Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

5296ce150878c3eae7af95d8956f9efd-BRAINY_2758840Bমানুষের মনের কথা বুঝতে পারে—এমন যন্ত্র তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। ব্যাপারটা হয়তো বিজ্ঞান কল্পকাহিনির মতো শোনায়, কিন্তু মোটেও অবাস্তব নয়। মানুষের মস্তিষ্কের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে এই যন্ত্র ব্যবহার করে কিছু কিছু ভাবনা ও ‘ভেতরের কথা’ জানা সম্ভব বলে দাবি করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওই গবেষকেরা। এই যন্ত্র ব্যবহার করে ভবিষ্যতে বাক্প্রতিবন্ধীরা মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

মনের ভাষা বোঝার উপযোগী যন্ত্রটির নকশা তৈরির কৃতিত্ব যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলিতে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের। তাঁরা বলছেন, ওই যন্ত্র এবং সহায়ক কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনাকে রূপান্তর করে কিছু ধ্বনি ও শব্দে প্রকাশ করা সম্ভব হবে।

chardike-ad

বিজ্ঞানীদের মতে, মনের কথাগুলো কম্পিউটার প্রোগ্রামের সহায়তায় শব্দ বা উচ্চারিত ভাষায় প্রকাশ করতে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু স্নায়ুকোষ বা নিউরনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি শব্দ তৈরির নেপথ্যে নিউরনের ভিন্ন ভিন্ন বিন্যাস কাজ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গবেষকেরা একটি গাণিতিক সূত্র তৈরির কাজ শুরু করেছেন, যা মস্তিষ্কের কার্যকলাপকে শব্দে রূপান্তর করে প্রকাশের ব্যাপারে সহায়তা করে। ওই বিজ্ঞানীদের আশা, একদিন বাক্প্রতিবন্ধীরা এই যন্ত্র ব্যবহার করে সহজেই মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবেন।

সংশ্লিষ্ট গবেষক ব্রায়ান পাসলে বিজ্ঞান সাময়িকী নিউ সায়েন্টিস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, উচ্চারণ করে পত্রিকা, বই বা অন্য কিছু পড়ার সময় মাথার মধ্যে একটি ‘কণ্ঠস্বর’ শুনতে পাওয়া যায়। ওই ‘কণ্ঠের’ সঙ্গে যুক্ত মস্তিষ্কের কার্যকলাপের সংকেত ভেঙে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা একটি বিশেষ যন্ত্র তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। যন্ত্রটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা কথা বলতে অসমর্থ মানুষের জন্য সহায়ক হতে পারে।

মৃগীরোগের চিকিৎসা গ্রহণকারী সাতজন রোগীকে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাঁদের শিশুতোষ ছড়া হাম্পটি-ডাম্পটি, প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির গেটিসবারি ভাষণ অথবা তাঁর অভিষেক ভাষণ পড়তে দেওয়া হয়। শব্দ করে বা জোরে জোরে পড়া ও মনে মনে পড়া—উভয় ক্ষেত্রেই ওই সাত রোগীর মস্তিষ্কের কার্যকলাপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

শব্দ করে পড়ার সময় রোগীদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপের সংকেত ভাঙার একটি সাময়িক সূত্র তৈরি করেন গবেষকেরা। এটি রোগীর মস্তিষ্কের কার্যকলাপকে রূপান্তর করে প্রদর্শনযোগ্যভাবে উপস্থাপন করে। পরে মনে মনে পড়ার সময়ে রোগীদের মস্তিষ্কে চলা কার্যকলাপের ক্ষেত্রে ওই সূত্র প্রয়োগ করে অনেক চিন্তাকে শব্দে প্রকাশ করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সংগীতশিল্পী পিংক ফ্লয়েডের গান চলার সময় এর তালের সঙ্গে মস্তিষ্কের কোন অংশের নিউরন কাজ করে, তা ওই সূত্র প্রয়োগ করে জানা যায়। তবে গবেষণার শুরুতে আশা করা হয়েছিল, মানুষের বাক্শক্তি হারিয়ে যাওয়ার পরের চিন্তাগুলো সূত্রটির মাধ্যমে জানা যাবে।

নতুন যন্ত্রটি ও এর সহায়ক কম্পিউটার প্রোগ্রাম নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। ২০১১ সালে গবেষকেরা মাদাগাস্কার টু, পিংক প্যানথার টু ও স্টার ট্রেক চলচ্চিত্রগুলো কিছু মানুষকে দেখতে দিয়ে তাঁদের মস্তিকে রক্তের প্রবাহ পরিমাপ করেন।
এ থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে গবেষকেরা দেখতে পান, কোনো কিছু দেখার ফলে মস্তিষ্কের কী প্রতিক্রিয়া হয়। এ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে গবেষকেরা একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করেন, যা ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি কী দেখছেন, তা শনাক্ত করা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক মানুষের মাথার ওপর বসানো একটি বিশেষ বৈদ্যুতিক যন্ত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ‘হ্যাঁ’, ‘না’, ‘গরম’, ‘ঠান্ডা’, ‘ক্ষুধার্ত’, ‘তৃষ্ণার্ত’, ‘সম্ভাষণ’, ‘বিদায়’, ‘বেশি’, ‘কম’ ইত্যাদি নির্দেশ শনাক্ত করতে সক্ষম হন। সূত্র: টেলিগ্রাফ।