Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ziaur rahmanআমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম শহর শিকাগোতে একটি রাস্তার একাংশ প্রয়াত বাংলাদেশী রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে নামকরণ করার ফলে তুমুল বাকবিতণ্ডা শুরু হয়েছে, যা আদালত পেরিয়ে কূটনৈতিক ঝামেলার সৃষ্টি করছে।

শিকাগো ট্রিবিউন পত্রিকার একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, শহরের রজার্স পার্ক এলাকার নর্থ ক্লার্ক স্ট্রিট-এর একাংশকে সম্মানসূচক ‘জিয়াউর রহমান ওয়ে’ নামকরণের প্রস্তাব শিকাগো সিটি কাউন্সিলে কোনো বিতর্ক ছাড়াই অনুমোদন পায়।

chardike-ad

এটা কোনো বড় ঘটনা ছিল না। কেননা, বিগত ৫০ বছরে শিকাগোর কাউন্সিলর বা ‘অল্ডারম্যান’-রা বিভিন্ন সড়কে এরকম ১,৫০০ সম্মানসূচক নামকরণ করেছেন, লিখছেন ট্রিবিউনের প্রতিবেদক জন বার্ন।

কিন্তু এই রাস্তা বাংলাদেশের প্রাক্তন এই রাষ্ট্রপতির নামে নামকরণের ফলে শুরু হয় আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ঝগড়া, আদালতে মামলা এবং শিকাগোর মাটিতে দক্ষিণ এশিয়ার এক দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বচসা পুনরাবৃত্তি।

শহরের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের অল্ডারম্যান জো মোর নামকরণকে সমর্থন করেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সুপারিশকে সাড়া দিয়ে, যাদের মধ্যে একজন তার নির্বাচনী ব্যায়ে ১,০০০ ডলার অনুদান দিয়েছিলেন।

কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে মি: মোর যখন ‘জিয়াউর রহমান ওয়ে’ নামফলক উন্মোচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন শিকাগোর মেয়র রাহম এমানুয়েলের অফিস থেকে যোগাযোগ করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। জিয়াউর রহমানের নামে রাস্তার সম্মানসূচক নামকরণের প্রতিবাদ করেছেন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন।

রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দীন বলেছেন জিয়াউর রহমান এই সম্মানের যোগ্য নন।

এখানে, রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দীন ১৯৭৫ সালে দেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমানের হত্যার সাথে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্তার কথা উল্লেখ করেন বলে শিকাগো ট্রিবিউনের রিপোর্টে বলা হয়েছে।

“আমাদের বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্র আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের পক্ষে,” রাষ্ট্রদূত বলেন।

“জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে একজন স্বৈরাচার এবং নিপীড়ক হিসেবে শাসন করেন, এবং তাকে সম্মান দেয়া আমেরিকার মূল্যবোধের পরিপন্থী,” তিনি বলেন।

স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসের আপত্তির কথা জানানো সত্ত্বেও জো মোর নর্থ ক্লার্ক স্ট্রিট-এর দুটো ব্লকে ‘জিয়াউর রহমান ওয়ে’ নামফলক স্থাপন করেন।

তিনি নিজ উদ্যোগে কিছু গবেষণা করে দেখতে পান যে, বাংলাদেশের রাজনীতির দু’পক্ষর বিরুদ্ধেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে। তবে সব কিছু বিবেচনা করে জিয়াউর রহমানকেই তার কাছে ‘গুড গায়’ বা ভালো মানুষ মনে হয়েছে।

মি: মোর পরে নিজে রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দীনকে ফোন করে খবরটি দেন।

“আমি তাকে বললাম, আমার দেশের রাজধানীর একটি বিমানবন্দর যখন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের নামে নামকরণ করা হয়েছিল, তখন আমার অনেক আপত্তি ছিল। কিন্তু আমি সেই ক্ষোভ কাটিয়ে উঠিয়েছি,” মি. মোর বলেন।

মি. মোর বলেন, ১৯৯৭ সালে ডেভন এ্যাভেন্যূ-র একাংশকে সম্মানসূচক ‘শেখ মুজিব ওয়ে’ নামে নামকরণ করা হয়।

“কাজেই, অন্য পক্ষেরও এখানে স্বীকৃতি আছে”, তিনি বলেন।

কিন্তু ‘জিয়াউর রহমান ওয়ে’ নামকরণের ফলে শিকাগো সিটি কাউন্সিলকে আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে।

শিকাগোর এক দল বাংলাদেশী নামকরণ বাতিলের সুপারিশ করে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করে। তাদের যুক্তি ছিল, জিয়াউর রহমান এই সম্মানের যোগ্য নন।

তবে মঙ্গলবার বিচারক শিকাগো সিটি কাউন্সিলের পক্ষে রায় দেন এবং মামলা প্রত্যাখ্যান করেন।

কিন্তু ঘটনা সেখানেই শেষ হয়নি।

মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী আল-হারুন হুসেইন শিকাগো ট্রিবিউনকে বলেছেন, তার মক্কেলরা মামলাটি পুনরায় দায়ের করার কথা ভাবছেন।

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসও তাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তারা আমেরিকার বিভিন্ন বড় শহরগুলোর কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখে জিয়াউর রহমান সম্পর্কে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে, যাতে অন্য কোন শহরে প্রাক্তন সেনা শাসককে শিকাগোর মত সম্মান না দেওয়া হয়।

শিকাগোর রাস্তার সম্মানসূচক নামকরণ নিয়ে বিতর্ক খুব বিরল একটি ঘটনা।

এ ধরনের নামকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়ার্ডের অল্ডারম্যানরা তাদের রাজনৈতিক সমর্থক, এলাকার বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন জাতীয় গোষ্ঠী, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে খুশি করতে চান।– বিবিসি।