Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
zafor-ikbal
মুহম্মদ জাফর ইকবাল

এতো দুঃখ নিয়ে আমি আর আগে কখনও কাগজ-কলম নিয়ে বসিনি। গত বছর যখন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে সবাই মিলে চিৎকার চেঁচামেচি করছিলাম তখন একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলে গেছে আসলে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। কিছু কিছু ‘সাজেশন’ প্রশ্নপত্রের সাথে ঘটনাক্রমে মিলে গেছে মাত্র! যারা এটা বলেছেন তারা নিজেরাও জানেন যে, দেশের মানুষ এতবড় নির্বোধ নয় যে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই কথাগুলো বিশ্বাস করবে। আমরা ভেবেছিলাম যথেষ্ট চেঁচামেচি করার কারণে এবারে হয়তো সবাই একটু বাড়তি সতর্ক থাকবে, প্রশ্নপত্র হয়তো এবারে ফাঁস হবে না।

আবারো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। আমার কাছে আগের রাতে পাঠানো হয়েছে, পরের দিন পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সাথে মিলিয়ে দেখেছি। কেউ যদি বিশ্বাস না করেন নিজের চোখে দেখতে পারেন (ছবি)। আমি যখন এই লেখাটি লিখছি তখন আবার আমার কাছে প্রশ্নপত্রসহ ই-মেইল এসেছে। ইচ্ছে করলে কালকে মিলিয়ে দেখতে পারব, কিন্তু আর রুচি হচ্ছে না।

chardike-ad

fasযারা আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা চালান আমি অনুমান করতে পারি এই দেশের লেখাপড়া নিয়ে তাদের নিশ্চয়ই বিন্দুমাত্র মাথা ব্যথা নেই। যদি থাকতো, তাহলে নিশ্চয়ই এরকম একটা কিছু ঘটতে দিতেন না। আমাদের শিক্ষানীতিতে পঞ্চম শ্রেণির শিশুদের জন্য কোনো পাবলিক পরীক্ষার কথা বলা নেই। আমলারা নিজেদের উর্বর মস্তিষ্ক থেকে এটি বের করে জোর করে এটা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাবা মায়েরা আগে আরো বড় হওয়ার পর ছেলেমেয়েদের কোচিং করতে পাঠাতেন, এখন এই শিশুদেরকেই গোল্ডেন ফাইভ পাওয়ার জন্য কোচিং করতে পাঠাচ্ছেন। তাতেই শেষ হয়ে যায়নি- এখন তাদের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করা হচ্ছে! ছোট ছোট শিশুদের হাতে ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্ন ধরিয়ে দিয়ে পরীক্ষা দিতে পাঠানো হচ্ছে। সেই ছোট ছোট শিশুদের অন্যায় করতে শেখানো হচ্ছে- পৃথিবীতে কোথাও এই নজীর নেই, যেখানে একটি রাষ্ট্র তার দেশের শিশুদের অন্যায় করতে শেখায়। একটা দেশের মেরুদণ্ড পুরোপুরি ভেঙে দেওয়ার কী এর চাইতে পরিপূর্ণ কোনো পদ্ধতি আছে? নাই। পৃথিবীতে কখনও ছিল না। ভবিষ্যতেও কখনো থাকবে না। শুধুমাত্র আমাদের দেশেই কিছু আমরা আর কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষেরা একটা শিক্ষাব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করার একটা প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। যে জাতি শৈশবে অন্যায় করতে শিখে বড় হয় সেই জাতি দিয়ে আমরা কী করবো?

এই দেশের শিক্ষাব্যবস্থার হর্তা কর্তা বিধাতারা, আপনাদের কাছে করজোরে প্রার্থনা করি, আমাদের দেশের শিশুদের আপনারা মুক্তি দিন। এই শিশুগুলো যদি কোনো পরীক্ষা না দিয়ে শুধুমাত্র বইগুলো নাড়াচাড়া করে সময় কাটিয়ে দিতো তাহলে অন্তত তাদের একটা সুন্দর শৈশব থাকতো, তারা অন্তত অন্যায় করা শিখতো না।

আমাদের শিশুদের লেখাপড়ার দরকার নেই, দোহাই আপনাদের, তাদের ক্রিমিনাল করে বড় করবেন না।

২৫.১১.১৪