা রাইখেন
আমার নাম্বার খোলা থাকে। আপনি এই টাইমে ফোন দিলে আমার সঙ্গে কথা হবে। বিকেলের টাইমে ভুলেও ফোন দিবেন না।
ওরা সবাই জাগনা থাকে। ওই বাড়ির লোক বাসায় থাকে। সকালে বাসার মহিলা ঘুমায় তাই এই সময় ফোন দিয়েন।
আব্দুল হালিম নিহন, সৌজন্যেঃ বাংলামেইল