Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

এম সাখাওয়াত হোসেন। সাবেক নির্বাচন কমিশনার। ১৯৬৬ সালে তত্কালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় দুই বছর পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। পরে ব্রিগেডের অধিনায়ক হিসেবে দুটি ইনফেনট্রি ব্রিগেড ও একটি আর্টিলারি ব্রিগেডের অধিনায়ক ছিলেন। প্রবাসে বাংলাদেশীদের রাজনীতি নিয়ে অষ্টপ্রহরের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন এম এম মুসাsakawat hossain

প্রবাসে বাংলাদেশীদের রাজনীতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

chardike-ad

প্রবাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এবং সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশীরা যেভাবে রাজনীতি করছেন, এক কথায় তা হতাশাজনক। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মতো অন্য কোনো দেশের রাজনৈতিক দল এভাবে প্রবাসে রাজনীতি করে না। বাংলাদেশ থেকেও বড় বড় গণতান্ত্রিক দেশ রয়েছে। ভারত কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো রাজনৈতিক দল এভাবে রাজনীতি করছে না। লেবার পার্টি কিংবা কনজারভেটিভ পার্টির কোনো শাখা বাংলাদেশে নেই। স্বাধীনতা অর্জনের পরও বাংলাদেশে এ অবস্থা ছিল না, যা ১৯৯১ সালের পর থেকে প্রকট হয়েছে। স্বাধীনতা অর্জনের সময়ে প্রয়োজনের কারণে শুধু আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রবাসে ছিল। দেশ স্বাধীন করার জন্য সেটা জরুরি ছিল। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রবাসে রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা স্থায়ীভাবে প্রবাসে বসবাস করেন। সেক্ষেত্রে তাদের উচিত ওই দেশের মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হওয়া। ভারতীয় ও আফ্রিকানরা সেটিই করছেন। অনেকেই সেখানকার পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা কেমন?

ভারতীয় ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূতরা অনেকেই তাদের নব্য দেশে মন্ত্রী হয়েছেন। কেননা তারা মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে অনেক দিন ধরে জড়িত। বাংলাদেশের একজন এমপি সেখানে আছেন বটে, কিন্তু তা নিতান্তই স্বল্প। ভারত ও পাকিস্তানের অনেকেই নিজের গৃহীত দেশের পার্টিতে চাকরি করছেন। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতরা পারছেন না। কারণ বাংলাদেশের বড় পার্টিগুলো তাদের সেটা করতে দিচ্ছে না। এর একমাত্র কারণ অর্থ। বিদেশে ফান্ড জোগাড় করার ক্ষেত্রে বিদেশে অবস্থানরতা বড় ভূমিকা রাখেন। আমি স্বকর্ণে অভিযোগ শুনেছি, সেখানে দলীয় কোনো ব্যক্তি সফরে গেলে তার ভরণ-পোষণ পর্যন্ত প্রবাসীরা করেন। বাজার করা থেকে শুরু করে সবকিছু তারা তদারক করেন।

প্রবাসে বাংলাদেশীদের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে প্রায়ই জটিলতা তৈরি হতে দেখা যায়। এতে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে না?

প্রবাসে যারা রাজনীতি করছেন, তাদের প্রায়ই সেখানে হাঙ্গামা করতে দেখা যায়। নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি করছেন তারা। আমার সামনে এ রকম ঘটনাও ঘটেছে। এতে দেশের কোনো উপকার হচ্ছে না; বরং ক্ষতি হচ্ছে। তারা অনেক সময় রাষ্ট্রীয় কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। এমনকি সেখানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের কাজেও তারা বাধা প্রদান করে। এটা করেন মূলত ঢাকায় ক্ষমতায় থাকা দলের লোকজন। এর কারণ প্রবাসে যেসব বাঙালি আছেন, তাদের সিংহভাগ ওই সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত নন। এ প্রবণতা দেখা যায় প্রথম ও দ্বিতীয় প্রজন্মের মধ্যে। তৃতীয় কিংবা চতুর্থ প্রজন্মের মধ্যে এ প্রবণতা নেই বললে চলে। যদিও সেটা সংখ্যার দিক থেকে অনেক কম। প্রবাসে বাংলাদেশীরা সুপ্রতিষ্ঠিত নন বলে তারা চেষ্টা করেন একটা পরিচিতি গড়ে তোলার। কেননা এর বাইরে তাদের আর কোনো কর্তৃত্ব নেই। বাংলাদেশ থেকে দলের প্রধান গেলে তারা গা ভাসিয়ে দেন দলীয় রাজনীতিতে। এতে বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা হয় তাদের। প্রবাসে যারা ওই দেশের মূলধারার রাজনীতি করছেন এবং এমপি হয়েছেন, তারা বাংলাদেশের কোনো দলের ব্যানারে এমপি হননি; তারা ওই দেশের রাজনৈতিক দলের হয়েই এমপি হয়েছেন।

আমরা দেখছি বিদেশ সফরের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে ঢিল নিক্ষেপ করতে। এক দল তাকে সম্মান দিচ্ছে, অন্য দল প্লেকার্ড-ব্যানার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে, যা দৃষ্টিকটু বটে। এসব ঘটনা কোনো রাজনৈতিক দলেরই উপকারে আসছে না। তাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের বাইরে যখন প্রধানমন্ত্রী যান, তখন তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই যান। তখন তিনি এ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। সুতরাং তাকে অপমান করা মানে বাংলাদেশকে অপমান করা। এ কাজ করতে গিয়ে তাদের অনেক সময় পুলিশের লাঠিচার্জের শিকার হতে হয়। এতে দেশে ও দেশের বাইরে শুধু দলবাজি ছাড়া আর কিছু হচ্ছে না।

দেশের বাইরে কি রাজনৈতিক দলগুলোর শাখা খোলার কোনো আইন আছে?

সেটা যেন রাজনৈতিক দলগুলো করতে না পারে, আমরা তার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কোনো আইন প্রণয়ন করতে পারে না। এ দায়িত্ব সংসদের। সংসদে ক্ষমতাসীন দল তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এ আইন প্রণয়ন করতে পারে। আরো মজার বিষয় হলো, এ বিষয়ে উভয় দল একমত। বাংলাদেশের বৃহত্ রাজনৈতিক দলগুলো বিদেশে থাকা প্রবাসী রাজনৈতিক শাখা বন্ধ করতে চায় না। আমরা যখন বলেছি, বিদেশে রাজনৈতিক শাখা খোলা যাবে না, তখন তারা সে দেশে আলাদাভাবে রেজিস্ট্রেশন করে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চেয়েছে। বিষয়টির গুরুত্ব দলীয়ভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাদের বুঝতে হবে, প্রবাসী রাজনীতি কোনোভাবেই তাদের উপকারে আসছে না। তা-ই যদি আসত, তাহলে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল কংগ্রেস বিশ্বব্যাপী তাদের শাখা খুলত। বলা হয়ে থাকে, বিশ্বের প্রতি পাঁচজন লোকের একজন ভারতীয়। সেক্ষেত্রে তারা উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারত। কিন্তু তারা সেটি করছে না।

প্রবাসীরা সে দেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত হন না কেন?

প্রবাসীদের কেউ মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন না, কারণ হয়তো তাদের সে ধরনের যোগ্যতার অভাব। তাদের কোনো আত্মপরিচয় গড়ে ওঠেনি। আজ থেকে ৪০ কিংবা ৫০ বছর আগে যারা সেখানে গেছেন, তারা সেখানে তাদের পরিচয় গড়ে তুলতে পারেননি। এটা তাদের ব্যর্থতা। এখন তৃতীয় কিংবা চতুর্থ প্রজন্মের অনেকেই সেটা করতে পারছেন। কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসছে প্রবাসী রাজনীতিতে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি মূলধারার রাজনীতিতে অংশ নিচ্ছেন। তিনি রক্তসূত্রে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অংশ নিতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি এবং এটি প্রশংসনীয়। তিনি পার্লামেন্ট সদস্য হলে বাংলাদেশেরই উপকার হবে। এক্ষেত্রে রোশনারা আলীর কথাও বলতে হয়। তিনিও কিন্তু মূলধারার রাজনীতিতে অংশ নিয়েছেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের যোগ্যতা ছিল বলেই তারা মূলধারার রাজনীতিতে অংশ নিতে পেরেছেন।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো প্রবাসে রাজনীতি উত্সাহিত করছে কেন?

রাজনৈতিকভাবে কোনো উপকার না হলেও ফান্ড তো আসছে। সেখানে তাদের অনেক বড় লভ্যাংশ আছে। প্রচুর আয় হচ্ছে। এছাড়া অনেক নেতাই সেখানে গিয়ে দিনের পর দিন থাকছেন, তাদের ভরণ-পোষণের তো একটা ব্যাপার আছে! বড় বড় নেতা সে সুযোগ নিচ্ছেন, তা কিন্তু নয়। এ সুযোগ বিভিন্ন স্তরের ক্ষুদ্র নেতারাও নিচ্ছেন।

এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?

আমাদের করণীয় কিছু নেই। যা করার, সেটা রাজনৈতিক দলগুলোকেই করতে হবে। তাদের মূলধারার রাজনীতির প্রতি বেশি আগ্রহী হতে হবে। দলীয় সংস্কৃতি বদলাতে হবে। নইলে অর্থ ও মেধার অপচয় বাড়বে। আপনি আমেরিকার দিকেই তাকান, বারাক ওবামা আজকে প্রেসিডেন্ট। আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার একটি বৃহত্ রাজ্যের গভর্নর ছিলেন। তারা কিন্তু মূলধারার রাজনীতিতে অংশ নিয়েই তাদের যোগ্যতায় ওই অবস্থানে পৌঁচ্ছেন। সুতরাং যা করতে হবে তা হলো, রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে। আর এটি করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকেই। চাপিয়ে দিয়ে এটি সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন বড়জোর একটা চিঠি দিয়ে সতর্ক করতে পারে।

দ্রুত এর সমাধান হবে বলে মনে করেন?

আমি শিগগিরই এর সমাধান দেখছি না। আবারো বলছি, দলের সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে হবে। প্রবাসে রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করতে হবে। সেটা না করলে কিছু করা যাবে না। এছাড়া প্রবাসে যারা নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাস করছেন, তাদের অবশ্যই ওই দেশের মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাকে জানিয়েছেন, তারা অনেক সময় স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। তারা বলছেন, রাষ্ট্রীয় নানা অনুষ্ঠানে তারা সেখানকার রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দাওয়াত পর্যন্ত দিতে পারেন না। তাদের দাওয়াত দিতে হয় স্থানীয় প্রবাসী দলীয় রাজনৈতিক লোকজনকে। এসব নিয়ে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে।

আমাদের গণতন্ত্রের ঘাটতি কোথায় বলে মনে করছেন?

আমাদের দেশে একটি সর্বগ্রহণযোগ্য নির্বাচিত সরকারের অভাব আছে। সর্বগ্রহণযোগ্য নির্বাচিত একটি সরকারের অভাবে কোনো রাষ্ট্রীয় সংস্থাই ঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো প্রভাবান্বিত প্রতিটি ক্ষেত্রেই এবং তাদের দৃঢ়তা নেই বললে চলে। নির্বাচন ব্যবস্থা যেভাবে নষ্ট হয়েছে, সেটি সঠিক পথে আনতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। নির্বাচিত সরকার ব্যবস্থা দুর্বল হলে সেখানে উন্নতি করা কঠিন। পাশাপাশি প্রতিহিংসা যেভাবে বাড়ছে, সেখানে ভালো কিছু আশা করা যায় না। আমরা সাম্প্রতিক সময়ে দেখলাম ড. মাহ্বুব উল্লাহ্র ওপর বর্বর হামলা হলো। একটা মানুষের ভিন্নমত থাকতেই পারে। সেটাই তো গণতন্ত্র। এর মানে আমাদের সমাজ থেকে সহিষ্ণুতা বিদায় নিচ্ছে।

এগুলো কি দুর্বল গণতন্ত্রের কারণে ঘটছে?

হ্যাঁ! অবশ্যই। এটা প্রমাণ করছে, দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা নেই। নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র নয়। এখানে সমাজ, দল, ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত। যারা রাজনীতি করেন, তাদের মধ্যে যদি এ উপলব্ধি না আসে, তাহলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না। জোর করে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। গণতন্ত্র জোর করে প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এটা করলে একটা সময় তা বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। সমাজে অশান্তি তৈরি হবে। বিভাজন তৈরি হবে। পরিবর্তন করতে হলে সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে যে, সমাজ ও মানুষ রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চায়।

নতুন প্রজন্মের রাজনীতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

এ বিষয়ে বলতে গেলে অনেক কিছু বলতে হবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, কোনো বাঙালি বঙ্গ শাসন করেনি। শাসনক্ষমতা কখনই বাঙালিদের হাতে ছিল না। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর আমরা পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে ছিলাম। তখন ধর্মের ভিত্তিতে বাঙালি প্রতিনিধিরা এ অঞ্চল শাসন করেছে। এটা তো কোনো দেশ ছিল না। এটি ছিল অন্য একটি রাষ্ট্রের প্রদেশ। সেক্ষেত্রে স্বাধীনতা অর্জনের পর যেভাবে শুরু করা উচিত ছিল, সেভাবে হয়নি।

গত ৪০ বছরে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসাটা কঠিন। তবে হাল ছাড়লে চলবে না। সত্তরের দশকের রাজনীতিবিদরা ছিলেন উদার ও সত্। এর ধারাবাহিকতা আমরা রক্ষা করতে পারিনি। আমাদের প্রজন্মের অনেকেই সেটা পারেননি। বর্তমান প্রজন্ম আদর্শিক চরিত্র সামনে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছতে চায়। জীবিত সে রকম কোনো চরিত্র আমরা তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে পারছি না।

আমাদের ব্যর্থতা কোথায়?

স্বাধীনতা অর্জনের পর যে ঐতিহ্য তৈরি করা প্রয়োজন ছিল, সেটি আমরা করতে পারেনি। পরিতাপের বিষয় হলো, আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য কোনো উদাহরণ রেখে যেতে পারছি না। আমাদের দেশে শ্রেষ্ঠ বাঙালি আছেন, কিন্তু তার আদর্শ কেউ ধারণ করছেন না। এমনকি নিজ দলও সে আদর্শ থেকে পিছু হটেছে। আমরা ছোটবেলায় অনেক নেতার জীবনী পড়েছি (জীবিত ও মৃত উভয়), আমাদের স্বপ্ন ছিল তাদের মতো হওয়ার। একটা সময় আমাদের উপমহাদেশে কত নেতা ছিলেন, একই সময়ে যাদের জন্ম। একের পর এক নেতা এসেছেন। তারা তাদের পূর্ববর্তীদের লিগ্যাসি ধরে রেখেছিলেন। মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল নেহরু, মওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান সে রকমই একেকজন নেতা। এছাড়াও কেনেডি, চার্চিলের মতো নেতাও হতে মন চাইত আমাদের। এখনো তাদের গল্প করি। কিন্তু আমাদের সন্তানরা কাদের গল্প করবে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে?

এখনকার ছাত্রনেতাদের অবস্থা চিন্তা করলে খারাপ লাগে। তারা কিসের যোগ্যতায় রাজনীতি করছেন? একসময় যারা ছাত্ররাজনীতি করতেন, তারা সে সময়ের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। সমাজ তাদের সম্মান করত। আর এখন? নতুন প্রজন্মের জন্য কোনো উদাহরণ তৈরি করতে না পারলেও তাদের উদাহরণ হওয়ার মতো সাহস ও মানসিক শক্তি জোগানোর কাজটুকু আমাদের করে যেতে হবে। নইলে ইতিহাসে আমরা কলঙ্কিত হয়ে থাকব আর জাতি ধ্বংসের কারণ হব। সেটি হতে পারে না।

বণিকবার্তার সৌজন্যে।