বাবার জমির ভাগ না পেয়ে প্রতিহিংসা বশত বড়ভাইয়ের স্ত্রীর (ভাবি) ওপর হামলা চালিয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও আঘাত করে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।
নৃশংস এ ঘটনা ঘটেছে মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানার পূর্ব সরমঙ্গল এলাকায়।
ভাবি সালমা বেগম (৩৫) এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়ে তিনি হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। তিনি তার দেবরের বিচার দাবি করেছেন।
সালমা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার যা হবার তা তো হয়েছে। সবই তো হারিয়েছি। দুই পা কেটে নিয়েছে, হাঁটতে পারব না। ডান হাত কেটে নিয়েছে, কিছু ধরে খেতে পারব না। যৌনাঙ্গ কেটে নিয়েছে, স্বামীসুখ পাব না। স্তন কেটে নিয়েছে, যার যন্ত্রণায় সারাজীবন কাটাতে হবে।’
বুধবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২০৬ নম্বর ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে সালমা এভাবেই তার এই অবস্থার কথা তুলে ধরেন। হাসপাতালে সালমাকে দেখভালের জন্য আছেন তার বড় বোন রাশেদা, মেজ বোন মাহমুদা এবং আরেক দেবর নুরুল হক।
নুরুল হক বলেন, ‘গত ২৫ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাড়িতে একা পেয়ে আমার ছোট ভাই রেজাউল ব্যাপারী এ ঘটনা ঘটায়।’
সালমার বড়বোন মাহমুদা জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে রাজৈর উপজেলার সরমঙ্গল এলাকার আজিজুল ব্যাপারীর দ্বিতীয় ছেলে সামসুল হক ব্যাপারীর সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় গোপালগঞ্জ জেলার মোকসেদপুর উপজেলার মোল্লাদি গ্রামের মাইনুদ্দিন শেখের মেয়ে সালমার।
সালমার তিন ছেলে-মেয়ে। এরা হলো সাইদুল (১৩), সুরাইয়া (১১) এবং সালাউদ্দিন (৮)। তারাও তাদের চাচা রেজাউলের এ কাণ্ড দেখে হতবাক।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, আজিজুল ব্যাপারীর চার ছেলের সবারই পৃথক সংসার। তিনি দ্বিতীয় ও তৃতীয় ছেলের সংসারে খাওয়া-দাওয়া করতেন। এর কাছে একমাস, ওর কাছে একমাস- এভাবে মাস ভাগ করে খেতেন। জমিজমা কিছু নিজের কাছে রেখে বাকী সব ভাগ করে দিয়েছেন ছেলেদের। কিছুদিন আগে নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা ৯০ শতাংশ জমি তিনি ভাগ করে দেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় ছেলেকে এবং এক মেয়েকে। এতে বড় ছেলে আব্দুল হক ব্যাপারী ও সব ছোট ছেলে রেজাউল হক ব্যাপারী ক্ষুব্ধ হন।
২৫ অক্টোবর সকালে বাড়ির সবাই যখন কাজে চলে যায় ঠিক তখন সালমার ঘরে এসে তার ওপর হামলা চালায় রেজাউল এবং এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে । নিজেকে বাঁচাতে সালমা অন্য এক ঘরে গিয়ে লুকানোর চেষ্টা করে। রেজাউল সেখানে গিয়ে হানা দেয়। বড়ভাই আব্দুল হক ব্যাপারী এসময় রেজাউলের হাতে রাম দা তুলে দেয়। রেজাউল সেই রাম দা দিয়ে সালমার দুই পায়ে কুপিয়ে পা কেটে ফেলে। ডান হাতেও কোপ দেয়। এ সময় সালমা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
এরপর রেজাউল বের হয়ে টিউবওয়েলের পাড়ে গিয়ে রাম দা ধুয়ে ফেলে। এ সময় আব্দুল হকের ছেলে রিয়াজ এসে জিজ্ঞাসা করে, কাক্কু রাম দা দিয়ে কী জবাই করেছ যে রক্ত ধুয়ে ফেলছ। উত্তরে রেজাউল বলে, কী জবাই করেছি তা তুই বুঝবি না। পরে জানতে পারবি।
সালমার স্বামী সামসুল এসে এ অবস্থা দেখে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করা হয়। পঙ্গু হাসপাতাল থেকে মঙ্গলবার তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
মাহমুদা বলেন, ‘আসার সময় সালমার পা দুটো ও ডান হাত ঝুলে ছিল। ওগুলো সঙ্গে নিয়ে এসেছি যদি কাজে লাগে। পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তির পর পা দুটো ফেলে দেওয়া হয়। আর ডান হাত কোনো রকম আটকিয়ে রেখেছে ডাক্তার। এরপর দেখি ভেতর থেকে রক্ত বের হচ্ছে। তখন দুই বোন মিলে সালমার কাপড় খুলে দেখি বিভৎস অবস্থা।’
মাহমুদা আরো বলেন, ‘কি আর বলব লজ্জার কথা। সালমার দুই স্তন কেটে ফেলেছে। কোনোরকম ঝুলে আছে। যৌনাঙ্গের পুরো জায়গাটি কেটে ফেলেছে। তাও নিচের দিকে আটকে আছে। ডাক্তারকে দেখানোর পর বলেছে এগুলো লাগানো সম্ভব না।’ এসব বলতে গিয়ে দু’বোনই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
নুরুল হক ব্যাপারী বলেন, বাবা জমি দেয়নি তোমাদের সে রাগ সালমার ওপর কেন? মারলে যাদেরকে জমি দিয়েছে তাদেরকে তারা মারতে পারত। ঘটনার পরদিন রাজৈর থানায় মামলা করা হয়েছে। বড়ভাই আব্দুল হক এবং সব ছোটভাই রেজাউল ও তার স্ত্রী পলাতক রয়েছে। আমরা এর বিচার অবশ্যই চাই।
শুধু জমি দেওয়া নিয়েই কী এরকম ঘটনা ঘটেছে- এ প্রশ্নের জবাবে নুরুল হক বলেন, সালমার দীর্ঘ দিনের সংসার জীবনে কেউ তাকে খারাপ বলতে পারেনি। তার সঙ্গে সবার ভালো সম্পর্ক ছিল। জমি সংক্রান্ত ক্ষোভ ছাড়া আর কোন ঘটনা নেই বলে দাবি করেন তিনি। অন্য কোনো ঘটনা আছে বলে তার বোনেরাও মনে করেন না।
এ প্রসঙ্গে রাজৈর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আছাবুর রহমান জানান, এ ঘটনায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে একটি মামলা হয়েছে। আসামিরা পলাতক রয়েছে। তাদের ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। এছাড়া মামলার তদন্ত কাজও চলছে।(রাইজিংবিডি)