Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

Labour-malaysiaমালয়েশিয়ায় সঙ্গে বাংলাদেশের নিবিড় সু-সম্পর্ক গড়ে উঠলেও দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের মাঝে বিরাজ করছে চরম হতাশা। অবৈধ হওয়া বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিকরাই মূলত হতাশায় ভুগছেন। বাংলাদেশ সরকার তাদের ওয়ার্ক পারমিটের ব্যাপারে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ এখনো না নেওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দু’দেশের কূটনৈতিক, রাজনৈতি, অর্থনৈতিক ইত্যাদির কর্মকাণ্ড ও মতামত প্রায় অভিন্ন। মালয়েশিয়ার বাংলাদেশে অর্থ বিনিয়োগ ও উৎপাদিত পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে রয়েছে এক বিশেষ অবস্থান। অপরদিকে দীর্ঘদিন থেকে মালয়েশিয়া অদক্ষ, আধা-দক্ষ, দক্ষ ও প্রফেশনাল শ্রম আমদানি করে আসছে বাংলাদেশ থেকে।

chardike-ad

যুগ যুগ ধরে আমদানিকৃত এ সকল দক্ষ ও প্রফেশনালদের একটি অংশ দ্বারা গড়ে উঠেছে হাজার হাজার মালয়েশিয়ান পারিবারিক বুনিয়াদ। মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ বুনিয়াদের অবদানকে খাঠো করে দেখার মত নয়। বর্তমানে এ বুনিয়াদের জনসংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার এরও অধিক। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রম ব্যাবসায়ী ও এক শ্রেণির শ্রমিকদের দ্বারা, বাংলাদেশীয় রাজনৈতিক চর্চার ডামাডোল বাজলেও, ঐ বুনিয়াদের উন্নয়নে, ঐক্য গঠনে ও জাতীয় চেতনা বোধ সৃষ্ঠির লক্ষে, কোন কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন থেকে মালয়েশিয়ায়, বাংলাদেশি শ্রমিক আসতে থাকলেও, ১৯৯৩ থেকে মালয়েশিয়ার সরকারী সিদ্ধান্তে শ্রমিক আমদানি শুরু হয়। বিগত ২০১১ সনে জিটুজি চুক্তি হওয়ার পূর্বে আরও ৫টি চুক্তি হয় বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আমদানির কিন্তু প্রতি বারই চুক্তি অনুযায়ী শ্রম আমদানি সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই দুর্নীতির কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়, ফলে এক দিকে যেমন দুর্নীতির দায়ে, দুর্নীতিরবাজদের বিচার এবং জনগণ, দল ও এনজিও  প্রতিষ্ঠানের কাছে কারণ দর্শাতে সরকারকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে অপরদিকে তেমনি রফতানি কার্যক্রমে নেতৃত্ব দানকারী গুটি কয়েক রিক্রুটিং এজেন্সি ছাড়া বাকি সকল রিক্রুটিং এজেন্সিগুলিকে ভিসা কেনার জন্য দেয়া শত শত কোটি টাকা প্রতারিত হয়ে, বিদেশগামী শ্রমিকদের টাকা প্রতারণার দায়ে, লাইসেন্স বাতিলের নোটিশ, আদালতের নোটিশ, অফিসে তালা দিয়ে পালানোর মত ঘঠনা ঘটেছে।

শুধু তাই নয়, প্রতারিত শ্রমিকদের আর্তচিৎকার শ্রম আমদানিকারক এবং রফতানিকারক কোন কর্তৃপক্ষের অন্তরে কখনো দাগ কাটতে পারেনি।

বিগত কয়েক বছর আগে মালয়েশিয়া তার চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিক আমদানি করতো ১৯টি দেশ থেকে। নূন্যতম বেতন কাঠামো, অনুন্নোত বাসস্থান, পুলিশি হয়রানি, শ্রমিক নির্যাতন ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে বেশ কয়েকটি দেশ, শ্রম রফতানিতে অনাগ্রহ ও সীমিত করে দেয়, কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এ সকল অভিযোগ উপেক্ষা করে তার বন্ধুপ্রতীম দেশ মালয়েশিয়ার শ্রম সমস্যা সমাধানে, এবং অবকাঠামো উন্নয়নে ২০২০ ভীষণ বাস্তবায়নকে ত্বরান্নিত করতে, জিটুজি চুক্তি সম্পাদন করে।

কিন্তু এ জিটুজি চুক্তিতে শ্রম  রফতানির সর্বক্ষেত্রে সরকারের একক নিয়ন্ত্রণ এবং রিক্রুটিং এজেন্সি ও দেশি-বিদেশি এজেন্টদের দৌড়-ঝাঁপের কারণে সুসফল হতে পারেনি তার বাস্তবায়ন। ফলে মালয়েশিয়াকে পড়তে হয় আরও এক ধাপ সমস্যায়।

মালয়েশিয়ার সরকার নিরুপায় হয়ে তার সমস্যার সমাধানে বিকল্প প্রস্তাবে সম্মত হয়। শুরু হয় ডিপি-১০ এবং ডিপি-১১ এর কলিং।

সম্ভবত কর্তৃপক্ষ এমন কিছু আশা করেন নাই, যা চলমান। যাই হোক দু’দেশের সু-সম্পর্ক অটুট রাখতে, এ সমস্যার ত্বরিৎ যুক্তি সংগত সমাধান এবং সাধারন শ্রমিক আমদানি সম্পর্কিত অন্যান্য সমস্যা সমূহ দূরীকরণে যৌথ উদ্যোগ গৃহীত হবে, এটাই সকলের আশা।

বর্তমানে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি প্রায় ৭ লাখেরও অধিক সাধারণ শ্রমিক রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ৬২ হাজার বৈধ এবং বাকি সকল শ্রমিকই অবৈধ। এ অবৈধ শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় ২১ হাজার ৬ পি-প্রোগ্রামে প্রতারিত, প্রায় ১১ হাজার ভিসা নবায়নে প্রতারিত বা ব্যর্থ, প্রায় ২৩ হাজার,  স্টুডেন্ট ভিসা, ট্রেনিং ভিসা ও শিপিং ভিসায় এসে অবৈধ এবং প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ভিজিট ভিসা ও ট্রানজিটে প্রবেশ করে অবৈধ, বাকি প্রায়  ৮ হাজার নৌ ও স’ল পথে অবৈধভাবে প্রবেশ করে। মালয়েশিয়ার সরকার এ পর্যন্ত ৩ বার বিদেশি শ্রমিকদের অবৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন এবং এই ৩ বারের পরিসংখ্যানেই বাংলাদেশিরা আনুপাতিক হারে সব চেয়ে বেশি বৈধ হয়েছে এবং আনুপাতিক হারে এজেন্ট ও তাদের সাব এজেন্ট কতৃক  প্রতারিতও হয়েছে বেশি।

বাংলাদেশ ব্যতীত মালয়েশিয়ায় যে সকল বিদেশি শ্রমিক রয়েছে এবং আসছে (উদাহরণ স্বরূপ : কন্সট্রাকশনে ৯৫ শতাংশ শ্রমিক প্রতি ৮ ঘণ্টায়) ৬০ রিংগিতের নিচে কাজ করছে না এমন কি অন্যান্য সেক্টরে ও  ন্যূনতম বেতনে কাজ করতে দেখা যায়না কিন্তু বাংলাদেশি শ্রমিকরা, মালয়েশিয়ায় মালিকদের কাছে কর্মঠ ও আস্থাভাজন হিসেবে সমাদৃত থাকলেও, বেশির ভাগ শ্রমিক কন্সট্রাকশন সেক্টরে ৪০ অথবা ৫০ রিংগিতে কাজ করছে, এমনকি- যে কোন সেক্টরে ন্যূনতম বেতনের কাজ করতে তাদের অনাগ্রহ দেখা যায় না। তদুপরি- মালয়েশিয়ায় সরকার বিদেশি শ্রমিকদের জিটুজি চুক্তির মাধ্যমে যে সকল শ্রমিক দেশে চলে যেতে আগ্রহী তাদের দেশে ফেরত এবং যে সকল শ্রমিক কাজ করতে আগ্রহী তাদের লিগেলাইজ করার সুযোগ দিলেও, অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়ে বিরাট অংকের লবি সংগ্রহে কিংবা বাংলাদেশ সরকার তার অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে অনআগ্রহ কেন? তা বাংলাদেশী সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি বড় প্রশ্ন!

মালয়েশিয়ার বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও সংবাদপত্রের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, মালয়েশিয়ার এগ্রিকালচারে ৭ হাজার, প্লান্টেশনে ৩০ হাজার, সার্ভিস সেক্টরে ১৮ হাজার, মেনুফ্যাকচারিং ৬০ হাজার এবং ককন্সট্রাকশনে ১৭০ হাজার শ্রম ঘাটতি রয়েছে। তাছাড়া মালয়েশিয়ার স্বপ্ন ২০২০ ভিশন বাস্তবায়ন করতে যে অবকাঠামো নির্মাণ এর পরিকল্পনা রয়েছে, তার কাজ যথা সময়ে সম্পূর্ণ এবং তৈল ও গ্যাস প্রকল্পের বাস্তবায়ন করতে, বর্তমানে কর্মরত এবং ঘাটতিকৃত শ্রমিক আমদানি করার পরও ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর নতুনভাবে অদক্ষ, আধা-দক্ষ, দক্ষ ও প্রফেশনাল শ্রম আমদানি বাড়াতে হবে প্রায় দেড় লাখেরও বেশি করে।

মালয়েশিয়ার এ বিরাট শ্রমিক সংকটে, বাংলাদেশ সরকারকে শ্রমিক রফতানির সুযোগ গ্রহণের জন্য যেমন সুষ্ঠু নীতিমালা ও সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন, তেমনি মালয়েশিয়ান সরকারকে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী যথা সময়ে সকল কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে যাতে কোন বিঘ্ন সৃষ্ঠি না হয়, সেদিকে নজর রেখে শ্রম আমদানির নীতিমালা গ্রহণ করবেন এ-ই সকলের প্রত্যাশা ।

এদিকে নানা অপরাধে সে দেশের কারাগারে এখন বন্দী হিসেবে সাজা কাটছেন সাড়ে তিনশ’ বাংলাদেশি। আর নানা কারণে মালয়েশিয়ার পুলিশ ক্যাম্পে আটক রয়েছেন অন্তত ৩ হাজারেরও অধিক। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, শ্রমিকদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়াসহ অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়া।

মালয়েশিয়ান হাই কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এ যাবত হাজত খাটছেন প্রায় সাড়ে তিন শ’। আর নানা কারণে পুলিশ ক্যাম্পে আটক আছেন ৩ হাজারেরও অধিক। এটি সরকারি হিসাব বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলে মনে করেন প্রবাসীরা।

হাই কমিশন শ্রমিকদের এমন অবস্থার খোঁজ খবর রাখছে এবং শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে বলে জানান লেবার কন্স্যুলার মো. সায়েদুল ইসলাম মুকুল। এ ব্যাপারে প্রবাসীরা বলছেন, শ্রমিকদের অধিকার, তাদের মানবাধিকারসহ সব ধরণের সহায়তা দেয়ার জন্য সরকারের পদক্ষেপ নেয়া এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণ জরুরি।

সৌজন্যেঃ জাগো নিউজ