অসময়ে ক্লান্তি বা ঘুমের ভাব
আপনি কি রাতে পার্টিতে গিয়েছিলেন কিংবা আপনার ছোট্ট শিশুটি কান্নাকাটি করেছে সারা রাত? নাকি রাত জেগে অফিসের বিশেষ প্রজেক্টের কাজটি শেষ করতে হয়েছে? কিন্তু এখন অফিসে বসে যে কারণেই আপনার ক্লান্ত বোধ হোক না কেন, আপনাকে তো জেগে থাকতেই হবে। অর্থাৎ ‘বস’-এর নজরে পরার আগে পুরো মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে হবে।
দিনের শুরু
রাতে কোনো কারণে ঘুমের ব্যাঘাত হলে ঘুম থেকে উঠে কুসুম-কুসুম গরম পানি দিয়ে অবশ্যই গোসল করতে হবে। সব শেষে শরীরে, হাতে-পায়ে খুব ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন। এতে শরীরে রক্ত চলাচল তো ভালো হবেই, হিম ঠান্ডা জল শরীরটাকেও করবে ঝরঝরে আর অনেক হালকা। এছাড়া চাইলে শাওয়ারের নীচে গান গাইতে গাইতে মনটাকেও প্রফুল্ল করে নিতে পারেন।
সকালের নাস্তা
একটি সুন্দর দিনের জন্য সকালে ভালোভাবে নাস্তা করা খুব জরুরি। তবে ভারি নাস্তা না করে রুটি, কলা বা অন্য কোনো ফল, সামান্য দই, মিষ্টি আর সঙ্গে কফি বা চা খান। এতে পেট ভরবে, বাড়বে ‘এনার্জি’-ও। চাকরিজীবী বা ছাত্রদের জন্য সকালের প্রতিটি মিনিটই খুব মূল্যবান। কিন্তু তারপরও নাস্তার জন্য একটু সময় বের করে যে নিতেই হবে!
গান শুনুন
গান মানুষের আবেগকে নাড়া দেয় এবং মস্তিষ্কের কোষগুলিকে জাগিয়ে তোলে। তাই অফিসে অসময়ে ক্লান্ত বোধ করলে প্রিয় গানটি চালিয়ে দিন এবং নিজেও মাথা নেড়ে নেড়ে গুন গুন করুন। ঘরে সহকর্মীরা থাকলে অবশ্যই কানে হেডফোন লাগিয়ে শুনবেন। এক্ষেত্রে হাল্কা, ধীর গান উপযোগী হলেও, হিপহপ, জ্যাজ বা হালকা রক মিউজিকও চলতে পারে।
মুখ, চোখ, কান, নাক সজাগ তো?
মুখকে সজাগ রাখতে পুদিনা পাতার ফ্লেবার দেয়া চুইংগাম চিবাতে থাকুন। নাকের জন্য পুদিনা পাতার তেলের গন্ধ নিতে পারেন। অন্যদিকে চোখের আরামের জন্য একটু চোখ বন্ধ করুন বা জানালা দিয়ে বাইরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারেন। আর কানকে সজাগ করতে লতিটা একটু টিপে টিপে আলতো করে নীচের দিকে কয়েকবার টানুন।
শরীরকে জাগিয়ে তুলুন
কর্মক্ষেত্র বা শিক্ষাঙ্গন যেখানেই হোক না কেন ক্লান্ত লাগলে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে লিফ্টের পরিবর্তে হেঁটে যান। সম্ভব হলে ক্যান্টিন থেকে ঘুরে আসুন। পথে কারো সঙ্গে দেখা হলে দু-চার মিনিট হালকা বিষয়ে কথা বলুন। আর বাইরে যাবার সুবিধা থাকলে ১০ মিনিটের জন্য খোলা বাতাসে হেঁটে আসতে পারেন, চোখে-মুখে দিতে পারেন পানির ঝাপটাও।
হাত-পা নাড়ানো
বেশিক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ কিছুটা ক্লান্ত হয়ে যায়। তাই অন্তত এক থেকে দুই ঘণ্টা পরপর একবার করে দাঁড়িয়ে বা উঠে একটু হাঁটাহাঁটি বা হাত-পা নাড়াচাড়া করা উচিত। মাঝে মাঝে ঘাড়টাকেও একটু এদিক সেদিক ঘোরাবেন। তাছাড়া চেয়ারে বসে পা দুটোকে শব্দ করে নাচাতে পারেন– এতে ঘুম তাড়ানো খুব সহজ।
এনার্জি ড্রিংককে না বলুন
এই ড্রিংক পান করলে অল্প সময়ের জন্য খুব তাড়াতাড়ি তরতাজা বা ফ্রেশ বোধ হয়– একথা যেমন ঠিক, তেমনি এও ঠিক যে পরে আরো বেশি ক্লান্ত লাগে। ঘুমকে ব্যাহত করে এবং পরের দিনও এর রেশ থেকে যায়। কাজেই এনার্জি ড্রিংক থেকে দূরে থাকুন। বরং সামান্য গরম পানিতে কয়েক ফোটা লেবুর রস বা কমলার রস মিশিয়ে পান করুন, নিজেকে তরতাজা লাগবে।
দুপুরের হালকা খাবার
দুপুরে হালকা খাওয়া-দাওয়া করা ভালো। খিদে পেলে মাঝে মধ্যে চার বা পাঁচটি কাঠ বাদাম বা কাজু বাদাম খেতে পারেন। সাধারণ টক দই বা আপেল সঙ্গে রাখুন। লাঞ্চের সময় সহকর্মীদের সঙ্গে হালকা বিষয় নিয়ে কথা বলুন। তাছাড়া খুব ঠান্ডা পানি পান করলেও তা ঘুমের ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
কিছু নিয়ম মেনে চলুন
আপনার বয়স যতই হোক না কেন, প্রতিদিন একই সময় বিছানায় যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করলে দিনের বেলা ‘ফিট’ থাকতে তেমন আর সমস্যা হয় না। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে তো আর কথাই নেই। কাজেই এই দিকগুলোর দিকে একটু খেয়াল রাখলে সহজে ক্লান্তি বোধ আসে না। অবশ্য যদি না শারীরিক বা মানসিক কোনো সমস্যা থাকে।
হরমনের ভূমিকা
মাঝে মাঝেই ক্লান্ত বোধ করলে আর অপেক্ষা না করে সরাসরি ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। থাইরয়েড হরমনের ভারসাম্য সঠিক না হলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে ক্লান্ত বোধ, শুস্ক ত্বক, বিষন্নতা, কাজে অমনোযোগ, ওজন বাড়া ইত্যাদি। কাজেই এ ধরণের সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারি চেকআপ করিয়ে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।