ভারত থেকে সরবরাহকৃত লাইনে ত্রুটি দেখা দেয়ায় জাতীয় গ্রিডে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সারাদেশে একযোগে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছে। বিদ্যুতের এমন বিপর্যয় আগে কখনো ঘটেছে বলে কেউ স্মরণ করতে পারেননি। এর আগে বিভিন্ন সময় জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক বিভ্রাট, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা দেখা দিলেও তা ছিল আংশিক। শনিবারের মতো একযোগে সারাদেশ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে যাওয়া আগে কখনো দেখেনি দেশবাসী।
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৯টি, নরসিংদীর ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬টি ইউনিটই বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ভেড়ামায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ত্রুটির কারণে সবকটি ইউনিটে একযোগে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিপর্যয় দেখা দেয়।
পিডিবির চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, জরুরি মেরামত চলছে। এরই মধ্যে কয়েকটি কেন্দ্র চালু হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থায় শাহজালাল বিমানবন্দর ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ আশেপাশের ছয়টি জেলায় বিদ্যুৎ বন্ধ রয়েছে। শনিবার বেলা ১২টা পাঁচ মিনিটের দিকে বিকট শব্দ করে একের পর এক সবকটি ইউনিট অচল হয়ে পড়ে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারিগরি বিভাগের পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান জানান, ভেড়ামারা বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ত্রুটির কারণে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয়। এ সময় (দুপুর পৌনে ১টা) আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছয়টি ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে তিনটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন একযোগে বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি জানান, জাতীয় গ্রিডের ত্রুটি সারাতে নিজস্ব প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। তবে কখন সবকটি ইউনিট চালু হবে তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
সাজ্জাদুর রহমান আরো জানান, একযোগে ৯টি ইউনিট বন্ধ হবার কারণে জাতীয় গ্রিডে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
গ্রিডের সমস্যা এখনো শনাক্ত করা যায়নি। এরই মধ্যে এলাকাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু হচ্ছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। শনিবার দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছয় হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। অন্যদিকে বেলা তিনটা পর্যন্ত মাত্র ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা সময় লাগবে বলে জানা গেছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ বাকি বলেন, জাতীয় গ্রিড বসে গেছে। তাই সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। কখন নাগাদ ফের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে তা বলা মুশকিল।
বিদ্যুৎ সরবরাহ দ্রুত স্বাভাবিক করতে কাজ চলছে। শনিবার বিকেল ৫টা নাগাদ বিদ্যুৎব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে পারে বলে জানিয়েছে বিদুৎ বিভাগ।
আমাদের প্রতিনিধিদের সূত্রে জানা গেছে দেশের কোথাও বিদ্যুৎ নেই। ইতিমধ্যে ইন্টারনেট ব্যবস্থাও নাজুক হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় সারাদেশের মানুষেরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেকেই নতুন বার্তা অফিসে ফোন করে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে কখন তা জানতে চেয়েছেন।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু আশ্বস্ত করেছেন, জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এ অবস্থার জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, বিদ্যুৎ না থাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দন ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষ ব্যবস্থায় সীমিত আকারে চলছে এসবের কার্যক্রম। নতুনবার্তা।