Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

obama putinমধ্যপ্রাচ্য থেকে বর্তমানে হাজার হাজার মানুষ ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছে। ইউরোপের দেশগুলোর সীমান্তে তাই সৃষ্টি হয়েছে এক করুণ মানবিক পরিস্থিতি। অন্যদিকে এসব শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়া নিয়ে সমস্যায় রয়েছে ইউরোপও। চলমান এ শরণার্থী সমস্যা শিগগিরই সমাধান হচ্ছে না। এক্ষেত্রে ইউরোপকে মনে রাখতে হবে, বর্তমান সমস্যার শিকড় রয়েছে সিরিয়ায়। যত দিন না দেশটিতে গৃহযুদ্ধের অবসান হচ্ছে, তত দিন শরণার্থী সমস্যার সমাধানও সম্ভব নয়।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকছেন কিনা, সেটি গৃহযুদ্ধ সমাপ্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আসাদ যে সিরিয়া সংকটের অন্যতম ক্রীড়ানক হতে যাচ্ছেন, তা জানা হয়ে গিয়েছিল ২০১১ সালেই— যখন গণতন্ত্রের পক্ষে আন্দোলনরত অজস্র মানুষকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

chardike-ad

সাম্প্রতিক সময়ে তাই আসাদের ক্ষমতায় থাকা না-থাকার ওপর নির্ভর করছে সমাধানের পথ। এরই মধ্যে এ নিয়ে জাতিসংঘের সম্মেলনে মতভেদ হয়েছে বারাক ওবামা ও ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে। পুতিন চাইছেন আসাদকে ক্ষমতার কেন্দ্রে রেখেই সিরিয়া সংকটের সমাধান করতে। তার মতে, সিরিয়া ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রাধান্য কমাতে এখন সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে একত্রে বিমান হামলা চালানোর বিষয়টিও নাকচ করেনি দেশটি। কিন্তু সবই রাশিয়া করতে চায় আসাদকে ক্ষমতায় রেখে। বর্তমানে আসাদকে সামরিক সহায়তাও দিচ্ছে দেশটি। তবে সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের বা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংঘাতে যেতে ইচ্ছুক নয় ক্রেমলিন। এক্ষেত্রে আশির দশকের আফগানিস্তান মডেলের বদলে নব্বইয়ের দশকের বসনিয়ার মতো করেই সিরিয়ার সাম্প্রতিক সমস্যার সমাধান করতে চায় তারা।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বক্তব্য, সরতে হবে আসাদকে। এর পর একজন নতুন ও নিরপেক্ষ নেতার নেতৃত্বে গড়ে তুলতে হবে সিরিয়াকে। বারাক ওবামা এরই মধ্যে বলে দিয়েছেন, ক্ষমতা ছাড়তে হবে আসাদকে। কিছুদিন আগে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও এ কথাই বলেছেন। এছাড়া ফ্রান্সের অভিমতও এমনটাই। সুতরাং পশ্চিমা বিশ্ব কখনই সংকট-পরবর্তী সিরিয়ায় আসাদকে ক্ষমতায় দেখতে চাইবে না। রাশিয়ার প্রস্তাবে ইউরোপ-আমেরিকার তাই অসম্মতি জানানোটাই স্বাভাবিক। এমনকি আইএসের দমনের জন্যও সেই জোটে হয়তো যোগ দেবে না পশ্চিমা দেশগুলো। তাছাড়া আসাদের সেনারা বর্তমানে সিরিয়ায় পশ্চাৎপসরণ করছে। তাই শুধু নীতিগত কারণ নয়, কৌশলগত দিক থেকেও এ সিদ্ধান্ত সুবিধের নয়।

এছাড়া আসাদ বা তার ক্ষমতা কাঠামোকে পৃষ্ঠপোষকতা করার অর্থ হচ্ছে, ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর হাতে আরো বেশি সংখ্যক সুন্নি মতাদর্শের লোক তুলে দেয়া। কেননা আইএসকে অপছন্দ করলেও আসাদের প্রতি সুন্নিদের বিতৃষ্ণা আরো বেশি। সুতরাং ভবিষ্যতে যে কূটনৈতিক সমাধানে আসাদ ক্ষমতা ত্যাগ করবেন এবং নতুন সরকার ব্যবস্থার আবির্ভাব হবে, সেটিই সুন্নিদের জন্য স্বস্তির হবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। এক্ষেত্রে যুদ্ধে জয়লাভ অসম্ভব জেনেও আসাদ যত দিন ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করবেন, তত দিনে সিরিয়ার আরো ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা।

আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরানোর প্রক্রিয়া নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মূল্য কতখানি দিতে হতে পারে, তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। মার্কিন পদ্ধতি হলো, আগ্রাসন চালিয়ে দেশটি দখল করে নেয়া, যেমনটা করা হয়েছিল ২০০৩ সালে ইরাকে। এর পর সেখানে নিজেদের আজ্ঞাবহ সরকার কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা। অথবা আঞ্চলিক বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত সরকারের পতন ঘটানো, যেমনটা করা হয়েছে লিবিয়ায়। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি কিছুটা অনুসরণ করা হচ্ছে সিরিয়ায়। আসাদের বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে সামরিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলেও খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে। যদিও মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটিতে হস্তক্ষেপ করছে না তারা। আর তারই ফলাফল হিসেবে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ মানুষের, দেশটির প্রায় অর্ধেক জনগণ এরই মধ্যে হয়ে পড়েছে উদ্বাস্তু! সেসঙ্গে ইউরোপে সৃষ্টি হয়েছে শরণার্থী সংকট।

ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের উত্থান এবং খেলাফত প্রতিষ্ঠা যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার আরেক কারণ। বর্তমানে বিশাল আয়তনের এলাকা দখল করে নিয়েছে আইএস। এখন লিবিয়া, মিসর ও অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করছে জঙ্গিগোষ্ঠীটি। বারাক ওবামা মুখে বলছেন, আইএসকে ‘সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করাই’ তার লক্ষ্য। তবে মার্কিন সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডে কিন্তু তা প্রকাশ পাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা সিরিয়ায় সুন্নিদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছে শুধু আইএসকে মোকাবেলা করার জন্য। তবে বাস্তবে এসব প্রশিক্ষিত যোদ্ধা সিরিয়ায় গিয়ে স্রেফ হারিয়ে যাচ্ছে। এরা ন্যূনতম প্রতিরোধ গড়ে তুলছে— এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউজ বলছে, ওবামা নাকি এই পরিকল্পনায় বিশ্বাসী ছিলেন না, বাধ্য হয়েই তিনি এমন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন!

বিশ্লেষকদের মতে, ওবামার এমন অতি সতর্ক ও গা-ছাড়া মনোভাব সিরিয়া সংকটকে আরো কঠিন করে তুলছে। মূলত সিরিয়ার ব্যাপারে কোনো দায় নিতে চাইছেন না তিনি। কিন্তু সিরিয়া সংকট সমাধানে ওবামা ও যুক্তরাষ্ট্রকে আরো আন্তরিক হতে হবে। এক্ষেত্রে মিত্র শক্তিগুলোকে উপযুক্ত সমর্থন দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে সিরিয়া থেকে দক্ষ জনশক্তি চলে যাচ্ছে ইউরোপের দেশগুলোয়। সেক্ষেত্রে যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে দেশটির পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে বেশ বড় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং সিরিয়ায় যুদ্ধ-পরবর্তী প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা কাঠামো নির্মাণ নিয়ে এখনই চিন্তা-ভাবনা শুরু করাও প্রয়োজন বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।