পশ্চিমবঙ্গে আর সেই অর্থে পা রাখছেন না মিঠুন চক্রবর্তী। এমনকি নিজের ছবির প্রিমিয়ারেও আসেননি। বাতিল করে দিয়েছেন রিয়্যালিটি শোর সংবাদ সম্মেলনও। কথা বলছেন না সাংবাদিকদের সঙ্গেও। হঠাৎ কেন মিঠুনের এই স্বেচ্ছা নির্বাসন? ভারতীয় ছবির এককালের সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তী আপাতত এখন অনেক ব্যাপারেই নিজেকে একেবারে গুটিয়ে নিয়েছেন।
যে মানুষটি বছরের পর বছর ধরে দুর্গাপূজার সময় কলকাতায় ছুটে আসতেন, বিভিন্ন পূজার প্যান্ডেলে চুটিয়ে পূজা উদ্বোধন করতেন, এবার তিনি কোনো ব্যাপারেই আগ্রহ দেখালেন না। পাবলিক অ্যাপিয়ারেন্স নিয়ে এই মুহূর্তে মাথাব্যথাও নেই মিঠুনের। অথচ দুই বছর আগেও সমাজসেবার কারণে বাংলার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় রীতিমতো দৌড়ঝাঁপ করেছেন তিনি। ১৯৯৪ সাল থেকে দীর্ঘ ২০ বছর থ্যালাসেমিয়া রোগকে কেন্দ্র করে কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের দূর-দূরান্তের বিভিন্ন জেলায় রক্তদান শিবির থেকে শুরু করে বহু অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন এককথায়। লাখ লাখ টাকা তুলে দিয়েছেন থ্যালাসেমিয়া সোসাইটিকে।
পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থা সারদা কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে যাওয়াই কি এই নির্বাসনের অন্যতম কারণ? মিঠুনঘনিষ্ঠ মহলের অন্তত মত তেমনটাই। পরোপকারের অদম্য ইচ্ছা নিয়ে বেশ কয়েক বছর আগে প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কুনাল ঘোষের (বর্তমানে সারদা কাণ্ডে ফেঁসে কারাবন্দি) অনুরোধে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের টিভি চানেলের কিছু অনুষ্ঠানে অংশ নেন মিঠুন। সেসব অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুবাদে পারিশ্রমিক হিসেবে পান প্রচুর টাকাও।
এরপর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে নামে যৌথভাবে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)। তদন্তে নামতেই থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়ে সংস্থাটির। লাখ লাখ আমানতকাররীর টাকা নয়-ছয়ের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে। আর সেই কাণ্ডে আর সব রাঘব বোয়ালের সঙ্গে মিঠুন চক্রবর্তীর নামও উঠে আসে।
ইডি দিনের পর দিন মিঠুনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তিনি সারদা থেকে মোট কত টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন, তা জানতে চান ইডি কর্তারা। যদিও নিজের পারিশ্রমিকের অঙ্ক জানাতে কখনই দ্বিধাগ্রস্ত হননি মিঠুন। এমনকি পরবর্তীকালে মিঠুন সারদা থেকে যে টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন সেই টাকার ট্যাক্স বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত টাকা (এক কোটি ১৯ লাখ টাকা) ইডিকে ফেরত দিয়ে দেন তিনি। এরপর ইডি মিঠুনকে ক্লিনচিট দিয়ে দেয়। কিন্তু সারদাকাণ্ডে নাম জড়িয়ে কাগজের পাতায় তাঁর নামে হেডলাইন হওয়াটাকে মোটেই ভালোভাবে নেননি মিঠুন। মনে মনে ব্যথিত হয়েছিলেন যথেষ্ট।
মিঠুন এ প্রসঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ এক সাংবাদিক বন্ধুকে বলেছিলেন, ‘বুঝলি সারদাকাণ্ডে আমার অবস্থা হলো গিয়ে ফুটবলের মতো। যে যেভাবে পারে আমাকে লাথি মেরে পেনাল্টি থেকে গোল দিচ্ছে। কী করব বল! লোকের ভালো করতে গিয়ে ফেঁসে গেলাম। এটাই বোধহয় আমার প্রাপ্য ছিল!’
মিঠুন চক্রবর্তী বরাবরই যেটা সঠিক বলে বিশ্বাস করেন, সেটা বুক ফুলিয়ে করেন। একসময় তিনি বাম নেতাদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিতি লাভ করলেও পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, তৃণমূলের হয়ে তিনি রাজ্যসভার সাংসদ হলেন। সেই সময়ে মিঠুন নিজে জানিয়েছিলেন, ‘সব দলের নেতা-নেত্রীর সঙ্গেই আমার ভালো সম্পর্ক। আমি স্বার্থ নিয়ে কারো সঙ্গে মিশি না। তবে আমার বিশ্বাস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা এবং বাঙালির জন্য ভালো কাজ করবেন। সেই বিশ্বাস থেকেই তাঁর কর্মোদ্যোগে শরিক হয়েছি। সংসদ সদস্য হিসেবে বাংলার জন্য ভালো কাজ করতে চাই। যদি দেখি আমি কোনো কাজ করতে পারছি না, তাহলে ইস্তফা দিতে দ্বিতীয়বার ভাবব না।’ এমনই একজন তারকার আড়ালে চলে যাওয়া মিডিয়া থেকে শুরু করে সবার জন্যই দুঃখজনক।(এনটিভিবিডি)