Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

middle_eastবিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, সিরিয়ায় তিন বছর ধরে চলমান গৃহযুদ্ধ এবং ইসলামিক স্টেট অব সিরিয়া অ্যান্ড দ্য লেভান্টের (আইএস) উত্থানে সার্বিক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩৫ বিলিয়ন ডলার। খবর ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

এ নিয়ে নিজেদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক জানায়, এ সংকটের কারণে সফল অর্থনৈতিক একীভূতকরণের দ্বারপ্রান্তে চলে আসা একগুচ্ছ দেশের গতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যুদ্ধের কারণে এবং এ অঞ্চলের অর্থনীতি ও বাণিজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সিরিয়ার মাথাপিছু কল্যাণ তহবিলের লোকসান হয়েছে ১৬ শতাংশ, ইরাকের ১৪ এবং লেবাননের ১১ শতাংশ।

chardike-ad

প্রতিবেদনে জানানো হয়, কয়েক বছর আগেও আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে এ অঞ্চলের দেশগুলো নিজেদের মাঝে অর্থনৈতিক বন্ধন আরো সমুন্নত করার পথে ছিল। কিন্তু সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ও আইএসের উত্থান সে গতিকে বলা যায় একেবারেই থামিয়ে দিয়েছে। সিরিয়া ও ইরাকের এক বড় অংশজুড়ে এ সংকট ঘনীভূত হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের বসবাসকারীদের জীবনে প্রভূত সংকট নেমে এসেছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের বিপরীতে সুবিধাভোগী কিছু শ্রেণীরও আবির্ভাব হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ও প্রতিবেদনের লেখক এলেনা ইয়ানকোভিচিনা ও মারোস ইভানিচ বলেন, এ গৃহযুদ্ধ ও আইএসের উত্থান আঞ্চলিকভাবে প্রভূত মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধন করেছে। পাশাপাশি বাণিজ্য সংহতকরণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় এ অঞ্চলের আর্থিক উন্নয়নের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে সার্বিক অর্থনৈতিক ক্ষতির তুলনায় অনেকটাই ম্লান যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ক্ষতি। অভিবাসন ও মৃত্যুর কারণে শ্রমিকদের সংখ্যা ও দক্ষতা হ্রাস, অবকাঠামো ধ্বংস, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতিকে লেখকদ্বয় যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ক্ষতি হিসেবে গণ্য করেছেন।

সংঘর্ষের আগে সিরিয়া, লেবানন, তুরস্ক, জর্ডান, মিসর ও ইরাকের মাঝে বাণিজ্যের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। কিন্তু বর্তমানে এ বাণিজ্যের গতি অনেকটা থমকে পড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদারে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় আঞ্চলিক বাণিজ্য একীভূতকরণ প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দিয়েছে এ সংঘাত।’

এ আঞ্চলিক বাণিজ্য একীভূতকরণের সুবিধাকে যোগ করলে যুদ্ধের ক্ষতির মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। অর্থাত্ সিরিয়ার মাথাপিছু কল্যাণ ব্যয়ে ক্ষতির হার ২৩ শতাংশ, ইরাকের ২৮, মিসরের ১০ এবং জর্ডানের ৮ শতাংশ। প্রতিবেদনের লেখকদ্বয়ের হিসাবে, সব মিলিয়ে এ ছয়টি দেশের ক্ষতি হয়েছে ৩৫ বিলিয়ন ডলার (২০০৭ সালের ডলার মূল্যে)। এর অর্থ, যুদ্ধ না হলে এ দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপির আকার বাড়ত ৩৫ বিলিয়ন ডলার।

ক্ষতির মাত্রাটি একেকটি দেশের ক্ষেত্রে একেক রকম। সিরিয়ার প্রায় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়েছেন বাড়িওয়ালা। নিরাপত্তার সন্ধানে অধিকাংশ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ায় ভাড়া দেয়ার মতো লোক খুঁজে পাচ্ছেন না বাড়ি মালিকরা। অন্যদিকে শরণার্থীদের আগমনে মজুরি কমে যাওয়ায় লাভবান হচ্ছে লেবানন ও তুরস্কের শিল্প মালিকরা।

আকারে বৃহত্তর হওয়ায় এ অঞ্চলের বাণিজ্য ধসে পড়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তুরস্ক। দেশটি প্রায় ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের মতো সম্ভাব্য বাণিজ্য হারিয়েছে। বিপরীতে মিসর ও ইরাক প্রত্যেকে ৬০০ মিলিয়ন ডলারের মতো সম্ভাব্য রফতানি রাজস্ব হারিয়েছে। তবে তুরস্ক, লেবানন ও জর্ডানে শরণার্থীদের সেবা প্রদানে সৃষ্ট খরচগুলো এক্ষেত্রে যোগ করা হয়নি। বলা বাহুল্য, সে খরচ যোগ করা হলে দেশগুলোর ক্ষতির মাত্রা আরো বেড়ে যাবে।

লেখকদ্বয় জানান, আইএস ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলের তেল খাতের দখল নিতে পারলে সার্বিক পরিস্থিতি আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। বণিকবার্তা।