চিরচেনা মাশরাফি বিন মর্তুজা বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনের উজ্বল নক্ষত্র। বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে ক্রিকেটের মোড়লদের একের পর এক ধরাশয়ী করলেও এ যেন অন্য এক মাশরাফি। তার জন্মস্থান নড়াইলে যখনই আসেন, মাশরাফি তখন হয়ে যান একেবারে সাধাসিধে একজন মানুষ।
যেন গ্রামের মেঠোপথ ধরে ছুটে চলা দুরন্ত কোন কিশোর থেকে বেড়ে ওঠা কোন যুবক। যার কাছে কৈশোর আর যুবকবেলা- কোন সময়েরই ব্যবধান নেই। ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠা বন্ধুদের সাথে হই-হুল্লোড়, জম্পেস আড্ডায় মেতে ওঠা যেন অন্য এক মাশরাফিরই প্রতীক হয়ে ওঠে।
মাশরাফি জাতি-ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে সকলের সাথেই চলেন, ঘোরেন, কথা বলেন, আলিঙ্গন করেন। এখনও বাড়িতে এলে যাদের সঙ্গে আড্ডায় মাতেন, সময় কাটান তাদের মধ্যে রয়েছে বন্ধু সুমন, রবি, অসিম, মানষ, সাজু ও রাজু। এরা সবাই মাশরাফির অতিকাছের বন্ধু। তবে তাদের জাতি এবং পেশা কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন। আমাদের সমাজে যাদেরকে নিম্ন শ্রেনীর লোক হিসাবে গণ্য করা হয়।
কিন্তু মাশরাফি যেন আলাদা মাটি দিয়ে গড়া। তার কাছে জাত-পাত কোন ভেদাভেদ নেই। সবার সঙ্গেই পানির মত মিশে যেতে পারেন। জাত-পাতকে কখনও ভিন্ন কিছু মনে করেন না। তার বন্ধুদের মধ্যে একজন রবি। পেশায় জুতা-স্যান্ডেল সেলাই-কালি করা। এক কথায় মুচি। শহরের চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে নাম বললে, একনামে সকলেই তাকে চিনবে। একটি মেহগনী গাছের নিচে বসে সকাল থেকে রাত অবদি অন্যের পায়ের জুতা-স্যান্ডেল সেলাই বা পালিশ করেই যার নিজের এবং পরিবারের অন্যদের পেট চলে।
অপর আরেকজন সুমন। পেশায় ঝাড়ুদার। মাশরাফির পুরাতন বন্ধুদের মধ্যে একজন একসাথে ক্রিকেট খেলা থেকে শুরু করে সব সময় পাশে থাকতেন। মাশরাফি নড়াইলে আসলে বা ঢাকায় থাকলেও, সকলের সাথে যোগাযোগ রাখেন। সময় পেলেই চলে আসে নড়াইলে। খুঁজে নেন পুরাতন বন্ধুদের। যাদের সহচার্য আর অনুপ্রেরনায়, এই মাশরাফি আজ পুরো বাংলাদেশের ‘মাশরাফি বিন মর্তুজা’ হয়ে উঠেছেন। বিশ্বের বুকে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।
মাশরাফি বন্ধু রাজু বলেন, মাশরাফির মত মানুষ হয় না। সবার সাথে সব সময় ভাল ব্যবহার করে। আমরা ছোটবেলা থেকেই একসাথে থাকি। আমাদেও সঙ্গে মিশতে মাশরাফি কখনও কোন রকম নাক সিটকান্নি। ভিন্ন কিছু মনে করেনি। আগেও যেভাবে একসঙ্গে চলাফেরা করতাম, এখনও সেভাবেই সে নড়াইল এলে একসঙ্গে চলি, কথা বলি, চা খাই, আড্ডা দেই।
মাশরাফির বন্ধু সুমন বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই একসাথে চলাফেরা, খেলা-ধুলা করে বড় হয়েছি। মাশরাফি এখন আমাদের মত মানুষের সাথে না মিসলেও তো পারে। কিন্তু নড়াইলে আসার আগেই মাশরাফি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে, তবেই আসবে।
সুমন আরো জানান, মাশরাফি যতক্ষন বাড়িতে থাকেন, প্রতিদিন শত শত মাশরাফি ভক্ত আসছে ছবি তোলার জন্য।
সাজু বলেন, ঈদের দিন নামাজের পর মাশরাফিসহ আমরা ১০-১২ বন্ধু বসে আড্ডা দিচ্ছি। এর মধ্যে ও(মাশরাফি) একা মুসলিম। আর আমরা সবাই অন্য ধর্মের লোক। বিষয়টা দেখে মানুষ খুবই অবাক হচ্ছিল যেন।
তিনি আরো জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে মাশরাফি নড়াইল ত্যাগ করবেন। (বাংলামেইল২৪)
এরকম আরো কিছু নিউজঃ
## ৪০ বছর বয়সে পঙ্গু হয়ে যাবেন মাশরাফি!
## সেরা মুহূর্তের তালিকায় মাশরাফি–তাসকিনের উদযাপন
## যে তিন ক্রিকেটার কুরআনের হাফেজ
## ক্রিকেট ইতিহাসে অলস ৫ ক্রিকেটার