ভূমধ্যসাগরের জাহাজডুবিতে সাতশ’র মতো অভিবাসন প্রত্যাশী মারা গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ তাদের মৃত্যুর দায় ইইউ এড়াতে পারে না- এমন কথা ইউরোপেই উঠেছে৷ তবে সঙ্কট এড়ানোর জন্য মিলিত প্রয়াসও শুরু হয়েছে৷
গত শনিবারের মাছ ধরা জাহাজ ডুবে সাতশ’র মতো মানুষ মারা যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজতে শুরু করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ ইইউ সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সোমবার লুক্সেমবুর্গে বৈঠকে বসেছেন৷ সেখানে কী কী বিষয় আলোচিত হবে তা আগে থেকেই পরিষ্কার৷ ভাগ্যান্বেষণে ইউরোপে আসতে গিয়ে সাগরে ডুবে অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি তো আলোচনায় থাকবেই, সঙ্গে লিবিয়ার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিও খুব গুরুত্ব পাবে৷ সম্প্রতি লিবিয়া থেকে প্রচুর মানুষ ইটালিতে প্রবেশের চেষ্টা করছে৷ শনিবার ডুবে যাওয়া জাহাজটিও লিবিয়া থেকেই ইটালিতে যাচ্ছিল৷ ৭০ ফুট দীর্ঘ জাহাজটিতে গাদাগাদি করে থাকা সাতশ’রও বেশি মানুষের মধ্যে মাত্র ২৮ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে৷ বাকি সবাই মারা গেছেন৷
ফ্রান্সের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্নার্ড কুচনার মনে করেন, উদ্ধারকাজে ইউরোপের এই ব্যর্থতা লজ্জাজনক৷ ফরাসি সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘‘ইউরোপ বিপদগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে৷ আমাদের জন্য এটা খুব লজ্জাজনক৷’
ভূমধ্যসাগর থেকে অভিবাসন প্রত্যাশীদের উদ্ধারের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বিত প্রয়াস গত অক্টোবর থেকে বন্ধ৷ এখন শুধু ‘ট্রাইটন’ নামের একটি কার্যক্রম চলছে, যার অধীনে শুধু ইউরোপীয় দেশগুলোর ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত জলসীমার তদারক করা যায়৷ বহিরাগতদের প্রবেশে বাধা দেয়াই তার কাজ, উদ্ধার করা নয়৷ অভিবাসীদের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইওএম-এর প্রধান উইলিয়াম ল্যাসি সুইং এ বিষয়টি তুলে ধরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অক্টোবর থেকে বন্ধ হওয়া কার্যক্রমটি পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি মনে করেন, ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সমন্বিত কার্যক্রমটির কারণে দুই লাখের মতো মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছিল, সেটি বন্ধ হওয়ার কারণেই অভিবাসন প্রত্যাশীদের মৃত্যুহার অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে৷
এদিকে অভিবাসন প্রত্যাশীদের অনাকাঙ্খিত মৃত্যু এড়ানোর উপায় খুঁজতে ইউরোপীয় দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা লুক্সেমবুর্গে বৈঠকে বসেছেন৷ মূলত ইটালির আহ্বানেই এই বৈঠক আয়োজন করা হয়৷ বৈঠকের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে ইটালির প্রধানমন্ত্রী মাটেও রেনসি মরিয়া অভিবাসন প্রত্যাশীদের ‘২১ শতকের ক্রীতদাস’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘‘এতগুলো মানুষের এমন করুণ পরিণতির পরও ইউরোপে কোনো ঐক্যের মনোভাব নেই- এটা খুব আশ্চর্যজনক বিষয়৷’