সিরিয়া থেকে শরণার্থীদের সাধারণত নৌকায় কিংবা বাসে বা কখনো কখনো হেঁটে ইউরোপের দিকে আসার দৃশ্য দেখতে এখন কমবেশি সবাই অভ্যস্ত।
কিন্তু রাশিয়ার উত্তর পশ্চিমাঞ্চল হয়ে নরওয়ে ঢোকার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন দৃশ্য।
অপ্রচলিত ও অত্যন্ত নতুন এ পথে শরণার্থীদের ইউরোপ যাত্রার দীর্ঘ পথের মধ্যে মাত্র ১২০ মিটার পথ পাড়ি দেয়ার জন্যে তাদের কিনতে হচ্ছে সাইকেল।
কারণ রাশিয়ার পুলিশের নির্দেশ অনুযায়ী সীমান্তের ওইটুকু পথ হেঁটে পার হওয়া যাবেনা।
নরওয়ের সীমান্ত পুলিশ কর্মকর্তা স্টেইন হানসেন বলছেন, “ফেব্রুয়ারি থেকে এটি শুরু । ছয় জন সীমান্ত অতিক্রম করে বাই সাইকেলে করে। এখানে এসে তারা আশ্রয় প্রার্থনা করে। এটি সীমান্ত অতিক্রমের নতুন পথ। কিন্তু অক্টোবরে এসে আশ্রয় প্রার্থনাকারীদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১০০ জনে।”
মাঝে মধ্যেই দল বেঁধে শরণার্থীরা সীমান্ত পাড়ি দেয় সাইকেল চালিয়ে।
আর মাত্র একশ মিটারের কিছুটা বেশি পথ সাইকেল চালিয়ে এসে নরওয়েতে ঢুকেই তাদের একটি আবেদন করতে হয় আশ্রয়ের জন্যে। একই সাথে ফেলে দিতে হয় সাইকেলটিও।
এভাবে অনেক বাইসাইকেল সেখানে পরিত্যক্ত হয়ে যায়। দু একদিন পরপর ট্রাকে করে সেগুলো আবার সরিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ।
বিবিসির সংবাদদাতা বলছে শরণার্থীদের জন্যে নতুন এ পথটি আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কারণ এখানে সহজেই অনুমতি মিলছে নরওয়ের কর্তৃপক্ষের দিক থেকে।
তিনি বলেন, “গত বছরের পুরো সময়ে মাত্র সাত জন এ পথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপে গিয়েছিলো। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এ পথ পাড়ি দেয়ার শরণার্থীর সংখ্যা পাঁচ হাজারে গিয়ে ঠেকবে বলে মনে করা হচ্ছে। সীমান্ত অতিক্রমের পর শরণার্থীদের আবেদনের পর রাখা হচ্ছে স্থানীয় একটি শহরে। আর এসব শরণার্থীদের বেশিরভাগই আসছে সিরিয়া থেকে।”
সিরিয়া থেকে আসা আহমেদ বলছিলেন তিনি দু সপ্তাহ আগে রাশিয়ায় এসেছেন। তাকে দুশ ডলার দিয়ে সাইকেল কিনতে হয়েছে শুধুমাত্র সীমান্তটুকু পাড়ি দেয়ার জন্যে।
কিন্তু কেন এ পথে এসেছেন বিবিসি সংবাদদাতার এমন প্রশ্নের জবাবে তার উত্তর ছিল অত্যন্ত সহজ। “কারণ এটা ভালো ও নিরাপদ পথ। সাগরে পাড়ি দিয়ে যাওয়াটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। নরওয়ে যাওয়ার জন্যে এটাই ভালো রুট। গ্রিস বা সার্বিয়ার সীমান্তও ততটা ভালো নয়। অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে। সেই তুলনায় এটা অত্যন্ত ভালো পথ।”
ঠাণ্ডা কিংবা দুর্গম পথ কোনটাই তত বিপজ্জনক নয় যতটা বিপদসংকুল জীবন আর পথ পাড়ি দিয়ে তারা ওই সীমান্তে পৌঁছান। সুমেরু অঞ্চলের এই স্থানটিতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, সাথে রয়েছে ঝড়ের প্রকোপ। তারপরেও কর্তৃপক্ষের ধারণা সামনের দিনগুলোতে এ পথে আরও বাড়বে শরণার্থীর সংখ্যা।
সূত্র : বিবিসি